কলাপাড়ায় ৭০-এর ভয়াল ১২ নভেম্বর প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় গোর্কির তান্ডবে নিহতদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্বলন, স্মরণ সভা ও দোয়া-মোনাজাত অনুষ্ঠিত
কলাপাড়া(পটুয়াখালী)প্রতিনিধি : কলাপাড়ায় ১৯৭০-এর ১২ নভেম্বর মহা
প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় গোর্কি’র তান্ডবে নিহতদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্বলন ও
এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়েছে। শুক্রবার রাত সাড়ে ৮ টায় কলাপাড়া
সম্মিলিত নাগরিক অধিকার জোটের উদ্যোগে পৌর শহরের শহীদ সুরেন্দ্র মোহন
চৌধুরী সড়কের মনোহরীপট্টিতে এ মোমবাতি প্রজ্বালন করা হয় ও শনিবার একই
স্থানে বেলা ১১ টায় স্মরণ সভা ও নিহতদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনায়
দোয়া-মোনাজাত অনুষ্ঠিত এবং ১২ নভেম্বরকে উপকূল দিবস ঘোষণার দাবি জানানো
হয়।
এ স্মরণ সভা ও দোয়া-মোনাজাত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কলাপাড়া সম্মিলিত
নাগরিক অধিকার জোটের সভাপতি সৈয়দ রেজাউল করিম, সঞ্চালনা করেন সাধারণ
সম্পাদক গৌতম চন্দ্র হাওলাদার। বক্তব্য রাখেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও
সাংবাদিক হাবিবুল্লাহ রানা, সহ-সভাপতি ইয়াকুব খান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক
বিএইচ সুমন তালুকদার, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ মো. রাসেল, সদস্য মো. কামাল
হোসেন প্রমুখ। স্মরণসভা শেষে দোয়া-মোনাজাত পরিচালনা করেন হাফেজ মো,
মাহমুদুল হাসান ।
এ সময় বক্তারা ১২ নভেম্বর রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘উপকূল দিবস’ ঘোষণার দাবি জানিয়ে
উপকূলীয় অঞ্চলকে দুর্যোগ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ঘোষণা, উপকূল উন্নয়ন বোর্ড
গঠন, সুপেয় পানি সংকটের স্থায়ী সমাধান, নদী ভাঙন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ
গ্রহণ, উপকূল জুড়ে টেকসই ব্লক বাঁধ নির্মাণ, উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষদের
জীবনমান উন্নয়নে কাজ, উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষদের অধিকার ও ন্যায্যতা
নিশ্চিত করা, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব খাপখাওয়াতে ক্ষতিগ্রস্থদের
সহযোগিতা করা, অভিযোজন প্রক্রিয়া বাড়ানো, জলবায়ু শরনার্থীদের টেকসই
পুর্নবাসন করা, দেশের পাহাড়-টিলা, বনাঞ্চল, গাছপালা, বন্যপ্রাণী, নদী এবং
সর্বোপরি পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষা করা ও সংরক্ষণ করা ও প্লাস্টিক দূষণসহ
বায়ুদূষণ রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের
প্রভাবে বিপন্ন উপকূল জনগোষ্ঠীর টেকসই নিরাপত্তার দাবি জানান।
উল্লেখ্য, ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর রাতে উপকূলে আঘাত হেনেছিলো প্রলয়ঙ্করী
ঘুর্ণিঝড় ভয়াল গোর্কি। এতে অসংখ্য ক্ষয়-ক্ষতির পাশাপাশি প্রান কেড়ে নেয়
১০ লাখ মানুষের। ভয়াল সেই দিনের কথা স্মরন করতে গেলে এখনোা আৎকে ওঠে
কলাপাড়ার মানুষ। সরকারী হিসেবে বৃহত্তর পটুয়াখালী জেলায় (বরগুনাসহ) সেদিন
রাতে ৪৮ হাজার মানুষ প্রান হারায়। বাস্তবে এ সংখ্যা আরও বেশী। তখনকার
কলাপাড়া উপজেলা, বর্তমান রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোন্তাজ, সোনার চর,
মৌডুবি, বড় বাইশদিয়াসহ দ্বীপ এ অঞ্চলের সমৃগ্র জনপদ পরিনত হয় জনশুন্য ও
বিরান ভূমিতে। মানুষ ছাড়া ঘর-বাড়ি-ফসলসহ সম্পদ হানি হয় হাজার কোটি টাকার।
সমস্ত খাল-বিল নদী -নালায় ছিল লাশের মিছিল। আজও ভয়াল সেই রাতের কথা
স্মরনে এলে শিউরে ওঠে কলাপাড়ার মানুষ।