শরিফুল ইসলাম,খুলনা,কয়রা প্রতিনিধিঃ-
কয়রা উপজেলায় প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন মহারাজপুর ইউনিয়নের দেয়াড়া গ্রামের মজিবর ঢালীর ছেলে তাজমির। মহামারি করোনা থেকে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠেছেন তিনি। করোনার সংক্রমণ থেকে ধীরে ধীরে সেরে ওঠার গল্প শুনিয়েছেন তিনি আমাদেরকে। তাজমির আমাদের মাধ্যমে সমাজের মানুষ দের একটি ম্যাসেজ দিয়েছেন,করোনা নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন, বাসায় থেকেই সঠিক চিকিৎসা ও ঘরোয়া টেকনিক কাজে লাগালে করোনা থেকে সুস্থ হওয়া যায়। করোনা থেকে সেরে সেরে উঠছেন যেভাবে, অসাবধানতাবশত কখন, কিভাবে, কার মাধ্যমে সংক্রমিত হলাম কিছুই বুঝতেই পারিনি। Covid-19 সম্পর্কে আমি যেটা অনুভব করছি সেটি হচ্ছে, হঠাৎ অনুভব করলাম শরীরে প্রচন্ড জ্বর বয়ে যাচ্ছে, সর্দিতে আক্রান্ত হলাম, গলায় প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব হচ্ছে। স্থানীয় ডাক্তারের পরামর্শে ঔষুধ সেবক কোন কোন রকম কাজ না হওয়ায়, গ্রামের মোটামুটি অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শে ঔষুধ সেবন করলে শাররীক অবস্থা একটু ভালোর দিকে যায়, যখন করোনার লক্ষণ গুলো মিলে যাওয়ায় দেরি না করে নিজে উদ্যোগে করোনা পরীক্ষার জন্য স্যাম্পল পাঠালাম। ২৭ মে দুপুরে রিপোর্ট এলো, করোনা পজিটিভ। তারপর থেকে হোম কোয়ারেইনটাইনে ছিলাম। রিপোর্ট হাতে আসার পরে একরকম হাত-পা কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়ে গিয়েছিল। স্থানীয় প্রশাসন আমার বাড়ি সহ আশে পাশের বাড়িগুলো লকডাউন করে দিয়েছিল। আমার সাথে যারা মিশছে ও পরিবারের সকল সদস্যদের স্যাম্পল প্রসাশন নিয়ে করোনা টেষ্টের জন্য পাঠায়। নিজে খুব ভেঙ্গে পড়ি ও হতাশা গ্রস্থ হয়ে পড়ি। যেহেতু রোগটা নতুন, আর বিশ্বের বড় বড় দেশ এই ভাইরাসের কোন প্রতিষেধক তৈরি করতে অক্ষম, একারণেই মূলত আতঙ্কটা আমার মনে জন্ম নিয়েছিল। তবে সময়ের সাথে সাথে সেই আতঙ্ক ঝেড়ে ফেলেছি, নিজেকে শক্ত করেছি, সাহস সঞ্চার করেছি। কারণ বিভিন্ন সময় ডাক্তার ও বিভিন্ন প্রচারে দেখে আমার মনে হয়েছে, করোনার বিরুদ্ধে লড়তে গেলে মনোবল ও সাহস সবচেয়ে বেশি দরকারি। আমার করোনা জয়ের প্রথম হাতিয়ার ছিলো নিজের মনোবল। ডাক্তারের পরামর্শ মেনে নিয়মিত বেশ কয়েকটি ওষুধ সেবন করার পাশাপাশি ভিটামিন সি যেমন, কমলা, কাগজি লেবু ও বেশি বেশি বিভিন্ন রকম ফল খেতাম এবং ভিটামির ডি যুক্ত খাবার খেয়েছি। সাথে সাথে ঘরোটা টিপস দারুন ভাবে কাজে লেগেছে বলে আমি মনে করি, রিপোর্ট পজিটিভ পাওয়ার পর থেকে আমি যে স্বাস্থ্যবিধি গুলো মেনে চলেছি সেগুলো হলো, প্রতিদিন সকালে ২০ থেকে ২৫ মিনিট শরীর চর্চা (হালকা শরীর গরম) করি। দিনে পাঁচবার গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করি। (যত সম্ভব গরম সহ্য করা যায়)। স্বাভাবিক পানির পরিবর্তে কুসুম গরম পানি পান করি। সকাল সন্ধ্যা লবণ, তেজপাতা ও আদা দিয়ে চা তৈরি করে পান করছি।
আমি প্রশাসনিক ভাবে সাহায্য পেয়েছি, আমি কৃতজ্ঞ আমাদের উপজেলায় দায়িত্বশীল পরিবার পরিকল্পনা অফিসার সুদীপ বালা ডাক্তার দাদার কাছে। তার ব্যবহার সত্যি আমি মুগ্ধ হয়েছি। সে নিয়মিত আমার খবরা খবর রেখেছে। দাদার অনুপ্রেরণায় আমি নিজের মনোবল ও সাহস পেয়েছি।
দেখুন, করোনা এখন বহির বিশ্বে ছাড়িয়ে, আমাদের দেশের বিভিন্ন প্রান্তে জালের মত ছড়িয়ে পড়েছে, উপসর্গ ও উপসর্গহীন প্রচুর করোনা রোগী ঘুরে বেড়াচ্ছে আমাদের চারপাশে, বিধিনিষেধ ও সামাজিক দুরত্ব মানছে না অনেকেই। সর্বোচ্চ সতর্ক থাকলেও করোনায় আক্রান্ত হতে পারে যে কেউই। কিছু নিয়ম কানুন আমাদের সবার মেনে চলা উচিত। নিয়মিত মাস্ক ব্যবহার করুন, হাঁচি ও কাশির শিষ্টাচার মেনে চলুন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, জরুরী দরকার না থাকলে ঘরে থাকুন, নিরাপদে থাকুন। নিজের এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্যে এগুলোর কোন বিকল্প নেই। আর প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে ঠান্ডা পানীয় ও খাবার থেকে দুরে থাকুন। সারা দিনে বেশি বেশি কুসুম গরম পানি ও আদা, লেবু দিয়ে বাড়িতে বসে চা পান করুন। ইনশাল্লাহ করোনা প্রতিরোধে জয় আমাদের হবেই।