মো: সাগর আলী, নীলফামারী: বছরের প্রথম দিন পাওয়া নতুন বইয়ের মতো স্কুলের নতুন ভবনের আকর্ষণও কম নয়। তেমনি দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকিপূর্ণ অবকাঠামো আর বটগাছের নিচে ক্লাস করার পর, এবার নতুন ভবনে পাঠগ্রহণের আনন্দে ভাসছে নীলফামারী সদর উপজেলার চাপড়া সরমজানী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তবে পুরোপুরি নতুন ভবন নয়! বিদ্যালয়টির বেহাল দশা কাটিয়ে উঠতে উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় পুরাতন জরাজীর্ণ একটি ভবন সংস্কার করে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে পাঠদানের যথাযথ পরিবেশ।
১৯৩৯ সালে প্রতিষ্ঠা লাভের পর বিদ্যালয়টি একটি একতলা পাকা ভবন পায় ২০০৬ সালে। তবে বেশ কয়েক বছর হলো নতুন পাকা ভবনটি পাঠদানের অনুপযোগী হয়েছে। পাশেই ছিল আরেকটি জরাজীর্ণ দোচালা টিনের ঘর। দুই ভবনের একটি ব্যবহারের অনুপযোগী আরেকটি জরাজীর্ণ। জরাজীর্ণ দোচালা ঘরটির ছাদ নষ্ট হয়েছিল। খুলে পরছিল পলেস্তারা। নীলফামারী শহর হতে প্রায় ১৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বিদ্যালয়টিতে ছিলো না কোন শিক্ষা উপকারণ, ব্রেঞ্চ, চেয়ার কিংবা টেবিল। বৃষ্টি আসলেই বন্ধ থাকতো ক্লাস। ফলে কমে আসছিল উপাস্থিতির হারও।
এখন জরাজীর্ণ ভবনটিকে করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন। স্কুলটির আধা পাকা ভবনটির পুরানো টিনের ছাউনি পরিবর্তন করে লাগানো হয়েছে রঙ্গীন টিন। রং করা হয়েছে ভিতর ও বাহিরের অংশে। আধুনিক ভাবে সাজানো হয়েছে শিক্ষকদের বসার স্থান। উন্নত করা হয়েছে ক্লাশ রুম গুলো। পরিপাটি একটি পরিবেশে নিশ্চিত করা হয়েছে এর স্যানিটেশন ব্যবস্থা। ফলে নতুন করে শিক্ষার্থীরা পড়াশুনায় উদ্যমী হয়ে উঠছে। পাঠদানে ব্যবহার করা হচ্ছে প্রযুক্তির। নীলফামারী সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জেসমিন নাহারের আর্থিক সহযোগীতা ও দিকনির্দেশনায় মৃতপ্রায় স্কুলটি পেয়েছে নতুন জীবন।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল জব্বারের নাতি পড়াশোনা করে বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে। তিনি বলেন, কিছুদিন আগে স্কুলটিতে পড়াশোনার কোন পরিবেশ ছিল না। ইউএনও মহাদয়ের সাহায্যে ভাল পরিবেশ হয়েছে। আগে ছেলে মেয়েরা ক্লাসে আসতে চাইত না। এখন পরিবেশ ভালো হওয়ায় ছেলে মেয়েরা স্কুলে আসতেছে। অভিভাবক হিসেবে আমাদেরও ভালো লাগছে।
অপর অভিভাবক বাবুল হোসেন সরকার বলেন, আগে তো চেয়ার বেঞ্চ কিছুই ছিলনা। বর্তমান সব আছে।স। স্কুলের আরেকটি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন আছে। এখন ওটাও ঠিক করার সময় এসেছে।
পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী শিমু আক্তার বলে, আগে আমাদের স্কুলের ছাদ ছিল না। বৃষ্টি পরত। আমাদের বই ভিজে যাইত।এখন আমাদের স্কুল অনেক ভাল হইছে। আমরা এখন নিয়মিত স্কুলে আসি। এবং এখন পড়াশুনা খুবই ভালো হয়। এখন আমাদের আর বই ভিজে না। চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র সৌরভ ইসলাম বলে, আগে আমাদের কিছু ছিল না এখন নতুন টিন, স্কুলে রং মাখাইছে। গরম লাগেনা ক্লাসে ফ্যান আছে। স্কুল আমাদের ভালো হইছে। এখন নিয়মিত স্কুলে আসি।
প্রধান শিক্ষক মাহফুজার রহমান বলেন, ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করি। স্কুলে যোগদান করার পর, স্কুলের অবকাঠামো খুবই নাজুক পরিস্থিতি ছিল। স্কুলে ব্রেঞ্চ ছিলনা মেঝেতে বসে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করতে হইত। শিক্ষকদের বসার কোন ব্যবস্থা ছিল না। দুইটি ভবনের একটি জরাজীর্ণ ও একটা ঝুকিপূর্ণ। বৃষ্টি বাদল আসলে রুমে বৃষ্টি পড়ত থাকা যেত না। এই অবস্থায় আমাদের এটিও মহদয়কে অবগত করি। তিনি ইউএনও স্যারের সাথে কথা বলে। ইউএনও এটি আমলে নেয়। উনি বিদ্যালয়টির দ্রুবতারা হয়ে দেখা দেয়। ওনার অর্থায়নে আজ বিদালয়ের অবকাঠামো, শ্রেণি কক্ষের ব্রেঞ্চ, শিক্ষকদের বসার টেবিল ফ্যান, আলমারি সব কিছু হয়।
তিনি আরও বলেন, এখন স্কুলে নতুন পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, এখন শিক্ষার্থীরা স্কুল মুখি হয়েছে। তারা আনন্দের সাথে স্কুলে আসছে। এমন পরিবেশে আমরাও শিক্ষার্থীদের ভালো শিক্ষা দিতে পারছি। এ জন্য ইউএনও স্যারকে ধন্যবাদ জানাই।
জানতে চাইলে নীলফামারী সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার জেসমিন নাহার বলেন, সদর উপজেলার চাপড়া সরমজানী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করে দেখি বিদ্যালয়টির অবকাঠামো পাঠদানের উপযোগী নয়। বিদ্যালয়টির সংস্কার করার জন্য টি-আর ২০২১-২২ অর্থ বছরে দুইটি বরাদ্দ দেই এবং বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থেকেও তাদের বরাদ্দ থাকে। সেই বরাদ্দ মিলিয়ে চেষ্টা করেছি বিদ্যালয়টিকে ব্যবহারর উপযোগী করে তোলার এবং শিক্ষা পরিবেশের উপযুক্ত করে তোলার জন্য। এখন বিদ্যালয়টির অবস্থা অত্যান্ত চমৎকার। এখন বিদ্যালয়টিতে শতভাগ শিক্ষার্থী স্কুল মুখী হচ্ছে। আমরা আসা করব এই উদাহরণ টাকে নিয়ে উপজেলার অনান্য যে স্কুল গুলো আছে তারাও আগ্রহী হবে। আমরা চেষ্টা করব আমাদের এখান থেকে যতদুর সম্ভব সহায়তা করা যায়।