গণধর্ষণের মূল হোতা সেই আশিক মাদারীপুর থেকে গ্রেফতার, গ্রেফতার এড়াতে দাড়ি-গোফ-ভ্রু কেটেও র‍্যাবের হাত থেকে রেহাই পাননি।

প্রকাশিত: ৩:৪৯ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৭, ২০২১

উমার,রাযী,কক্সবাজার

কক্সবাজারে স্বামী-সন্তানকে জিম্মি করে চাঞ্চল্যকর নারী গণধর্ষণের ঘটনায় প্রধান আসামি আশিকুল ইসলাম ওরফে টর্নেডো আশিককে (৩০) মাদারীপুর থেকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব।সোমবার রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সাংবাদিকদের জানান, আশিকুল ইসলাম স্থানীয়ভাবে ‘টর্নেডো’ আশিক নামে পরিচিত। ধর্ষণের ঘটনার পর দাড়ি-গোফ, ভ্রু কেটে চেহারা বদল করে তিনি কক্সবাজার ছাড়েন।তিনি জানান, ঘটনার পর পর গণমাধ্যমে ছবি প্রকাশ হওয়ায় আশিক দাড়ি-গোফ কেটে, ভ্রু প্লাক করে কক্সবাজার থেকে এসি বাসে প্রথমে ঢাকায় আসে। পরে আরেকটি বাসে মাদারীপুরে এক আত্মীয়ের বাসায় যায়। সেখান থেকে কুয়াকাটায় গিয়ে আত্মগোপনের পরিকল্পনা ছিল তার। তবে কুয়াকাটা যাওয়ার চেষ্টাকালে রোববার রাতে মাদারীপুরের মোস্তফাপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে তাকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আশিক তরুণীকে ধর্ষণ ও তার কাছ থেকে চাঁদা চাওয়ার কথা স্বীকার করেছে।ধর্ষণের স্বীকার ওই দম্পতির সন্তানের বয়স মাত্র আট মাস। হার্টে ছিদ্র নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। ছোট্ট বাচ্চার উন্নত চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা প্রয়োজন। আর তা সংগ্রহের জন্য স্বামী আর সন্তানকে নিয়ে ওই গৃহবধূ পর্যটন নগরী কক্সবাজারে তিন মাস যাবত অবস্থান করছিলেন। পাশাপাশি টাকার জন্য বিভিন্ন অপরাধেও জড়িয়ে পড়েন।ওই দম্পতির বিষয়টি জানতে পেরে ওই নারী ও তার স্বামীর কাছে টাকা দাবি করে গ্রেফতার আশিকুর রহমানসহ তার সংঘবদ্ধ চক্রটি।র‌্যাব আরও জানায়, গ্রেফতারকৃত আশিক কক্সবাজারে পর্যটক এলাকায় একটি সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের মূলহোতা। এই চক্রের সদস্য সংখ্যা ৩০-৩৫ জন। গ্রেফতারকৃত বিগত ২০১২ বছর হতে কক্সবাজার পর্যটক এলাকায় বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। সে ২০১৪ সালে প্রথমবার অস্ত্রসহ গ্রেফতার হয়েছিল বলে জানিয়েছে। আশিক ও তার সিন্ডিকেট পর্যটন এলাকা কক্সবাজারে চুরি, ছিনতাই, অপহরণ, জিম্মি, চাঁদাবাজি, জবরদখল, ডাকাতি ও মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন ধরণের অপরাধ কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত। সে পর্যটন এলাকায় বিভিন্ন হোটেলে ম্যানেজারের সঙ্গে যোগসাজশে ট্যুরিস্টদের ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেইল করত।র‌্যাব জানায়, আশিক পর্যটন এলাকা কক্সবাজারে আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন রকম জবরদখল ও অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িত রয়েছে। সে পর্যটন এলাকার সুগন্ধা নামক স্থানে ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্ট জোরপূর্বক কম টাকা দিয়ে ভাড়া নিয়ে ক্ষেত্রে বিশেষে দ্বিগুণ ও তিনগুণ ভাড়া সংগ্রহ করে মূল মালিকদের বঞ্চিত করে থাকে। গ্রেফতারকৃত বিভিন্ন ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি অবৈধ দখল করে ও চাঁদা দাবি করে থাকে। তার চক্রের সদস্যরা রাত্রিকালীন সি-বিচে আগত ট্যুরিস্টদের হেনস্তা, মোবাইল ছিনতাই, ফাঁদে ফেলা ও নিয়মিত ইভটিজিং করত। পাশাপাশি হোটেল-মোটেল জোনে বিভিন্ন ট্যুরিস্টদের সুযোগ বুঝে ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ আদায় করত। তার নামে ইতোমধ্যে কক্সবাজার সদর থানায় অস্ত্র, মাদক, নারী নির্যাতন ও চাঁদাবাজিসহ ১২ মামলা চলমান রয়েছে। ইতিপূর্বে সে ৫ বার পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছে এবং দীর্ঘদিন কারাভোগ করেছে।এর আগে এই ঘটনায় জড়িত অভিযোগে কক্সবাজার থেকে তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতার তিনজন হলো শহরের দক্ষিণ বাহারছড়ার রেজাউল করিম সাহাবুদ্দিন (২৫), চকরিয়ার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের উলুবুনিয়ার মামুনুর রশিদ (২৮) ও পশ্চিম বাহারছড়া এলাকার মেহেদী হাসান (২৫)।




error: Content is protected !!