চীনে প্রাণঘাতী যে নতুন ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে, চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা তার নাম দিয়েছেন ‘২০১৯-এনসিওভি-করোনা’। ইতিমধ্যে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সিঙ্গাপুরে ৩ জন এবং থাইল্যান্ডে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। উদ্বেগজনক হল, নতুন এ ভাইরাসটি ছোঁয়াচে। অবশ্য স্বাস্থ্য অধিদফতর এরই মধ্যে এ বিষয়ে যথেষ্ট গুরুত্ব আরোপ করেছে; বিশেষ করে, চীন ভ্রমণ শেষে আসা দেশি-বিদেশি নাগরিকদের ক্ষেত্রে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, এর আগে মধ্যপ্রাচ্যে ‘মার্স-করোনা’ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে গত বছরের হজ মৌসুমে বিশেষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল স্বাস্থ্য অধিদফতর। সেই ব্যবস্থার আওতায় মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা পর্যটকদের সতর্কতামূলক বিশেষ স্বাস্থ্য কার্ড প্রদান করা হতো।
‘২০১৯-এনসিওভি করোনা’ ভাইরাসের লক্ষণ ‘মার্স-করোনা’ ভাইরাসের মতো প্রায় একই রকম বলে উল্লেখ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রাথমিকভাবে রোগীর শরীরে জ্বরের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার মধ্য দিয়ে শ্বাসকষ্ট তীব্র আকার ধারণ করে নিউমোনিয়ায় পরিণত হতে পারে, যা পরে মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডে ‘২০১৯-এনসিওভি করোনা’ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যেসব নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে, প্রত্যেকেই চীনের ‘উহান’ এলাকায় ভ্রমণ ও একটি সি-ফুড মার্কেটে কেনাকাটা করতে গিয়েছিলেন বলে জানা গেছে। অবশ্য ওই মার্কেটে সি-ফুডের পাশাপাশি শূকর, ইঁদুরসহ বিভিন্ন পশুপাখিও বিক্রি হয়। ফলে কোনো সি-ফুড; নাকি পশু-পাখির মাধ্যমে ভাইরাসটি ছড়িয়েছে, সে ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
‘২০১৯-এনসিওভি করোনা’ ভাইরাস থেকে উৎসারিত রোগটি যেহেতু ছোঁয়াচে, তাই এ ব্যাপারে প্রত্যেকের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হচ্ছে- হাঁচি-কাশিরত ব্যক্তির কাছ থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান নেয়ার পাশাপাশি এ সময় রুমাল-টিস্যু-গামছা দিয়ে নাক-মুখ ভালোভাবে ঢেকে নেয়া; প্রয়োজনে মাস্ক ব্যবহার করা। এ ছাড়া সব ধরনের ফলমূল ভালো করে ধুয়ে খাওয়া ও দুই হাত বারবার সাবান-পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলা। একজন মানুষ নিজের অজান্তেই প্রাণঘাতী ‘২০১৯-এনসিওভি করোনা’ ভাইরাসের শিকারে পরিণত হতে পারে, তা বলাই বাহুল্য। এ জন্য মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিসহ শিশুদের বিড়াল, কবুতর, কুকুর ইত্যাদি পোষা প্রাণীর সংস্পর্শ থেকে দূরে রাখতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, ‘২০১৯-এনসিওভি করোনা’ নামের নতুন এ ভাইরাসটির কোনো প্রতিষেধক না থাকায় জনসচেতনতা তৈরিই এর আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র পথ। ‘২০১৯-এনসিওভি করোনা’ ভাইরাস সম্পর্কে দেশের মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি এ ব্যাপারে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।