আশুরার রোজার মর্যাদা সম্পর্কিত আলোচনা

প্রকাশিত: ৮:০১ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৯, ২০২০

কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি

মাওলানা মুফতি রুহুল আমিন:

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত,আমি নবী (সা.) কে রোজা রাখার এত বেশি আগ্রহী হতে দেখিনি, যত দেখেছি এ আশুরার দিন এবং এ মাস (রমজান) মাসের রোজার প্রতি। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং : ১৮৬৭)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আশুরার দিনের সাওমের ব্যাপারে আমি আল্লাহর কাছে আশা করি, তিনি পূর্ববর্তী এক বছরের পাপ ক্ষমা করে দেবেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং : ১৯৭৬)

আশুরার রোজা কিভাবে রাখব:
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, যখন রাসুলুল্লাহ (সা.) আশুরার রোজা রাখলেন এবং (অন্যদেরকে) সাওম রাখার নির্দেশ দিলেন। লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসুল! এটি তো এমন দিন, যাকে ইহুদি ও খ্রিস্টানরা বড় জ্ঞান করে, সম্মান জানায়। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, আগামী বছর এই দিন এলে আমরা নবম দিনও রোজা রাখব ইনশাআল্লাহ। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৯৪৬)

ইমাম শাফি, ইমাম আহমাদ, ইমাম ইসহাক রহ. প্রমুখ বলেছেন, আশুরার রোজার ক্ষেত্রে দশম ও নবম উভয় দিনের রোজাই মুস্তাহাব। কেননা নবী (সা.) ১০ তারিখ রোজা রেখেছেন আর ৯ তারিখ রোজা রাখার নিয়ত করেছেন।

আশুরার রোজার স্তর:

আলোচ্য হাদিসের আলোকে আশুরার রোজার কয়েকটি স্তর রয়েছে : সর্বনিম্ন হচ্ছে কেবল ১০ তারিখের রোজা রাখা। এর চেয়ে উচ্চ পর্যায় হচ্ছে তার সঙ্গে ৯ তারিখের সাওম পালন করা। এমনিভাবে মহররম মাসের রোজার সংখ্যা যত বেশি হবে মর্যাদাও ততই বাড়তে থাকবে।

মহররম মাসের নফল রোজা কয়টি?
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, রমজানের পর সর্বোত্তম সাওম হচ্ছে আল্লাহর মাস মহররম (মাসের সাওম)। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং : ১৯৮২)

আল্লামা মোল্লা আলী কারি (রহ.) বলেন, হাদিসের বাহ্যিক শব্দমালা থেকে পূর্ণ মাসের সাওম বুঝে আসে। তবে নবী (সা.) রমজান ছাড়া আর কোনো মাসে পূর্ণমাস সাওম পালন করেননি, এটি প্রমাণিত। তাই হাদিসকে এই মাসে বেশি পরিমাণে রোজা পালন করার ব্যাপারে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে বলে ধরা হবে।

শুধু ১০ তারিখ রোজা রাখা কি পাপ?

শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, আশুরার রোজা এক বছরের গুনাহের কাফ্ফারা আর আশুরার একটি রোজা রাখা মাকরুহ হবে না। আল্লামা ইবন হাজার হায়সামি রচিত তুহফাতুল মুহতাজ গ্রন্থে আছে, আশুরা উপলক্ষে ১০ তারিখ কেবল একটি রোজা রাখাতে কোনো দোষ নেই।

আশুরায় উদ্যাপিত কিছু বিদআত
আশুরার দিন লোকেরা সুরমা লাগানো, গোসল করা, মেহেদি লাগানো, মুসাফাহা করা, খিচুড়ি রান্না করা, আনন্দ উৎসবসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদির আয়োজন করে থাকে। এ সম্পর্কে শায়খুল ইসলাম ইবন তাইমিয়া (রহ.) কে প্রশ্ন করা হলো, এর কোনো ভিত্তি আছে কি না? উত্তরে তিনি বললেন, এসব অনুষ্ঠানাদি উদ্যাপন প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে সহিহ কোনো হাদিস বর্ণিত হয়নি এবং সাহাবিদের থেকেও না। চার ইমামসহ নির্ভরযোগ্য কোনো আলেমও এসব কাজকে সমর্থন করেননি। কোনো মুহাদ্দিস এই ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ ও সাহাবিদের থেকে কোনো সহিহ কিংবা দুর্বল হাদিসও বর্ণনা করেননি।

সবশেষে মহান রাব্বুল আলামীনের দরবারে অকাতরে দোয়া করি তিনি যেন আমাদের মহররম মাসের মর্যাদা রক্ষার ক্ষমতা দান করেন। আল্লাহুম্মা আমিন।




error: Content is protected !!