জেনে নিন কিভাবে বজ্রপাত থেকে নিরাপদ থাকবেন

প্রকাশিত: ১:২৪ পূর্বাহ্ণ, মে ১৬, ২০২০

অপরাধ ডেস্ক: বজ্রপাতে প্রাণহানির সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। দেশে প্রতি বছর গড়ে দুশ’ থেকে তিনশ’ জনের মৃত্যু ঘটে বজ্রপাতে। বেসরকারী হিসাবে এ সংখ্যা আরও বেশি। এ বছরেও বজ্রপাতের তীব্রতা বেশি থাকতে পারে বলে মনে করছেন আবহাওয়াবিদরা। বিশ্বে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বাংলাদেশেই সবচেয়ে বেশি। বজ্রপাত একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এটি মোকাবেলার সহজ কোনো পন্থা নেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, নিহতদের অধিকাংশই বজ্রপাতের শিকার হয়েছেন অসতর্কতার কারণে। তাই বজ্রপাত থেকে নিরাপদ থাকার উপায় সকলেরই জানা থাকা প্রয়োজন।

আসুন জেনে নিই বজ্রপাতের সময় নিরাপদ থাকার ১৫ উপায়

১. পাকা বাড়ির নিচে আশ্রয় নিন ঘন ঘন বজ্রপাত হতে থাকলে কোন অবস্থাতেই খোলা বা উঁচু জায়গায় না থাকাই ভালো। বজ্রপাতের সময় ধানক্ষেত বা বড় মাঠে থাকলে তাড়াতাড়ি নিচু হয়ে যান। বাড়ির ছাদ কিংবা উঁচু কোনো স্থানে থাকলে দ্রুত সেখান থেকে নেমে যান।

২. উঁচু গাছপালা ও বিদ্যুতের লাইন থেকে দূরে থাকুন। বজ্রপাত হলে উঁচু গাছপালা বা বিদ্যুতের খুঁটিতে বজ্রপাতের সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই এসব জায়গায় যাবেন না বা কাছাকাছি থাকবেন না। ফাঁকা জায়গায় কোনও যাত্রী ছাউনি বা বড় গাছ ইত্যাদিতে বজ্রপাত হওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত বেশি থাকে।

৩. জানালা থেকে দূরে থাকুন বজ্রপাতের সময় বাড়িতে থাকলে জানালার কাছাকাছি থাকবেন না। জানালা বন্ধ রাখুন এবং ঘরের ভেতর থাকুন।

৪. ধাতব বস্তু এড়িয়ে চলুন। বজ্রপাত ও ঝড়ের সময় বাড়ির ধাতব কল, সিঁড়ির রেলিং, পাইপ ইত্যাদি স্পর্শ করবেন না। এমনকি ল্যান্ডলাইন টেলিফোনও স্পর্শ করবেন না। বজ্রপাতের সময় এগুলোর সংস্পর্শ এসে অনেকে আহত হন।

৫. টিভি-ফ্রিজ থেকে সাবধান বজ্রপাতের সময় বৈদ্যুতিক সংযোগযুক্ত সব যন্ত্রপাতি স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন। টিভি, ফ্রিজ ইত্যাদি বন্ধ করা থাকলেও ধরবেন না। বজ্রপাতের আভাস পেলে আগেই এগুলোর প্লাগ খুলে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করুন। অব্যবহৃত যন্ত্রপাতির প্লাগ আগেই খুলে রাখুন।

৬. বজ্রপাতের সময় রাস্তায় গাড়িতে থাকলে যত দ্রুত সম্ভব বাড়িতে ফেরার চেষ্টা করুন। যদি প্রচন্ড বজ্রপাত ও বৃষ্টির সম্মুখীন হন তবে গাড়ি কোনও বারান্দা বা পাকা ছাউনির নিচে নিয়ে যান। এ সময় গাড়ির কাঁচে হাত দেয়া বিপজ্জনক হতে পারে।

