কলাপাড়ায় সরকারি চিকিৎসকরা পুরোপুরি প্রাইভেট ক্লিনিক ব্যবসায় জড়িত, স্বাস্থ্য-সেবা বঞ্চিত হচ্ছে সাধারন মানুষ ॥

প্রকাশিত: ১১:৫৪ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১১, ২০২২

কলাপাড়া(পটুয়াখালী)প্রতিনিধি  :  কলাপাড়ায় সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা
সেবার নাজুক অবস্থা। চিকিৎসকদের ক্লিনিক ব্যবসায়ের কারনে চিকিৎসা সেবা
পাচ্ছেন না সাধারন রোগীরা। এলাকায়  অবৈধভাবে চলছে দেড় ডজন ডায়াগানষ্টিক
সেন্টার ও ক্লিনিক। এসব প্রতিষ্টানের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত
সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক ও কর্মচারীরা। ১২টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভায়
প্রায় তিন লক্ষাধিক মানুষ প্রত্যন্ত এলাকা থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য
কলাপাড়া হাসপাতালে এলেও চিকিৎস সেবা পান না সাধারন রোগীরা। রোগীদের কোন
পরীক্ষা-নিরীক্ষার  প্রয়োজন হলে হাসপাতালের প্রায় সব চিকিৎসকই রেফার করে
ডাক্তার ও ব্যক্তি মালিকানাধীন বেসরকারী ডায়াগানষ্টিক সেন্টার ও
ক্লিনিকে। প্রথম বার হাসপাতালে রোগী দেখলে ও দ্বিতীয়বার চেম্বারে দেখা
করতে বলেন চিকিৎসাকেরা। আর্থিকভাবে কিছুটা সাবলম্বী রোগীরা এভাবে
চিকিৎসাসেবা নিতে পারলেও অসহায় হয়ে যান গ্রাম থেকে আসা খেটে খাওয়া মানুষ।
বেসরকারি ক্লিনিকের সাথে চিকিৎসকদের দহরম-মহরম যোগাযোগ আছে এবং তারা
চিকিৎসার নামে ব্যবসা করছেন। ডেলিভারি রোগী এলে সরকারি মা-শিশু কল্যান
কেন্দ্র থেকে সেবা না দিয়ে পাঠিয়ে দেয় চিকিৎসকের মালিকানাধীন প্রাইভেট
প্রতিষ্টানে। সরকারি হাসপাতালে যেখানে একজন ডেলিভারি রোগী থেকে সামান্য
কিছু টাকা খরচের মাধ্যমে সেবা নিত, সেখানে বেসরকারি ক্লিনিক খরচ হচ্ছে
২৫-৩০ হাজার টাকা। এসব অনুমোদনবিহীন প্রতিষ্টান চালাতে প্রত্যক্ষ ও
পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেন সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মচারীরা।
অর্থের লোভে তারা নানা অজুহাতে রোগীদের বাধ্য করে বেসরকারি এবং
অনুমোদনবিহীন এসব প্রতিষ্টানে যেতে। এতে  রোগীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ
করছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারনেই নষ্ট হতে চলছে
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্্ের লক্ষ লক্ষ টাকা মুল্যের সরঞ্জাম। হাসপাতালের
আলট্রাসনোগ্রাম মেশিনটি ৬ বছর ধরে নষ্ট রয়েছে। রোগীরা চিকিৎসা সেবা থেকে
বঞ্চিত হচ্ছে গরিব ও মধ্যবিও শ্রেনীর মানুষ। নামেই শুধু ৫০শয্যার
হাসপাতাল। প্রকৃতপক্ষে ৩১শয্যার সেবাও নেই এই হাসপাতালে। উপজেলার
প্রাইভেট ক্লিনিকে আল্ট্রাসনোগ্রাম করা হলে ও এ হাসপাতালেতার কোনো সুফলই
মিলছে না। এ কারনে আল্ট্রাসনোগ্রামসহ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরিক্ষা করতে
ডায়াগোনস্টিক সেন্টারে গিয়ে সাধারন মানুষকে হয়রানিসহ মোটা অংকের টাকা
গুনতে হচ্ছে। এলাকায়  ব্যাঙের ছাতার মতো  গ্রাম গঞ্চে হাফ ডজন রয়েছে
ডায়াগনস্টিক সেন্টার। সিভিল সার্জন অফিস সনদপত্র দেখানোর নির্দেশ দিয়ে
লাপাত্তা হয়ে পড়েন প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক কর্তৃপক্ষ।

