মোঃ সাগর আলী, নীলফামারী ঃ
নীলফামারীর ডিমলায় ভূমিদস্যু ও জাল দলিল চক্রের মূলহোতাদের গ্রেফতারের দাবিতে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে গনস্বাক্ষরে লিখিত অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী।
অভিযুক্তরা হলেন, মাজেদুল ইসলাম,হাফিজুল ইসলাম, রনজিৎ ভুইমালী,মাহবুব জামান,ময়েন কবীর ও জাহাঙ্গীর আলম সহ অজ্ঞাত ১৫/২০ জন।
জানা যায়, গত শুক্রবার(১১নভেম্বর) এই জাল দলিল চক্রের মাজেদুল ইসলাম ও রফিকুল ইসলামসহ ৩ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ডিমলা পুলিশ। তাঁদের কাছে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ আমলের শতাধিক সরকারি স্ট্যাম্প ও দলিল জাল করার উপকরণসহ বিভিন্ন জেলার কর্মকর্তা, সাব-রেজিস্ট্রার ও ভূমি অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জাল সই-সংবলিত ১৬৫টি সিল জব্দ করা হয়।
অভিযোগ ও ভুক্তভোগী সূত্রে জানা যায়, ভুমিদস্যু ও জাল দলিল চক্রের মুলহোতা মাজেদুল,রনজিৎ ও ময়েন কবিরগং দলিল জালিয়াতি থেকে শুরু করে ভূমি দখল, রেকর্ড জালিয়াতি, ভুয়া নামজারি করে রেজিস্ট্রির ব্যবস্থা করে দেওয়া এমন অসংখ্য অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ,তারা জাল দলিলের মাধ্যমে অন্যের ভূমি দখল করে চলেছেন।একইসঙ্গে জাল দলিল বানিয়ে অন্যকেও জমি দখল করার ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। বিনিময়ে হাতিয়ে নিয়েছে বড় অংকের টাকা। শুধু তাই নয়, তারা প্রতিনিয়ত নিজের জন্য বা টাকার বিনিময়ে অন্যের জন্য রেকর্ড জালিয়াতি, ভুয়া পর্চা, খতিয়ান ও নামজারিও করে আসছেন। তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ মানুষ।
তাদের দখলবাজির শিকার হয়ে এই চক্রের বিরুদ্ধে জাল দলিলের মামলাও করেছেন অনেকে। ইতোমধ্যে এই জাল দলিল চক্রের প্রতারণামুলক ভাবে সৃষ্টি করা ৩০০/২০১৮-১৯ নং নামজারিসহ ২৪৩৪ নং হোল্ডিং বাতিল করে দেয় উপজেলা ভুমি অফিসের সহকারী কমিশনার ইবনুল আবেদীন।এছাড়াও এই চক্রের আরো দুটি জাল দলিল বাতিল করে দেয় রংপুর সাব রেজিস্টার।
এলাকাবাসীর দাবি,এরপরও এই ভুমিদস্যু ও জাল দলিল চক্রের অপকর্ম-জালিয়াতি কমছে না, বরং বাড়ছে দিন দিন।এতে এলাকার প্রকৃত জমির মালিকরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ছে।
এছাড়া সুকৌশলে সাধারণ মানুষের মধ্যে জমি নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি করা এই চক্রের আরেকটি জালিয়াতির পদ্ধতি। এভাবে তারা উভয়পক্ষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ধান্দা বাস্তবায়ন করেন। একইসঙ্গে খাস জমি লিজ পাইয়ে দেওয়ার নাম করে নিম্ন আয়ের সহজ-সরল মানুষকে ঠকানোও চক্রের একটি কাজ।
