নবীগঞ্জে সহপাঠিদের ছুরিকাঘাতে প্রাণ গেছে রাইসুল হক তাহসিন (১৯) নামে এক কলেজ ছাত্রের।

প্রকাশিত: ৫:১৬ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৯, ২০২৪

এম.মুজিবুর রহমান: নবীগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ নবীগঞ্জে সহপাঠিদের ছুরিকাঘাতে প্রাণ গেছে রাইসুল হক তাহসিন (১৯) নামে এক কলেজ ছাত্রের। তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। এ ঘটনায় শহরজুড়ে আতঙ্ক-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। ঘটনার সাথে জড়িতদের ধরতে পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়েছে। গ্রেফতার এড়াতে জড়িতরা গা ঢাকা দিয়েছে।
এঘটনা নিয়ে বুধবার দিনব্যাপী নবীগঞ্জ শহরজুড়ে আলোচনা ও উৎকণ্ঠা বিরাজ করে। সন্ধ্যায় নবীগঞ্জ জেকে উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে নবীগঞ্জ শহরের ওসমানী রোডস্থ চৌদ্দহাজারী মার্কেটের সামনে ঘটনা ঘটে।

নিহত সৈয়দ রাইসুল হক তাহসিন (১৯) নবীগঞ্জ সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র ও বানিয়াচং উপজেলার কালাইনজুড়া গ্রামের বাসিন্দা এবং নবীগঞ্জ শহরের শেরপুর রোডের রাজন ওয়ার্কশপের সত্ত্বাধিকারী সৈযদ রাজন মিয়ার ছেলে। সালামপুলে বাসা ভাড়া নিয়ে তারা বসবাস করে।
প্রত্যক্ষদর্শী নিহত রাইসুল হক তাহসিন সহপাঠী ও খালাতো ভাই ঘটনায় আহত নিয়াল আহমেদ মাহি জানান, নবীগঞ্জ সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী রাইসুল হক তাহসিন, নিয়াল আহমেদ মাহি, মারুফ আহমেদ, মিনহাজ আহমেদ, মান্না আহমেদ, রাতুল আহমেদ ও প্রান্তিক সহ আরো কয়েকজনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তারা একে অপরের সহপাঠি হিসেবে এক সাথে চলাফেরা করে। প্রায় ৫ মাস পূর্বে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাইসুল হক তাহসিন ও মান্না আহমেদের মধ্যে মনোমালিন্য দেখা দেয়। এতে তাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে তাদের বিরোধ চরম আকার ধারণ করে। বন্ধুরাও দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। এক পক্ষে তাহসিন, মাহি, মারুফ, মিনহাজসহ অন্যরা অপর দিকে মান্না, রাতুল, প্রান্তিক বিভক্ত হয়ে পড়ে। ওসমানী সড়কের হেভলু আহমদের ছেলে মান্নার বলয়ে যোগ দেয় রিহাদ, জুয়েল, সাফি, রিমন সহ অন্যরা। এরপর থেকে বিভিন্ন স্থানে পৃথকভাবে এদের নিয়ে আড্ডা দিতো তাহসিন ও মান্না। মঙ্গলবার তাহসিনের বন্ধু মারুফ ও মান্নার বন্ধু প্রান্তিকের মধ্যে থুথু ফেলাকে কেন্দ্র করে বাকবিতণ্ডা হয়। পরে সিনিয়রদের হস্তক্ষেপে তাৎক্ষনিক বিষয়টি সমাধান হয়।

নিয়াল আহমেদ মাহি আরো জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর নবীগঞ্জ শহরের রাজা কমপ্লেক্সের ফুড কর্ণারে তাহসিন বসা ছিল। এ সময় মান্না তার দলবল নিয়ে তাহসিনের উপর উপর হামলা চালায়। এসময় স্থানীয় লোকজন গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন। পরে তাহসিন, মাহি, মারুফ, মিনহাজ নবীগঞ্জ পৌরসভা প্রাঙ্গণে বইমেলায় ঘুরাঘুরি করে। কিছু সময় অবস্থানের পর বইমেলা থেকে ইজিবাইক (টমটম) যোগে ফেরার পথে ওসমানী রোডের চৌদ্দহাজারি মার্কেটের সামনে নেমে পড়ে। এরই মাঝে সেখানে উপস্থিত হয় মান্নাসহ তার সহযোগী কয়েকজন।
এক পর্যায়ে চৌদ্দহাজারি মার্কেটের সামনে তাহসিন ও মান্নার পক্ষের যুবকরা বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় তাহসিন ও মাহিছুরিকাঘাতে আহত হয়। মান্নার পক্ষের জুয়েলও আহত হয়। স্থানীয় লোকজন গুরুতর আহত তাহসিনকে উদ্ধার করে নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে সিলেট প্রেরণ করেন। অ্যাম্বুলেন্স যোগে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথিমধ্যে তাহসিন মারা যায়।
এ প্রসঙ্গে নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাসুক আলী বলেন- পূর্ববিরোধের জের ধরে চৌদ্দহাজারি মার্কেটের সামনে তাহসিন, মাহিদের উপর হামলা করে মান্নাসহ ৭-৮জন। পরে তাহসিনকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। সিলেটে তাহসিন মারা যায়। এঘটনায় এখনো মামলা দায়ের হয়নি। তবে জড়িতদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে৷




error: Content is protected !!