৭. ঝড়-বৃষ্টির সময় রাস্তায় জল জমাটা আশ্চর্য নয়। তবে বাজ পড়া অব্যাহত থাকলে সে সময় রাস্তায় বের না হওয়াই মঙ্গল। একে তো বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থাকে। উপরন্তু কাছাকাছি কোথাও বাজ পড়লে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার সম্ভাবনাও থেকে যায়।

৮. খালি পায়ে বা পা খোলা জুতো নয়। বজ্রপাতের সময় চামড়ার ভেজা জুতা বা খালি পায়ে থাকা খুবই বিপজ্জনক। যদি একান্ত বেরোতেই পা ঢাকা জুতো পরে বের হোন। রবারের গাম্বুট এ ক্ষেত্রে সব থেকে ভালো কাজ করবে।

৯. পানি থেকে সরুন। বজ্রপাতের সময় আপনি যদি ছোট কোনো পুকুরে সাঁতার কাটেন বা জলাবদ্ধ স্থানে থাকেন তাহলে সেখান থেকে সরে পড়ুন। পানি খুব ভালো বিদ্যুৎ পরিবাহী।

১০. পরস্পর দূরে থাকুন। কয়েকজন মিলে খোলা কোনো স্থানে থাকাকালীন যদি বজ্রপাত শুরু হয় তাহলে প্রত্যেকে ৫০ থেকে ১০০ ফুট দূরে সরে যান। কোনো বাড়িতে যদি পর্যাপ্ত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা না থাকে তাহলে সবাই এক কক্ষে না থেকে আলাদা আলাদা কক্ষে যান।

১১. নিচু হয়ে বসুন। যদি বজ্রপাত হওয়ার উপক্রম হয় তাহলে কানে আঙুল দিয়ে নিচু হয়ে বসুন। চোখ বন্ধ রাখুন। কিন্তু মাটিয়ে শুয়ে পড়বেন না। মাটিতে শুয়ে পড়লে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে।

১২. চার পাশে খেয়াল রাখুন বজ্রপাতের সময় রাস্তায় চলাচলের সময় আশেপাশে খেয়াল রাখুন। যেদিকে বাজ পড়ার প্রবণতা বেশি সে দিক বর্জন করুন।

১৩. বাড়ি সুরক্ষিত করুন। আপনার বাড়িকে বজ্রপাত থেকে নিরাপদ রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন। এজন্য আর্থিং সংযুক্ত রড বাড়িতে স্থাপন করতে হবে। তবে এক্ষেত্রে দক্ষ ইঞ্জিনিয়ারের পরামর্শ নিতে হবে। ভুলভাবে স্থাপিত রড বজ্রপাতের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিতে পারে।

১৪. বজ্রপাতের আগ মুহূর্তের লক্ষণ জানুন। আপনার উপরে বা আশপাশে বজ্রপাত হওয়ার আগের মুহূর্তে কয়েকটি লক্ষণে তা বোঝা যেতে পারে। যেমন বিদ্যুতের প্রভাবে আপনার চুল খাড়া হয়ে যাবে, ত্বক শিরশির করবে বা বিদ্যুৎ অনুভূত হবে। এ সময় আশপাশের ধাতব পদার্থ কাঁপতে পারে। অনেকেই এ পরিস্থিতিতে ‘ক্রি ক্রি’ শব্দ পাওয়ার কথা জানান। আপনি যদি এমন পরিস্থিতি অনুভব করতে পারেন তাহলে দ্রুত বজ্রপাত হওয়ার প্রস্তুতি নিন।

১৫. বজ্রপাতে আহত হলে। বজ্রপাতের সময় আশপাশের মানুষের খবর রাখুন। কেউ আহত হলে বৈদ্যুতিক শকে আহতদের মতো করেই চিকিৎসা করতে হবে। প্রয়োজনে দ্রুত চিকিৎসককে ডাকতে হবে বা হাসপাতালে নিতে হবে। একই সঙ্গে এ সময় বজ্রাহত ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস ও হৃৎস্পন্দন ফিরিয়ে আনার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। এ বিষয়ে প্রাথমিক চিকিৎসায় প্রশিক্ষণ নিয়ে রাখুন।

সূত্র: আবহাওয়া অধিদফতর




error: Content is protected !!