লক্ষ কোটি তৌহিদী জনতার হৃদয়স্পন্দন আল্লামা শাহ্ আহমদ শফির ইন্তেকাল
আসলাম পারভেজ, হাটহাজারী। বাংলাদেশের ইসলামি শীর্ষ ব্যক্তিত্বদের একজন ছিলেন শাহ আহমদ শফী; যিনি আল্লামা শাহ আহমদ শফী বা আল্লামা শফী নামেও পরিচিত। বহুল আলোচিত সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও আমির ছিলেন তিনি। একইসঙ্গে ছিলেন সর্বোচ্চ ক্বওমি শিক্ষাবোর্ড “বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের” চেয়ারম্যান। এছাড়া তিনি আল জামেয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মইনুল ইসলাম মাদ্রাসার (হাটহাজারী বড় মাদ্রাসা নামে পরিচিত) মহাপরিচালক ছিলেন।
আল্লামা শফীর জন্ম ১৯৩০ খ্রীষ্টাব্দ মোতাবেক ১৩৫১ হিজরী সনে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থানার পাখিয়ারটিলা গ্রামে। পিতার নাম: বরকত আলী। মাতা: মুসাম্মাৎ মেহেরুন্নেছা বেগম। তিনি ১০ বছর বয়সে হাটহাজারী মাদ্রাসায় ভর্তি হন। ১৯৪১ মালে ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসাতে চার বছর হাদিস, তাফসির, ফিকাহ শাস্ত্র কৃতিত্বের সাথে অধ্যয়ন করেন। এবং তিনি সেখানে হোসাইন আহমদ মাদানী রঃ এর অন্যতম খলীফা হিসেবে মনোনীত হন। ১৯৪৬ সালে তিনি দেওবন্দ থেকে ফিরে এসে হাটাহাজারী বড় মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। এবং দরসে নেজামীর প্রায় সকল কিতাব দক্ষতার সাথে পড়ান। ১৯৮৬ সালে হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক পদে যোগ দেন তিনি। এরপর থেকে টানা ৩৪ বছর ধরে তিনি ওই পদে ছিলেন। ২০০৮ সালে তিনি কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন পান এবং অদ্যাবধি দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারী তিনি হেফাজতে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেন এবং সর্বসম্মতিক্রমে আমির নিযুক্ত হয়ে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।২০১৭ সালে তার সঙ্গে বৈঠকের পর কওমির সনদের স্বীকৃতি এবং সুপ্রিম কোর্ট থেকে ভাস্কর্য অপসারণের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক হিসেবে কওমি মাদ্রাসাগুলোর নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন আল্লামা শাহ্ আহমদ শফী,
বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে অসুস্থ হয়ে পড়েন আল্লামা শফী। রাতে অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সকালে হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা মেডিকেল বোর্ড বসেন। শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় বিকেলে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। সন্ধ্যায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। আগামীকাল শনিবার বাদ যোহর হাটহাজারী মাদ্রাসা ময়দানে জানাযা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
বাংলায় ১৩টি ও উর্দুতে নয়টি বইয়ের রচয়িতা তিনি। ক্বওমি আলেম সমাজ এবং সাধারণ মানুষের কাছে খুব শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন।
তার রচিত গ্রন্থাবলী উর্দু: ফয়জুল জারী (বুখারীর ব্যাখ্যা) আল-বায়ানুল ফাসিল বাইয়ানুল হক্ব ওয়াল বাতিল
ইসলাম ও ছিয়াছাত। ইজহারে হাকিকাত সহ বহু প্রবন্ধ ও গন্থ লিখেছেন। তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন হাটহাজারী থেকে নির্বাচিত জাতীয় সাংসদ ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এম.পি, চট্টগ্রাম জেলা পরিশদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের উত্তরজেলা সভাপতি এম. এ সালাম। হাটহাজারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান উত্তরজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এস.এম রাশেদুল আলম। ও সাবেক মন্ত্রী মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন। মেজর জেনারেল ইবরাহীম (বীর প্রতিক)। বি.এন.পি নেতা এস.এম ফজলুল হক। চট্টগ্রাম উত্তরজেলা বি.এন.পির আহবায়ক কমিটির সদস্য ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী জমিতির সদস্য ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা , সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম চৌধুরী। হাটহাজারী ইউপি চেয়ারম্যান সমিতির সভাপতি হাসানুজ্জামান বাচ্চু ও সাধারণ সম্পাদক নুরুল আহছান লাভু হাটহাজারী প্রেসক্লাব, ফটিকা নিউ যুব সংগঠন সহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা আল্লামা শাহ্ আহমদ শফীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন।