হাফেজ মাওলানা মুফতি ওসমান আল হুমাম উখিয়াভী।
সিনিয়র মুহাদ্দিস, জামিয়া ইসলামিয়া বাইতুল কারীম হালিশহর চট্টগ্রাম।
অমুসলিমদের উৎসব উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানানো হারাম ও এত জঘন্য গুনাহ (যেমনটি ইবনুল কাইয়্যুম এর ভাষ্যে এসেছে) হওয়ার কারণ হলো- এ শুভেচ্ছা জানানোর মধ্যে কুফরী আচারানুষ্ঠানের প্রতি স্বীকৃতি ও অন্য ব্যক্তির পালনকৃত কুফরীর প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ পায়। যদিও ব্যক্তি নিজে এ কুফরী করতে রাজী না হয়। কিন্তু, কোন মুসলিমের জন্য কুফরী আচারানুষ্ঠানের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করা কিংবা এ উপলক্ষে অন্যকে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করা হারাম। কেননা আল্লাহ তাআলা কুফরীর প্রতি সন্তুষ্ট নন। তিনি বলেন: “যদি তোমরা কুফরী কর তবে (জেনে রাখ) আল্লাহ্ তোমাদের মুখাপেক্ষী নন। আর তিনি তাঁর বান্দাদের জন্য কুফরী পছন্দ করেন না। এবং যদি তোমরা কৃতজ্ঞ হও; তবে (জেনে রাখ) তিনি তোমাদের জন্য সেটাই পছন্দ করেন।”[সূরা যুমার, আয়াত: ৭]
আল্লাহ তাআলা আরও বলেন: “আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করলাম এবং তোমাদের উপর আমার নেয়ামত সম্পূর্ণ করলাম, আর তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।”[সূরা মায়েদা, আয়াত: ৩] অতএব, কুফরী উৎসব উপলক্ষে বিধর্মীদেরকে শুভেচ্ছা জানানো হারাম; তারা সহকর্মী হোক কিংবা অন্য কিছু হোক।
আল্লাহর সাথে শরিক করে,আল্লাহর সমকক্ষ মনে করে,স্রষ্টা মনে করে, অন্য যা কিছুর পূজা করা হয়, কাউকে আল্লাহর সন্তান বলে (নাউযুবিল্লাহ)
যে দিবস পালন করা হয়, কিংবা আল্লাহ নিজেই এই দিনে মানবরুপে পৃথিবীতে জন্ম নিয়েছেন (নাউযুবিল্লাহ) বলে বিশ্বাস করে যে দিন উদযাপন করা হয়, মূর্তি/গাছ/মানব/দানব/চন্দ্র/সূর্য/পাথর/জ্বীন/শয়তান ইত্যাদির পূজা করে উপাসনা করে যেসব দিবস পালন করা হয়, এই দিবসগুলোতে একজন মুসলমানের বিধর্মীকে শুভেচ্ছা জানানো উইস করা কার্ড দেয়া গিফট পাঠানো ইত্যাদি সম্পূর্ণ হারাম ও শির্ক-এ-আকবার উদযাপনের শামিল।
অতএব মুসলমানদের বুঝতে হবে সতর্ক থাকতে হবে ম্যারি ক্রিসমাস, হ্যাপি দিওয়ালী, পূজার শুভেচ্ছা, ইত্যাদি উইস করার মাধ্যমে ক্ষমার অযোগ্য সর্বনিকৃষ্ট মহাপাপ শির্কে যেনো আমরা জড়িয়ে না পড়ি। এটা সুস্পষ্ট কুফরি ও সম্পূর্ণ শির্কি ভ্রান্ত বিশ্বাস উদযাপনের নিকৃষ্ট এক দিবস। সুতরাং এই দিনে ম্যারি ক্রিসমাস বলে উইস করা, কার্ড দেয়া গিফট দেয়া সম্পূর্ণ হারাম ও শির্ক-এ-আকবার। কুফরির শেষ পর্যায়।
মহান আল্লাহ্ বলেন, “নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য দ্বীন একমাত্র ইসলাম।” (সূরা আল ইমরানঃ১৯)
“হে লোক সকল! একটি উপমা বর্ণনা করা হলো, অতএব তোমরা তা মনোযোগ দিয়ে শোন; তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের পূজা কর, তারা কখনও একটি মাছি সৃষ্টি করতে পারবে না, যদিও তারা সকলে একত্রিত হয়। আর মাছি যদি তাদের কাছ থেকে কোন কিছু ছিনিয়ে নেয়, তবে তারা তার কাছ থেকে তা উদ্ধার করতে পারবে না, প্রার্থনাকারী ও যার কাছে প্রার্থনা করা হয়, উভয়েই শক্তিহীন।” [সূরা হজঃ ৭৩]
“নিশ্চয়ই আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না, যে তাঁর সাথে কাউকে শরীক করে। এছাড়া যাকে ইচ্ছা, ক্ষমা করেন।” [সূরা আন নিসাঃ১১৬]
ঘরের পাশে যে উৎসবটিতে স্বয়ং আল্লাহকে চরমভাবে অপমান করা হয় সে দিন আমরা সবাইকে ‘মেরি ক্রিসমাস’ জানাই, “শারদীয় শুভেচ্ছা” জানাই! আল্লাহর অপমান আমাদের গায়ে তো লাগেইনা বরং সেটাতে আনন্দের তকমা দেই। দুঃখজনক!!! শিরক সম্পর্কে আল্লাহ বলেন –
আল্লাহর সাথে শরীক করো না। নিশ্চয় আল্লাহর সাথে শরীক করা সবচেয়ে বড় জুলুম। (সূরা লোকমানঃ 13)
জুলুম বলতে আমরা বুঝি অন্যায়, অপরাধ। শিরককে আল্লাহ সবচেয়ে বড় অপরাধ ঘোষণা দিয়েছেন। এখন এই শিরকের অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা জানানো মানে হল কাউকে খুন করা, বা ধর্ষণ করার পর শুভেচ্ছা জানানোর অনুরুপ।
কেউ ধর্ষণ, হত্যা করে আসলে কি আপনারা বলেন , শুভ ধর্ষণ , শুভ হত্যা।
না তা কিন্তু কেউ বলে না। আর বলা মানে সে এটাকে সাপোর্ট দিচ্ছে।
“অনেক মানুষ আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, কিন্তু সাথে সাথে শিরকও করে” (ইউসুফঃ ১০৬)
কীভাবে ??
কোন হিন্দুকে দুর্গাপূজা উপলক্ষে শুভেচ্ছা-সম্ভাষণ জানানো অর্থ তার এই পূজা করাতে আপনার সায় আছে। আপনাকে যদি আজকে ‘বাস্টার্ড’ গালি দেওয়া হয় তাহলে আপনি রেগে তেড়ে আসবেন, পিতৃত্বে শরিক করলে আমাদের আঁতে ঘাঁ লাগে…
অথচ যে আল্লাহ আমাদের অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বে আনলেন, প্রতি মুহূর্ত অক্সিজেন দিচ্ছেন ফ্রি, আহার-পানীয়-পোশাকের ব্যবস্থা করে দিলেন সেই আল্লাহর সাথে প্রতিনিয়ত শরিক করা হলেও আমাদের ভ্রুটাও অবধি কুচকে উঠেনা। সেই আল্লাহর জায়গায় মাটির একটা মূর্তি বসিয়ে করা পূজা দেখে শুভেচ্ছা জানায় – শারদীয় শুভেচ্ছা। এখন আপনিই বলেন এই কাজটা কি শিরক না ?
ইমাম হাফিজ ইবনুল কায়্যিম (রহ:) তার ‘আহকাম আহ্ল আল-দিম্মা’ গ্রন্থে বলেন কাফিরদের তাদের উৎসবে সম্ভাষণ জানানো মুসলিম ঐক্যমতের ভিত্তিতে নিষিদ্ধ। আল্লাহ আমাদের ইসলাম জানার, বোঝার এবং বুঝে মানার সামর্থ্য দিন। আমিন….।
জাহেলি যুগেও রাসুল (সা) ও তার সাহাবীরা মূর্তিপূজারকদের যেকোন অনুষ্ঠানে যাওয়ার ব্যাপারে কঠোরতা অবলম্বন করেছেন, নিষেধ করেছেন। কারন সেখানে সরাসরি “শিরক” হচ্ছে। আর অন্যান্য অনৈসলামিক কর্মকান্ড তো হচ্ছেই। কাফিরদের যে কোন উৎসবে অংশগ্রহণ করা মুসলমানদের জন্য হারাম।
মুসলিম জাতির পিতা ইব্রাহীম(আঃ) মূর্তিপূজকদের উদ্দেশ্যে বলেন, “তোমাদের ও আমাদের মধ্যে চিরশত্রুতা থাকবে।” [সূরা মুমতাহিনাঃ ৪]
একজন মুসলিম কি তবে একজন হিন্দু প্রতিবেশীর শুভ কামনা করবে না? তার খ্রীষ্টান সহপাঠীর ভালো চাইবে না? নিশ্চয়ই চাইবে। ভাল চাওয়ার প্রথম কাজটাই হবে তাকে আল্লাহর একত্ববাদ বোঝানো, তাকে সে দিকে আহবান জানানো। একজন মানুষকে অনন্তকালের জন্য আগুনে পোড়া থেকে বাচাঁনোর চেয়ে আর ভাল কাজ কি হতে পারে? অমুসলিম ভাই-বোনদের সাথে সামাজিক লেনদেন কুশল বিনিময় বিপদে আপদে সাহায্য করা, মানবিক প্রয়োজনে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে ইত্যাদি আমাদের মানবিক দায়িত্ব কর্তব্য।
কিন্তু ধর্মীয় বিশ্বাসের বিষয়ে অত্যন্ত সতর্ক ও সাবধান থাকতে হবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে বুঝার তাওফিক দিন। আমিন…
নোট: অমুসলিমদের সাথে পার্থিব লেনদেন হতে পারে, তাদের সাথে সদাচার ও সদ্ব্যবহার করতে হবে। প্রতিবেশী যদি অমুসলিম হয় তাহলে তাকে ইসলাম প্রদত্ত হক প্রদান করতে হবে। তবে কোনো অবস্থাতেই তাদের ধর্মীয় উৎসবে যোগদান করা তো দুরের কথা কোনোরকম সাহায্য সহযোগিতা ও শুভেচ্ছা জানানো যাবে না। মহান আল্লাহ আমাদের সঠিক জ্ঞান দান করুন।
লেখক : লেখক তরুণ মুহাদ্দিস ও গণমাধ্যম কর্মী।