ভুক্তভোগীরা জানায়, এ কাজে তাদের সঙ্গে আছে একটি প্রভাবশালী চক্র। আর এ চক্রের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ময়েন কবির। নিজেকে সংবাদ কর্মী পরিচয় দেন তিনি। তার সঙ্গে কর্মকর্তাদের অনেকের যোগাযোগ আছে। আর এ সুবাদেই চলে তাদের এসব অপকর্ম।
এছাড়া ভূমি সংক্রান্ত মামলা-মোকদ্দমাও তাদের হাত দিয়েই বেশি চলে। এমনকি অভিযোগ আছে, কেউ যদি জায়গা বিক্রি করতে চান, তাহলে তাদের একটা পরিমাণ টাকা আগে দিতে হয়। না হলে রেজিস্ট্রি করার সময় ঝামেলা লাগিয়ে দেবেন বলে হুমকি দেন।
জানা গেছে, ভূমির সব পর্যায়ের জাল কাগজপত্র, স্ট্যাম্প, সিলমোহর আছে তাদের কাছে। এমনকি জাল স্ট্যাম্প, ভূমি কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের নামে নকল করা সিল ও জাল স্বাক্ষরের ব্যবস্থাও আছে এই চক্রের কাছে। একইসঙ্গে পুরোনো দিনের বিভিন্ন আমলের স্ট্যাম্পও আছে জাল দলিল চক্রের এই চক্রের হাতে।
ভুক্তভোগী সেনাসদস্য(অব: সার্জেন্ট) তহিদুল ইসলাম জানান, ময়েন কবির ও তার ভায়রা আনারুল জাল দলিল করে আমার ২৬ বিঘা জমি দখল করে নিয়েছে। এরা রাতের আধারে জমি দখল কাজে বাড়ীর মহিলাদের ব্যাবহার করে।
ভুক্তভোগী বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুনুর রশিদ ও মহুবার রহমান বলেন, ময়েন – মাজেদ গং এলাকায় ভূমিদশ্যু, এমনকি এরা মৃত্যু ব্যাক্তিদের নামেও জাল দলিল বানায়।তাদের এই কাজে রংপুর সাব রেজিস্টার অফিসের কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত। তাদের নির্দিষ্ট কোনো আয়ের উৎস নেই। জাল-জালিয়াতি করেই তারা রাজার হালে চলেন।
আরেক ভুক্তভোগী মশিয়ার রহমান জানান, ২০০৯ সালে ৪৫৭ দাগে বাবুরহাট মৌজায় হোসেন আলীর নিকট ১৫ শতাংশ জমি ক্রয় করি।দীর্ঘ ১১ বছর ধরে আমার ভোগদখলে থাকা জমি গত ১৯ ডিসেম্বর ২০২১ গভীর রাতে ময়েন এর নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী টিনের চালার ঘর উঠিয়ে দখল করে নেয়।পরে তাদের দলিলটি জাল প্রমাণের জন্য উপজেলা ভুমি অফিসে অভিযোগ করি। সেই অভিযোগে সহকারী কমিশনার (ভূমি)তাদের নামজারিসহ হোল্ডিং বাতিল করে দেয়।
একই অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী ও স্থানীয় বাসিন্দারা নুর আমিন, আলতাফ হোসেন, জাহাঙ্গীর আলমসহ অনেকে
এ ব্যাপারে অভিযুক্তদের একজন হাফিজুল ইসলাম বলেন, এসব মিথ্যা বানোয়াট অভিযোগ। আমি রনজিৎ ভুইমালীর কাছে জমি কিনেছি । রনজিৎ ভুইমালীর সাথে অনেকের জমিজমা নিয়ে বিরোধপূর্ন মামলা চলছে ।তারাই একজোট হয়ে এসব অপপ্রচার চালাচ্ছে আমাদের বিরুদ্ধে।
জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, জাল দলিল চক্রের বিষয় অবগত আছি। আমরা সবসময়ই এর বিরুদ্ধে কঠোর। জাল দলিল চক্র ও ভুমিদস্যুদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। খুব শীঘ্রই এই পুরো চক্রটিকে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।