কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগে পদ পেলেন বিবাহিত চাকরিজীবী মাদকসেবী ও ব্যবসায়ী

প্রকাশিত: ৯:৪৬ অপরাহ্ণ, জুন ৪, ২০২২

কে এম শাহীন রেজা কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি।।

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার আগেই ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গৌরবোজ্জল ভূমিকা ছিল। বাংলা ভাষার জন্য প্রাণ দিতে হয়েছিল অনেককে। এই সর্বপ্রথম কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিকে কলুষিত করল বিবাহিত, মাদকসেবী, চাকুরীজীবী ও প্রতিবন্ধী ছাত্র নেতাদের দিয়ে।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রে ৫ এর গ এ বলা আছে কোন নিয়মিত শিক্ষার্থী ( ৫ -এর ক- উপধারা অনুযায়ী) ছাত্রলীগের কমিটিতে ঢুকতে পারবে না। অবশেষে জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে দীর্ঘ ১৭ মাস পর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ১৫১ জনের নাম কমিটিতে থাকার কথা ছিল। কিন্তু গত ৩১ শে মে বুধবার রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ২০৯ জনের নামের তালিকা দিয়ে পুুর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেন। তবে ত্যাগী ও পরিক্ষিত অধিকাংশ ছাত্র নেতাদের বাদ দিয়ে ১৭ জন বিতর্কিত ও সংবিধান পরিপন্থী ছাত্ররা উক্ত কমিটির বড় বড় পোস্টে জায়গা করে নিয়েছে।

তথ্য ও ডকুমেন্ট সহ জানা যায়, ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে ২০৯ জনের মধ্যে কুষ্টিয়ার বিএনপি নেতা জাকির সরকারের আত্মীয় অনিক ইমতিয়াজ অমিকে সাংগঠনিক সম্পাদক পদ দেওয়া হয়। বিবাহিত ছাত্রনেতাদের তালিকায় রয়েছে শুভ আহমেদ, হিরোজ আল মামুন, মেহেদি হাসান রিমন, দিদারুল ইসলাম দিদার, ইমরান নাজির, দিপু ইসলাম, ৩৭ বছরের সোহানুর রহমান, আহমেদ ফয়সাল জয়, তানভির আহমেদ রবিন।
অন্যদিকে সহ-সভাপতি পদে নাম উঠে এসেছে
ইয়াবা সেবনকারী চঞ্চল হোসেন, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক শাকিল আহাম্মেদ তুশার ও সহ-সম্পাদক রনি ইসলামের। ইতিমধ্যে তাদের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগে ভাইরাল হয়েছে। ইতিপূর্বে চঞ্চল ফেনসিডিলসহ প্রশাসনের হাতে আটক হয়। বর্তমানে মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে। খলিসাকুন্ডি ডিগ্রি কলেজের ল্যাব সহকারী পদে কর্মরত থাকা খাজা আহম্মদ কলিনকে উপ গণসংযোগ ও উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক ও মানসিক ভারসাম্যহীন এক ত্যাগী কর্মী ইয়াসির আরাফাত অর্ণবকে সহ-সম্পাদক পদ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে কুষ্টিয়া মডেল থানা সূত্র মতে জানা গেছে সহ সভাপতি পদ পাওয়া শেখ সজীব ওরফে এসকে সজীবের বিরুদ্ধে শহরের চিহ্নিত তিনটি মামলা চলমান রয়েছে। সে ২০১৬ সালে প্রশাসনের হাতে ফেনসিডিলসহ আটক হয়েছিল। বর্তমানে তিনটি মামলায় এখনো বিচারাধীন রয়েছে।

বর্তমানে কুষ্টিয়ায় এই ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পর থেকেই চলছে সমালোচনার ঝড়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বর্তমান ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জানান, আমরা আশা করেছিলাম এবার আমরা আন্দোলন সংগ্রামের জন্য একটি পরীক্ষিত, সংগ্রামী ও ত্যাগী ছাত্রলীগ কমিটি পাব। কিন্তু বিবাহিত, বিএনপি-জামায়াত ঘরোনার, মাদকাসক্ত, অযোগ্য, অর্থব্য ছাত্রদের দিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।
তারা এটাও বলেন, এই ছাত্রলীগকে দিয়ে আর যাই হউক না কেন রাজপথের আন্দোলন সংগ্রাম করা যাবে না। এরা পদ-পদবি পাওয়ার পর মুল সংগঠন আওয়ামীলীগ, যুবলীগকে নানা ভাবে সামনে এগিয়ে যেতে অন্তরায় সৃষ্টি করবে। ওই নেতৃবৃন্দরা আরও বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ছাত্রলীগের একটি গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা রয়েছে কিন্ত আওয়ামী আদর্শিক নয়, ইয়াবাখোর, ফেন্সিখোর, বিবাহিত ছাত্রলীগ দিয়ে কি ভাবে আন্দোলন সংগ্রাম করবে, বরং তারা নাম ভাঙ্গিয়ে নিজেদের উন্নয়নে বেশি ব্যস্ত থাকবে বলে মতামত দিয়েছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠনটির অনেক রাজনৈতিক ঐতিহ্য রয়েছে। মহান ভাষা আন্দোলন, ৬৯’র গণঅভুত্থান, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন এবং সর্বপরি মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একটি বৃহত অংশ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেছিল। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সব সময় বলতেন, ছাত্রলীগের ইতিহাস বাংলাদেশের ইতিহাস।
বাংলা, বাঙালি, স্বাধীনতা ও স্বাধিকার অর্জনের লক্ষে ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলের অ্যাসেম্বলি হলে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। প্রতিষ্ঠার সময় ছিল পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ। পরবর্তী সময়ে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের পর পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের পরিবর্তে হয় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। শেখ মুজিবুর রহমানের প্রেরণায় ও পৃষ্ঠপোষকতায় একঝাঁক সূর্যবিজয়ী স্বাধীনতাপ্রেমী তারুণ্যোর উদ্যোগে প্রতিষ্টিত হয় এশিয়া মহাদেশের ‘বৃহত্তম’ ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭২ বছরের ইতিহাস জাতির মুক্তির স্বপ্ন, সাধনা এবং সংগ্রামকে রূপদানের ইতিহাসকে ধুলোয় মিশিয়ে দিল আজ কুষ্টিয়া জেলার নব্য ছাত্রলীগ কমিটি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তারা ফোন রিসিভ করেন নাই।

অন্যদিকে কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান অনিকের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমরা ১৫১ জনের নাম কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা দিয়েছিলাম প্রায় ১২/১৩ মাস আগে। কিন্তু পরবর্তীতে পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে ২০৯ নাম এসেছে। তবে অভিযুক্ত নেতৃবৃন্দদের বিষয়ে আমি কিছুটা অবগত আছি। তিনি এটাও বলেন, বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া এই ছাত্রলীগকে আমরা কলুষিত হতে দিব না। আমরা একটি সুষ্ঠু এবং সুন্দর কমিটি চাই। প্রয়োজন হলে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে তাদের বিষয়ে আমরা কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে জানিয়ে ছাত্রলীগের কমিটিকে সংশোধন করা হবে।




error: Content is protected !!