কলাপাড়ায় বনবিভাগ ও অবৈধ শীকারীদের যোগসাজশে হারিয়ে যাচ্ছে প্রাগঐতিহাসিক বন্যপ্রানী ॥
রাসেল কবির মুরাদ , কলাপাড়া(পটুয়াখালী)প্রতিনিধি ঃ কলাপাড়ায় সমুদ্র
উপকুলীয় এলাকার সংরক্ষিত বনে আদিবাসী রাখাইন যুবকদের বন্য প্রানী শিকারের
মহোৎসব চলছে। এয়ার গান, শর্ট গান, ল্যাজা, চল, কোষ ও ফাঁদ পেতে বিলুপ্ত
প্রায় পশু-পাখি বছরের পর বছর শিকার করে চলছে। বন্যপ্রানী শিকার করতে এরা
অ¯্ররে পাশাপাশি শিকারী কুকুরও ব্যবহার করছে। কুয়াকাটা সমুদ্র উপকুল ভাগে
অবস্থিত কুয়াকাটা সংরক্ষিত বন, গঙ্গামতির বন, কাউয়ার চরের বন, লেম্বুর
বন, চর মৌডুবী ও সুন্দরবনের পুর্বাংশ ফাতরার বনসহ সমুদ্র উপকুলের
সংরক্ষিত বন এবং ম্যানগ্রোভ বনে শুকর, সজারু, গুইসাপ, কুইচ্ছা, ঘুঘু,বক,
ডাহুক, শালিক, টিয়াসহ বিলুপ্ত প্রায় বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রানী দিনে ও
রাতে দল বেধেঁ শিকার করছে আদিবাসী রাখাইন যুবকরা। আদিবাসী রাখাইনরা
আদিকাল থেকেই বন্যপ্রানী শিকার করে আসছে। বন্যপ্রানী শিকার করেই মাংসের
চাহিদা পুরন করছে তারা। এদের মধ্যে অনেকেই জীবিকা হিসেবে বন্যপ্রানী
শিকারকে বেছে নিয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় বন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই তারা
শিকার করছে। তবে বন্যপ্রানী শিকার নিষিদ্ধ জেনেও এরা আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী
দেখিয়ে প্রতিনিয়ত শিকার করে চলছে। আদিবাসী হওয়ায় বনবিভাগ ও প্রশাসন এদের
প্রতি একটু নমনীয়তার কারনে দিনের পর দিন এরা শিকার করে যাচ্ছে। কুয়াকাটা
কেরানী পাড়ার শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধ বিহার কমিটির নেতা ওয়েন মং উচু,
মংচাউ,মোমো, বুজা, অংচান এই পাঁচজন শিকারী মিলে সৈকতের গঙ্গামতি সংরক্ষিত
বন থেকে বিলুপ্ত প্রজাতির ১টি সজারু ও ১৫টি গুঁই সাপ শিকার করে। এরা
দীর্ঘবছর ধরেই এই বনে শিকার করে চলছে। শুধু কেরানী পাড়ার রাখাইন যুবকরাই
নয়। পটুয়াখালী ও বরগুনা সমুদ্র উপকুল ভাগে বসবাসকারী বিভিন্ন পাড়ার
আদিবাসী রাখাইন যুবকরা জঙ্গলে বন্যপ্রানী শিকারের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ
সহ মাংসের চাহিদা পুরণ করে থাকে।
সমুদ্র উপকুলের বনে শুকর, সজারু, চিতাবাঘ, দাসবাঘ, শিয়াল, বানর, ভেজি,
কাঠবিড়ালী, গুঁইসাপ, অজগর, বনমোরগ, ঘুঘু, সাদাবক, চিল, শালিক, টিয়া,
ডাহুক, গড়িয়াল, গাংচিল, চামচিকাসহ অসংখ্য বন্যপ্রানী ও পাখির অভয়াশ্রম
ছিল। ঘুর্ণিঝড় ও জলোসচ্ছাসের তান্ডবে বন ধ্বংস হয়ে যাবার সাথে সাথে বেশির
ভাগ বন্য পশু পাখিও ধ্বংস হয়ে গেছে। ঝড়-বন্যার সাথে লড়াই করে এখনও এসব
বিলুপ্ত প্রজাতির পশু-পাখি টিকে রয়েছে। এরা সংখ্যায় খুবই কম। কিছু সংখ্যক
পশু-পাখি ঝড় বন্যার সাথে যুদ্ধ করে বেঁেচ থাকলেও রাখাইন শিকারীদের
শিকারের ফাঁদে ধরা পরে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এসব বন্যপ্রানীদের প্রতিনিয়ত
শিকারের কারণে এখন প্রায় জঙ্গল শুন্য হয়ে পরেছে।
সেচ্ছাসেবী সংগঠন জন্মভূমির কুয়াকাটা সমন্বয়ক ও প্রকৃতি প্রেমী কেএম
বাচ্চু বলেন, ঝড় বন্যার কবলে বন জঙ্গল ধ্বংস হওয়ার পাশাপাশি বন্যপ্রানী ও
পশু-পাখি প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বিলুপ্ত প্রায় কিছু সংখ্যক বন্যপ্রানী
দেখা গেলেও রাখাইনদের শিকারের ফাঁদে বিলুপ্ত হতে যাচ্ছে এসব এখন। তিনি
আরো বলেন, বনবিভাগের চোখের সামনেই প্রতিনিয়ত শিকার করে চলছে। বনবিভাগ
কিংবা প্রশাসন এসব শিকার করার বিষয়টি জেনেশুনেই কিছু বলছে না। তাই এখনই
বন্যপ্রানী শিকার বন্ধের দাবী জানিয়েছে এই তরুন সেচ্ছাসেবক।
উপকূলীয় বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ কমিটির আহবায়ক মোল্লা লতিফুর রহমান লতিফ
বলেন, আদীবাসী রাখাইনরা এক সময় বন্যপ্রানী শিকার করেই তাদের মাংসের
চাহিদা মিটাতো। বর্তমানে এসব অঞ্চলে বন জঙ্গলের সল্পতার কারণে বন্যপ্রাণী
বিলুপ্তির পথে। যেসব বন্যপ্রানী এখনও নানা প্রতিকূলতা উপেক্ষা করেও বেঁেচ
আছে তাদের সংরক্ষণের তাগিদ দিয়েছেন ওই পরিবেশবাদী সংগঠক।
পটুয়াখালী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ আমিনুল ইসলাম গনমাধ্যমকে বলেন,
বনবিভাগের বন থেকে বন্যপ্রানী শিকারের বিষয় তিনি কিছুই জানেন না।
বন্যপ্রানী শিকার আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। যেখানে শিকার করার আইনগত কোন বৈধতা
নেই। সেখানে বন কর্মকর্তাদের অনুমতির কোন প্রশ্নই আসতে পারে না। তিনি
বলেন, এসব শিকারীদের হাতে-নাতে ধরতে পারলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ
ব্যবস্থা নেয়া হবে।