তথ্য সূত্রে জানা যায়, কলাপাড়ায়য় প্রায় তিন লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসা
সেবার একমাত্র ভরসাস্থল কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্্র। সরকার
স্বাস্থ্য খাতকে গুরুত্ব দিয়ে ৩১ শয্যার এ হাসপাতাল আধুনিকায়ন করে ২০১২
সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী এ হাসপাতালকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। প্রতিদিন
জটিল রোগীরা ভিড় করলেও মিলছে না চিকিৎসাসেবা। রোগীদের অন্যত্র যেতে
হচ্ছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তথ্য অনুযায়ী গেল মাসে অক্টোবর মাসে নরমাল
ডেলিভারি হয়েছে ২৫টি। হাসপাতালে কক্ষের ভেতর ধুলোবালির স্তপ। ছড়াচ্ছে
দুর্গন্ধ। কর্তৃপক্ষ বলছেন সংশ্লিষ্ট বিষয়ের চিকিৎসক সংকটের কারণ।
অপারেশন কক্ষের ভেতরে দুর্গন্ধ। মেঝেতে তেলাপোকা ও টিকটিকির পায়খানার
স্তুুপ। মেশিন ও যন্ত্রপাতি গুলোতেও পড়ে আছে ময়লা।  হাসপাতালের বিভিন্ন্
ওর্য়াডে বেশ কিছু বৈদ্যুতিক ফ্যান ও বাল্ব নষ্ট। শয্যাগুলোয় বিছানার
চাদরে দুর্গন্ধ ও মশারি না থাকায় সন্ধ্যারপর মশার উৎপাদতে অতিষ্ট হয়ে
উঠেন রোগীরা। তাই কয়েল কিনে এনে রোগীদের ঘুমাতে হয়। বাথরুম অপরিস্কার
থাকে, দরজা ভাঙ্গা, লাইটও নেই। সব মিলিয়ে হাসপাতালে ভুতুড়ে পরিবেশ।
হাসপাতালের আলট্রাসনোগ্রাম মেশিনটি ৬ বছর ধরে নষ্ট রয়েছে। গর্ভাবস্থায়
মায়ের পেটের বাচ্চার বৃদ্ধি ও অবস্থান, বাচ্চার কোনো অস্বাভাবিকতা আছে কি
না সহজেই আলট্রাসনোগ্রাফির মাধ্যমে বোঝা যায়। গর্ভাবস্থার শুরুতেই অর্থাৎ
মাসিক বন্ধের দুই মাস বা ছয় থেকে আট সপ্তাহের মধ্যে আলট্রাসনেগ্রাফি
করানো উচিত। টেস্টটিউব বেবির ক্ষেত্রে ভ্রƒণ প্রতি স্থাপনের চার সপ্তাহ
পর। আলট্রাসনেগ্রাফি মাধ্যমে অনেক তথ্য জানা যায়, জরায়ুর অভ্যন্তরে সঠিক
স্থানে হৃৎস্পন্দন ও গর্ভসঞ্চার হয়েছে কি না নিশ্চিত করে। ভ্রƒণের সংখ্যা
নির্ণয় করে। সঠিকভাবে প্রসবের তারিখ নির্ণয় করে। আলট্রাসনোগ্রাফির
মাধ্যমে সঠিক তথ্য পাওয়ার জন্য ভালো মানের মেশিনের প্রয়োজন। পাশাপাশি
যিনি আলট্রাসনোগ্রাফি পরীক্ষা করাবেন, তার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাও সঠিক রোগ
নির্ণয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু হাসপাতালের আলট্রাসনোগ্রাম মেশিনটি ৬
বছর ধরে নষ্ট রয়েছে। হাসপাতালে আসা রোগীদের আলট্রাসনোগ্রাম করার প্রয়োজন
হলে হাসপাতার পয়েন্টে অবস্থিত বিভিন্ন প্রাইভেট ডায়ানস্টিক সেন্টারে যেতে
হচ্ছে রোগীদের।

নীলগঞ্জ ইউনিয়নের হাজীপুর গ্রামের রোগী জিনাত বেগম জানান, হাসপাতলে
ডাক্তার দেখাতে এসে এ টেষ্ট, সেই টেষ্ট করতে করতে টাকা যা নিয়ে আসছি সবই
শেষ। এখন ঔষধ কেনার টাকা নেই। ডাক্তারা কোন টেষ্ট ভাল করে না দেখে ঔষধ
লিখে দেয়। তাহলে টেষ্টের কি দরকার। তাদের পছন্দের ক্লিনিকে পাঠিয়ে দেয়
টেষ্ট করানো জন্য। আমরা গরিব মানুষ এতো টেষ্ট করা আমাগো পক্ষে সম্ভব। তার
পর করছি।

পটুয়াখালীর সিভিল সার্জন ডা. এস এম কবির হাসান বলেন, কলাপাড়া হাসপাতাল
চিকিৎসকরা ক্লিনিক ব্যবসার কারনে রোগীরা কখনোই ঠিকমতো চিকিৎসাসেবা
পাচ্ছেননা, যা সংবাদকর্মীদের কাছে শুনলাম। সরকারি চিকিৎসকরা এভাবে করতে
থাকলে তাদের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য বিধি অনুযায়ী দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করা
হবে।




error: Content is protected !!