বৃন্দাবন সরকারি কলেজে ২২ বছর ধরে নেই ছাত্র সংসদ নির্বাচন

প্রকাশিত: ৩:৫৩ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৯, ২০২০

মোঃ জামাল হোসেন লিটন,হবিগন্জ প্রতিনিধিঃ হবিগঞ্জ বৃন্দাবন সরকারি কলেজে ২২ বছর ধরে ছাত্র সংসদ (বৃকসুর) নির্বাচন হচ্ছে না। ১৯৯৮ সালে সর্বশেষ বৃকসু নির্বাচন হয়েছিল। ২২ বছর ধরে নির্বাচন না হওয়া য় কলেজে ছাত্রদের অধিকার ক্ষুন্ন হচ্ছে বলে মনে করেন সংসদের সাবেক নেতারা। তাদের দাবি দলীয় স্বার্থে ওপরে সাধারণ স্বার্থকে স্থান দিয়ে বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলো ছাত্র সংসদের ব্যবস্থা করবেন।

সাধারণ ছাত্ররা বৃকসু নির্বাচন দাবি করলেও তাদের দাবি উপেক্ষা করছে কলেজ কৃর্তপক্ষ। ৬/৭ বছর পূর্বে সাধারণ শিক্ষার্থীসহ ছাত্রলীগ ও ছাত্রদল নির্বাচনের জন্য সোচ্চার হয়ে উঠলে কলেজ কর্তৃপক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থা করার আশ্বাস দেয়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে সে আশ্বাসের বাস্তবায়ন হয়নি। গত ডাকসুর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর আশাবাদী হয়ে উঠেছিলো শিক্ষার্থীরা। কিন্তু আশার গুড়ে বালি হয়ে নিরাশার এক অবস্থার সংকটময় পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

কলেজে ছাত্রদের অধিকার রক্ষার স্থানই ছাত্র সংসদ। এটি ছাত্র নেতৃত্ব বিকাশের একটি সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র। দেখা গেছে, অতীতে যারা বৃকসুর নেতৃত্ব দিয়েছেন তারা পরে জাতীয় ও জেলার রাজনীতির বিভিন্ন পর্যায়ে নেতৃত্বে দিয়েছেন। অথচ প্রায় ২২ বছর ধরে এই বৃকসুকেই অকার্যকর করে রাখা হয়েছে। কলেজের অধ্যাদেশ অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময় পরপর ছাত্র সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। কিন্তু এর ব্যত্যয় ঘটছে রাজনৈতিক কারণে।

সাধারণ ছাত্রদের প্রশ্ন, কার স্বার্থে বৃকসুর নির্বাচন আটকে রাখা হয়েছে। তাদের অভিযোগ রয়েছে, বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলো ও কলেজের গুটি দু’য়েক শিক্ষক চায় না ছাত্র সংসদ নির্বাচন হোক। তাদের চাওয়া পূরণ করতেই কলেজ কর্তৃপক্ষ ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেয় না। ছাত্র সংসদ নির্বাচনে বড় দু’দলের একচ্ছত্র কর্তৃত্ব থাকে না। এমনকি অনেক সময় তারা ছাত্র সংসদের নেতৃত্বেও আসতে পারে না। নির্বাচিত ছাত্র সংসদ থাকলে কলেজের ছাত্রদের ওপর রাজনৈতিক দলগুলোর অঘোষিত নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয় না। আবার বড় রাজনৈতিক দলগুলোর লেজুড়বৃত্তি করে ছাত্র সংগঠনগুলোর কলেজভিত্তিক নানা বাণিজ্যেও ব্যাঘাত ঘটে। তাই তারাও ছাত্র সংসদ নির্বাচন চান না।

সাধারণ শিক্ষার্থীদের আরো অভিযোগ, ছাত্র সংসদ নির্বাচন হলে গুটি দুয়েক শিক্ষকের আধিপত্য কমে যাবে এ আশঙ্কায় তারা নির্বাচন চান না। তাদের অভিযোগ যদি ছাত্র সংসদ থাকত তাহলে সাবেক অধ্যক্ষ বিজিত কুমার ভট্টাচার্য ও ক্যাশিয়ার বাবুল এত টাকা আত্মসাৎ করতে পারত না।

এ ব্যাপারে বৃন্দাবন সরকারি কলেজের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অধ্যাপক বলেন, সরকারি নিদের্শনা আসলেই ছাত্র সংসদ নিবার্চন দেয়া হবে। ছাত্র সংসদের নামে প্রতি বছর যে চাঁদা উঠানো হয় এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন এ টাকা যথাযথা ফান্ডে রাখা হয়।

বৃকসুর সাবেক জি এস আবু হেনা মোস্তাফা কামাল বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছাত্র সংসদ নির্বাচন। তারপরও কলেজে নির্বাচন না হওয়া অত্যন্ত লজ্জাজনক বিষয়। সেনা শাসকদের আমলেও যেখানে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়েছে, সেখানে গণতান্ত্রিক শাসন আমলে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হবে না, সেটা মেনে নেয়া যায় না। সাধারণ শিক্ষার্থীরা নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করলেও নির্বাচন দেয়নি কলেজ কৃর্তপক্ষ। তিনি আরও বলেন প্রতি বছর ছাত্র সংসদের নামে টাকা উঠানো হয়। এ টাকা কোথায় যায়। বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলো দলীয় স্বার্থে উপরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বার্থকে স্থান দিয়ে ছাত্র সংসদের ব্যবস্থা করবেন এ আশা করি।

জেলার রাজনৈতিক সংগঠনের শীর্ষ নেতারা বলেছেন, ছাত্র সংসদ নির্বাচন সকল শিক্ষার্থীদের দাবি। কয়েক বছর পূর্বে নির্বাচনের দাবিতে কলেজে সকল শিক্ষার্থীদের নিয়ে আন্দোলন হয়েছিল। তৎকালীন অধ্যক্ষ রাজনৈতিক পরিবেশ শীতল হলে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে আর ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়নি।




error: Content is protected !!