তফশীল ঘোষণা না হলেও প্রার্থীদের আগাম দৌঁড়ঝাপ ,শায়েস্তাগঞ্জের দুই ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে বইছে আগাম নির্বাচনী হাওয়া
শেখ বেলাল::
শায়েস্তাগঞ্জকে উপজেলায় রূপান্তর করার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে নুরপুর ইউনিয়নকে বিভক্ত করে ব্রাহ্মণডুরা ইউনিয়ন গঠিত হয়। নুরপুর ইউনিয়নের বিভক্তি নিয়ে হাইকোর্টে রিট থাকায় নির্ধারিত সময়ে এ দু’টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। পরে রিটের নিষ্পত্তি হলে ২০১৭ সালে ২৮শে ডিসেম্বর নির্বাচনের আয়োজন করা হয়। চলতি বছরের ডিসেম্বরেই শেষ হচ্ছে এ দুটি ইউনিয়নের মেয়াদ। স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯ এর ২৯ (৩) ধারা অনুযায়ী, পরিষদ গঠনের জন্য কোনো সাধারণ নির্বাচন ওই পরিষদের জন্য অনুষ্ঠিত পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনের তারিখ থেকে পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ নিয়ে ইতোমধ্যে নির্বাচনের উপযোগী হওয়ায় নির্বাচন কমিশন বরাবরে চিঠি দিয়েছে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা।
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে ৩টি। এর মধ্যে শায়েস্তাগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন গত ৩১ জানুয়ারী শেষ হলেও ৭নং নুরপুর ও ১১নং ব্রাহ্মণডুরা ইউপি পরিষদের নির্বাচন অনুষ্টিত হয়নি। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আগামী ডিসেম্বর বা ২০২৩ সালের শুরুর দিকে এই দুটি ইউনিয়নের নির্বাচন সম্পন্ন করতে চায় কমিশন। এরই প্রেক্ষিতে উপজেলার ৭নং নুরপুর ও ১১নং ব্রাহ্মণডুরা ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বইছে আগাম নির্বাচনী হাওয়া।
চায়ের দোকানে দোকানে বইছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে বিশ্লেষণ। নড়েচড়ে উঠেছে চেয়ারম্যান ও সদস্য পদের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। প্রার্থীতার জানান দিচ্ছেন একাধিক প্রার্থী। দুটি ইউনিয়নেই দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী। তবে এবছর নবীন-তরুণদের প্রার্থীতার ঘোষণা চোখে পড়ার মতো। অনেকেই আগাম প্রচার-প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন। দলীয় নেতাকর্মী ও ভোটারদের সমর্থন আদায়ে নিজেদের ছবি সম্বলিত পোস্টার, ফেস্টুন, লিপলেট, ব্যানার টানিয়ে ও চা-চক্রে নিজেদের জানান দিচ্ছেন অনেকেই। বাড়ি বাড়ি গিয়ে কুশল বিনিময়ও করছেন অনেক প্রার্থী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সমানতালে চলছে প্রচার-প্রচারণা ।
এখনও নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা না হলেও ইতিমধ্যে নির্বাচন ঘিরে দুই ইউনিয়নে প্রার্থীদের ব্যাপক দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্ভাব্য প্রার্থীদের কেউ কেউ এলাকার ভোটারদের মাঝে দিচ্ছেন আগাম প্রতিশ্রুতি। এছাড়াও নানা রকম কৌশল অবলম্বন করে ভোটের মাঠে নিজেদের অনুকূলে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন অনেকেই।
শুধু মাঠেই নয়, দলীয় সমর্থন পেতে একাধিক প্রার্থীর পক্ষ থেকে চলছে নানারকম তদবির, রাজনৈতিক কার্যালয়গুলোও সরগরম হয়ে উঠেছে। দলীয় সমর্থন পাওয়ার জন্য তৎপর হয়ে উঠেছে দুই ইউনিয়নের সম্ভাব্য প্রার্থীরা।
৭নং নুরপুর ইউনিয়ন থেকে ২০১৭ সালে ১১নং ব্রাহ্মণডুরা ইউনিয়ন বিভক্ত হয়। ওই বছরের ২৮শে ডিসেম্বর নবগঠিত ১১নং ব্রাহ্মণডুরা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে ৩ হাজার ৩৬৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন হোসাইন মো. আদিল জজ মিয়া। এবারের নির্বাচনেও তিনি দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। তবে এবার তাঁর পাশাপাশি মনোনয়ন চাইবেন ইউনিয়ন আ’লীগের বেশ কয়েকজন নেতা। গত নির্বাচনে কয়েকজন পরাজিত প্রার্থীরাও রয়েছেন মাঠে, আছেন কিছু নতুন মুখও।
