কক্সবাজারের বহুল আলোচিত নারী পর্যটক ধর্ষণের ঘটনার ভিতরে আরেক রহস্য উদঘটন

প্রকাশিত: ১১:২৯ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৭, ২০২১

উমার রাযী, কক্সবাজার প্রতিনিধি-

বর্তমানে সারাদেশে বহুল আলোচিত ঘটনা কক্সবাজারে পর্যটন এলাকায় ধর্ষণের স্বীকার ওই নারী পর্যটক হিসেবে কক্সবাজারে ভ্রমণে গিয়ে নয়, এমন কি তারা কোন পর্যটক ও নয়, তারা গত তিন মাস ধরেই কক্সবাজারের বিভিন্ন হোটেল, কটেজে স্বামী ও শিশুসন্তানসহ অবস্থান করছিলেন ধর্ষণের শিকার হওয়া নারী। নিজের সম্পর্কে এমনই তথ্য দিলেন কক্সবাজার সদর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তার জবানবন্দিতে, এমনটাই জানিয়েছেন কক্সবাজার জেলা পুলিশ।
১৮ পৃষ্ঠার জবানবন্দিতে তিনি আরো উল্লেখ করেছেন, তার আট মাস বয়সী অসুস্থ বাচ্চার চিকিৎসার অর্থ জোগাড় করতে তারা কক্সবাজার এসেছিলেন। স্বামীসহ তিন মাস ধরে বিভিন্ন হোটেল, কটেজ এবং গেস্ট হাউজে অবস্থান করেছেন তারা। তার ৮ মাস বয়সী শিশুর হার্টে ছিদ্র রয়েছে। সন্তানের চিকিৎসায় ১০ লাখ টাকা প্রয়োজন। টাকা জোগাড় করতে তিনি কক্সবাজার এসেছেন। গত তিন মাস ধরে শহরের অন্তত ৭টি আবাসিক হোটেলে অবস্থান করেছেন তারা।
আদালতে দেয়া জবানবন্দি অনুযায়ী পুলিশের দাবি , ওই নারী দেহ ব্যবসায় জড়িত ছিলেন। সন্ত্রাসী আশিকুলের সঙ্গে তার পরিচয় হয়েছে সোমবার (২০ ডিসেম্বর) সকালে কলাতলী এলাকায় সিল্যান্ড নামে একটি গেস্ট হাউজে। ভিকটিম মহিলার জবানবন্দি অনুযায়ী পুলিশ আরো বলেন, সন্ত্রাসী আশিক তার কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। এর আগে ওই নারী তাকে ১০ হাজার টাকা দিয়েছিলো। বাকী ২০ হাজার টাকা দিতে ব্যর্থ হলে ওই নারীকে বুধবার রাত ৮টার দিকে কলাতলী লাইট হাউজ এলাকার একটি কটেজের সামনে থেকে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে যান আশিক।
জবানবন্দিতে ওই নারী জানান, তাকে বুধবার রাত ৮টার দিকে সৈকত পোস্ট অফিসের পেছনে একটি চায়ের দোকানের পেছনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আশিকের দুই বন্ধু তাকে ধর্ষণ করেন। এরপর আশিক তাকে আবার মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে কলাতলীর জিয়া গেস্ট ইন হোটেলে নিয়ে যান। তাকে নিয়ে ওই হোটেলের একটি কক্ষে ওঠেন আশিক। মহিলার ভাষ্যমতে সেখানে তাকে ধর্ষণ করার সুযোগ পাননি আশিক। তার আগেই একটি ফোন কলে পুলিশের উপস্থিতির কথা জানতে পেরে আশিক হোটেল কক্ষ থেকে পালিয়ে যান।
ওই নারী আরও জানান, তিনি হোটেল কক্ষ থেকে বের হয়ে পর্যটন মোটেলের সামনের সড়কে আসেন। সেখানে তার স্বামীকে দেখতে পান র‌্যাবের কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে কথা বলতে। র‌্যাব তাকে নিয়ে হোটেল জিয়া গেস্ট ইন হোটেলে আসে।
