সিলেটের সংরক্ষিত নারী আসন নিয়ে ঢাকায় জোর লবিংয়ে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা
আবুল কাশেম রুমন,সিলেট: সিলেটের সংরক্ষিত নারী আসন নিয়ে ঢাকায় জোর লবিংয়ে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। নিজ নিজ জায়গা থেকে কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে হর হামেশা চলছে লবিং। সিলেট বিভাগে সংসদীয় আসন ১৯টি, আর সংরক্ষিত নারী আসন রয়েছে দুটি। এ বিভাগ থেকে দুই সংরক্ষিত আসনের জন্য অন্তত ১৪ জন নারী নেত্রী জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। তারা সকলেই আওয়ামী লীগের নেত্রী।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেটের ১৯টি আসন থেকে এবার ৪ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তাদের মধ্যে তিনজন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তবে সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য হতে স্বতন্ত্র এসব এমপিদের কোনো অনুসারীরা এখন পর্যন্ত তৎপরতা দেখাননি। ফলে আওয়ামী লীগ থেকেই এবার দুই নারী সংসদ সদস্য হতে যাচ্ছেন বলে ধারণা স্থানীয়দের।
সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য হিসেবে আলোচনায় আছেন সিলেট জেলার সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের স্ত্রী আসমা কামরান। তিনি জেলা মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকদের দায়িত্বে রয়েছেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বীরমুক্তিযোদ্ধা ইফতেখার হোসেন শামীমের স্ত্রী ও মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী নাজনিন হোসেনের নামও রয়েছে আলোচনায়। নাজনীন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সিলেটের সভাপতি ছিলেন।
এমপি হতে তৎপরতা চালাচ্ছেন মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য ও সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য সাবিনা সুলতানা, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিলেট সিটি করর্পোরেশনের সংরক্ষিত ১ নম্বর ওয়ার্ডেও কাউন্সিলর অ্যাডভোকেট সালমা সুলতানা এবং যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আলেয়া সারোয়ার ডেইজি। এদের মধ্যে সালমা সুলতানা আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দা জেবুন্নেসা হকের মেয়ে এবং ডেইজি কেন্দ্রীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। ফলে দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে তারা যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন বলে জানা গেছে। জেবুন্নেছা হকও এমপি হতে তৎপতা চালাচ্ছেন বলে দলীয় একটি সূত্র জানিয়েছে।
এ ব্যাপারে নাজনীন হোসেন বলেন, ‘আমি ও আমার পরিবার আজীবন আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে আসছি। আমার স্বামী সিলেটে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, কিন্তু বিনিময়ে আমরা কখনও কিছু চাইনি। এখন দলীয় প্রধান যদি বিবেচনা করেন তবে মানুষের উন্নয়নে সবটুকু দিয়ে কাজ করার চেষ্টা করব।
সুনামগঞ্জ জেলা থেকে সংরক্ষিত সদস্য হওয়ার দৌঁড়ে আছেন জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য শামসুন্নাহার বেগম শাহানা রব্বানী। এ তালিকায় আরও আছেন কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় নেত্রী ও বর্তমান সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য শামীমা আক্তার খানম যিনি শামীমা শাহরিয়ার নামে পরিচিত। এ ছাড়া সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল হুদা মুকুটের স্ত্রী জেলা মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী হুসনা হুদা, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আজিজুস উস সামাদ ডনের স্ত্রী মুমতাহিনা রিতুও আছেন আলোচনায়।
মৌলভীবাজার জেলা থেকে সংরক্ষিত আসনে মনোনয়নের লড়াইয়ে আছেন সংরক্ষিত আসনের বর্তমান সদস্য সৈয়দা জোহরা আলা উদ্দিন। জোহরা বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত মো. আলা উদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রী। এ ছাড়া মনোনয়ন চাইতে পারেন সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী প্রয়াত সৈয়দ মহসিন আলীর স্ত্রী ও মৌলভীবাজার-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দা সায়রা মহসিন। মহসিন আলী ও সায়রা দম্পতির মেয়ে যুবলীগের নেত্রী সৈয়দা সানজিদা মহসীনও সংরক্ষিত আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী বলে জানা গেছে।
হবিগঞ্জ জেলা থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে মনোনয়ন চান সাবেক সংসদ সদস্য ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ইসমত আহমদ চৌধুরী এবং সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবেদা চৌধুরীর মেয়ে ডা. নাজরা চৌধুরী। তিনি সিলেট ও হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক উপকমিটির সঙ্গে সম্পৃক্ত নাজরা। তিনি সিলেট নগরীর কাজীটুলা এলাকার বাসিন্দা।
এ ব্যাপারে নাজরা চৌধুরী বলেন, রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমি জনগণের সেবা করার সুযোগ চাই। আমার পুরো পরবারই আওয়ামী লীগের জন্য নিবেদিত প্রাণ। তাই আশা করছি, নেত্রী ও দল আমাকে মূল্যায়ন করবে।
নিয়ম অনুযায়ী সাধারণ নির্বাচনের ফলাফলের গেজেট প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের গেজেট হয়েছে গত ৯ জানুয়ারি।