প্রফেসরের ঠাঁই বৃদ্ধাশ্রমে

প্রকাশিত: ৫:৪০ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১০, ২০২০

অপরাধ ডেস্কঃ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সাবেক প্রফেসরের বড় মেয়ে আমেরিকা প্রবাসী, বড় ছেলে উইং কমান্ডার (অব.) ও ছোট ছেলে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী। ছেলে-মেয়েদের মানুষ করে তার ঠাঁই হয়েছে বৃদ্ধাশ্রমে.

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর আব্দুল আউয়ালের তিন সন্তান। সবার বড় মেযের নাম রেজিনা ইয়াসিন। তিনি আমেরিকা প্রবাসী। বড় ছেলে ইফতেখার হাসান উইং কমান্ডার (অব.)। ছোট ছেলে রাকিব ইফতেখার হাসান অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী। জীবনে এত কিছু থাকার পরও আজ তার দু’চোখে অন্ধকার। থাকেন আগারগাঁও প্রবীণ নিবাসে।

দীর্ঘ ১৭ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন সুনামের সঙ্গে। ২০০৬ সালে অবসর নেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. এম আব্দুল আউয়াল। অবসরের পর কিছুদিন ভালোই চলছিল তার।

আব্দুল আউয়াল বলেন, শিক্ষকতার আগে ১৯৬৫-১৯৮৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ এটমিক এনার্জিতে চাকরি করেছি। এরপর শিক্ষকতা। জীবনে অনেক টাকা-পয়সা উপার্জন করেছি। ২০০৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর নিয়েছি। এরপর ছেলে-মেয়েরা আমার খোঁজখবর নেওয়া বন্ধ করে দেয়।

কল্যাণপুর হাউজিং এস্টেটে নিজের ফ্ল্যাট ছিল আব্দুল আউয়ালের। এছাড়া পল্লবীতেও বেশ কিছু জমি ছিল। কিন্তু এসব বড় ছেলে কৌশলে বিক্রি করে টাকা পয়সা নিজের অ্যাকাউন্টে জমা করেছেন, আক্ষেপ করেই বলেন প্রফেসর আউয়াল।

তিনি বলেন, ওরা আমাকে এতো কষ্ট দেয় কেন। আমাকে নিয়ে এতো ছলচাতুরি করে কেন? বলতে বলতে ডুকরে কেঁদে উঠেন প্রফেসর আউয়াল।

তিনি বলেন, চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর কিছু দিন বড় ছেলের সঙ্গেই থাকতাম। ছেলের সংসারে থাকার সময় জানতে পারি ছেলে ও বউয়ের মধ্যে সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। একদিন বাসায় থাকা অবস্থায় বউয়ের মুখে গালি শুনে বাসা থেকে নেমে আসি। আর ফিরে যাইনি। ওরাও কেউ খোঁজ নেয়নি। ছোট ছেলে অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশে আসে ২০১৪ সালে। এসে মিরপুর-১ নম্বরে একটি দোকানে আমার সঙ্গে দেখা করে কথা বলে। সেখানে গেলে আমাকে জানায় তার বিয়ে ঠিক হয়েছে। আমি ওর বাবা অথচ আমাকে জানালও না যে বিয়ে করতে যাচ্ছে। বিয়ে করে আবার চলে যাবে, একথা শুনে ছেলের বউকে দেখতে চাই। কিন্তু তার সাথে দেখা করা যাবে না বলে জানায় ছেলে। অথচ এই ছেলের পড়ালেখার জন্যও পেনশনের টাকা থেকে ২৬ লাখ পাঠিয়েছি। সেই ছেলেও আমাকে কোনো দিন ফোন করে না। মাঝে মাঝে ইমেইলে চিঠি লেখে।

ভেবে দেখুন অতি উচ্চ শিক্ষিত হতে গিয়ে আমরা দিন দিন আরও অমানুষ হয়ে যাচ্ছি। অথচ অনেক গরীব, মূর্খ আছে যারা বাবা মাকে নিয়েই একসাথে থাকে। তাহলে তারা কি আমাদের মতো মুখোশধারী শিক্ষিতের চেয়ে ভালো নয়? তাই উচ্চ শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিকতা ও মানুষ্যত্ব টা ও সবার শিক্ষাগ্রহন করা উচিৎ বলে মনে করি।

[স্বদেশপ্রেম গ্রুপের শফিক ইসলামের বরাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে সোনালী ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা খন্দকার আবু হোসেনের দেয়া পোস্টি থেকে]




error: Content is protected !!