অথচ এর আগে গত বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) ভিকটিম নারী অভিযোগ করেছিলেন তার পুলিশকে দেয়া জবানবন্দির পুরো উল্টো, তখন তিনি বলেছিলেন, বুধবার বিকেলে সৈকতের লাবনী পয়েন্টে তারা বেড়াতে যান। সেখানে অপরিচিত এক যুবকের সঙ্গে তার স্বামীর ধাক্কা লাগলে কথা কাটাকাটি হয়। এর জের ধরে সন্ধ্যার পর পর্যটন গলফ মাঠের সামনে থেকে তার ৮ মাসের সন্তান ও স্বামীকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে কয়েকজন তুলে নিয়ে যায়। এ সময় আরেকটি অটোরিকশায় ওই নারীকে তুলে নেয় তিন যুবক। পর্যটন গলফ মাঠের পেছনে একটি চায়ের দোকানের পেছনে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করেন তিনজন।
এরপর তাকে নেওয়া হয় কলাতলীতে জিয়া গেস্ট ইন নামে একটি হোটেলে। সেখানে ইয়াবা সেবনের পর আরেক দফা তাকে ধর্ষণ করে ওই তিন যুবক। ঘটনা কাউকে জানালে সন্তান ও স্বামীকে হত্যা করা হবে জানিয়ে কক্ষ বাইরে থেকে বন্ধ করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন তারা। পরে র‌্যাব এসে তাকে উদ্ধার করে।
এদিকে কক্সবাজারে ট্যুরিস্ট পুলিশের সুপার জিল্লুর রহমান বলেন, প্রাথমিক অনুসন্ধান ও ভিকটিম এবং মামলার বাদীকে আলাদাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে আমরা জানতে পেরেছি, ওই নারী ও তার স্বামী গত তিন মাস ধরে কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন হোটেলে অবস্থান করছেন। এর মধ্যে লাইট হাউজ এলাকার আরমান কটেজ, একই এলাকার দারুল আল এহসান, সি ল্যান্ডসহ কয়েকটি কটেজে থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। ওই নারী এবং তার স্বামী কোনোভাবেই পর্যটক নন।
এমনকি তার স্বামীর সঙ্গে ধাক্কা লাগার জের ধরে ঘটনার শুরু বলা হলেও আমরা জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পেরেছি, ভিকটিমকে যখন আশিক মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে যাচ্ছেন তখন তার স্বামী একটি হোটেলে ব্যক্তিগত কাজে অবস্থান করছিলেন।
ট্যুরিস্ট পুলিশের সুপার আরও বলেন, মোটরসাইকেলে তুলে মেইন রোড দিয়েই তারা জিয়া গেস্ট ইন হোটেলে গেছেন, এ সময় ভিকটিক কোনো ধরনের চিৎকার-চেঁচামেচি করেননি বা আপত্তি জানাননি। স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে তারা হোটেলে ওঠেন।
তিনি বলেন, ওই নারী এবং তার স্বামীর দেওয়া তথ্যে অনেক গরমিল রয়েছে, যা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। পুলিশ অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে নারী ধর্ষণের এই মামলা তদন্ত করছে। আমরা চাই, এ ধরনের ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে।
কক্সবাজার পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান জানান, কক্সবাজার যেহেতু পর্যটননগরী, এখানে লাখ লাখ পর্যটকের সমাগম হয়। শুধু পর্যটক নয়, কিছু কিছু খারাপ লোকজনও এখানে আসে, যারা অবৈধ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। অনেকে দালালির সঙ্গে যুক্ত, কেউ মাদক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত, আমরা এই বিষয়গুলো মাথায় রেখেই এগুচ্ছি।




error: Content is protected !!