জানাগেছে, নতুন মুখ হিসেবে গত উপজেলা নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে পরাজিত প্রার্থী ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক বদরুল আলম দীপন, মোস্তাক আহমেদ খান, হেলাল উদ্দিন আফরোজ এবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে নৌকা মার্কার দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। তারা ইতিমধ্যে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন পরিচিত মহলে।
অন্যদিকে গত নির্বাচনে পরাজিত আওয়ামীলীগ কর্মী তাজুল ইসলাম রানু, গোলাম রাব্বানী ধানু, এস এম টিপু সুলতান, জাহাঙ্গীর মিয়া চৌধুরী, হুমায়ুন কবির তালুকদার, উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের মিয়াও প্রার্থী হিসেবে চালাচ্ছেন প্রচারণা।
অপরদিকে নতুন মুখ হিসেবে চেয়ারম্যান পদে সম্ভাব্য (স্বতন্ত্র) প্রার্থী হিসেবে ইতিমধ্যে জসিম আহমেদ, সুরুজ আলী মোল্লা, সাংবাদিক শেখ শাহাউর রহমান বেলাল, আব্দুল হাই জুয়েল এবং ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলামের নাম শুনা যাচ্ছে। এরমধ্যে বেশ কয়েকজন প্রার্থী পোস্টার ব্যানার করে আগাম প্রচার প্রচারণাও শুরু করেছেন। তারা নিয়মিত প্রচার-প্রচারনা ও উঠান বৈঠক অব্যাহত রেখেছেন।
অন্যদিকে ৭নং নুরপুর ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে ৩ হাজার ৩২৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন মো. মুখলেছ মিয়া। তার প্রতিদ্ধন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন টানা সাতবারের চেয়ারম্যান বিএনপি মনোনীত আলহাজ্ব গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী বেলাল। বর্তমান চেয়ারম্যান মো: মুখলেছ মিয়া এবারও দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে শুনা যাচ্ছে। তবে তাঁর পাশাপাশি চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হিসেবে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন নুরপুর ইউপি আওয়ামী লীগের সভাপতি ইছাক আলী সেবন, সহ-সভাপতি আব্দুল কাদির আসাদ, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল লতিফ।
বিএনপি থেকে আলহাজ্ব গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী বেলালের নাম শুনা গেলেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নাও নিতে পারেন এমন গুঞ্জন রয়েছে। তবে বিএনপি থেকে অন্য কেউ না পেলে দল থেকে বেলালকেই দিতে পারে। প্রার্থীরা প্রচারণার মাঠে থাকলেও শেষ পর্যন্ত কারা কারা লড়ে নির্বাচনী মাঠে এটাই দেখার বিষয়।
জানা গেছে, দুটি ইউনিয়নে ভোটার সংখ্যা হালনাগাদের তালিকা এখনো আসেনি। ২০১৯ সালের উপজেলা তালিকা অনুযায়ী দুটি ইউনিয়নে ভোটার সংখ্যা ১৯ হাজার ৯শত ৮ ভোট। এরমধ্যে ব্রাহ্মণডুরা ইউনিয়নে রয়েছে ৯ হাজার ৩শত ৪১ এবং নুরপুর ইউনিয়নে ১০ হাজার ৫শত ৬৭ ভোট।
এব্যাপারে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাদেকুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, বিধি অনুযায়ী মেয়াদ শেষ হবার আগেই স্থানীয় সরকার নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে হবে। সেই চলতি বছরের ডিসেম্বর বা নতুন বছরের শুরুর দিকে এই দুই ইউনিয়নের নির্বাচন হবার কথা। তবে এব্যাপারে নির্বাচন কমিশন কিংবা স্থানীয় সরকার বিভাগের সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা এখনো পর্যন্ত নেই বলে জানান।
এদিকে ব্রাহ্মণডুরা ও নুরপুর ইউপি নির্বাচন শুরু হয় ২০১৭ সালের ২৮শে ডিসেম্বর। জেলা নির্বাচন অফিস ও নির্বাচন কমিশনের সময়সীমা অনুযায়ী এদুটি ইউপি নির্বাচনের মেয়াদ উত্তীর্ণ হবে চলতি বছরের ডিসেম্বরে।