অতিরিক্ত ট্রান্সফ্যাট গ্রহণে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ে। এর ক্ষতির দিক বিবেচনা করে অনেক দেশে খাদ্যে ট্রান্সফ্যাট নিয়ন্ত্রণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
এসব তথ্য বিবেচনায় নিলেই স্পষ্ট হয় ট্রান্সফ্যাট বিষয়ে কেন বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যে কোনো খাবারে ট্রান্সফ্যাটের সর্বোচ্চ মাত্রা মোট ফ্যাটের ২ শতাংশ পর্যন্ত সীমিত রাখার পরামর্শ দিয়েছে। এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে ইতিমধ্যে বিভিন্ন দেশে নানা রকম পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
আমাদের দেশেও খাদ্যে ট্রান্সফ্যাট নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া দরকার। গতকাল যুগান্তরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, উচ্চমাত্রায় ট্রান্সফ্যাট গ্রহণে সার্বিকভাবে মৃত্যুঝুঁকি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়া হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বাড়ে।
আমাদের দেশে শিল্পে উৎপাদিত কোনো মোড়কজাত খাদ্যে ট্রান্সফ্যাটের পরিমাণ উল্লেখ করা হয় না। সম্প্রতি রাজধানীর স্থানীয় বাজারে দৈবচয়নের মাধ্যমে সংগৃহীত কয়েক ধরনের বেকারি বিস্কুট নিয়ে এক গবেষণা পরিচালিত হয়। গবেষণায় বিস্কুটগুলোড মাত্রাতিরিক্ত ট্রান্সফ্যাটের উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, একজন ব্যক্তির দৈনিক ট্রান্সফ্যাট গ্রহণের পরিমাণ হওয়া উচিত মোট খাদ্যশক্তির ১ শতাংশের কম। কাজেই যে কোনো খাবারে অতিরিক্ত ট্রান্সফ্যাটের কারণে যাতে স্বাস্থ্যঝুঁকি না বাড়ে, সেদিকে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। শিঙাড়া, সমুচা, পুরি, বিস্কুট, চানাচুর ও চিপসের মতো বেকারি পণ্য, যা আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় থাকে, সেগুলো তৈরিতেও ট্রান্সফ্যাট ব্যবহার করা হয়।
এ ছাড়া যেসব স্ট্রিটফুড কড়া করে ভাজা হয় সেগুলোয়ও ট্রান্সফ্যাট থাকে। তাছাড়া বাসায় খাবার তৈরির সময়ও ট্রান্সফ্যাট উৎপাদিত হতে পারে। কাজেই এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক করার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া দরকার। দেশের মানুষের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে ট্রান্সফ্যাটের ব্যবহার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক নির্দেশিত মাত্রায় আনতে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।
সাধারণভাবে রেস্টুরেন্টের খাবার কিংবা প্রক্রিয়াজাত যেসব খাবার প্রতিদিন আমরা খেয়ে থাকি, সেসব খাবারে কী পরিমাণ ট্রান্সফ্যাট আছে তা একজন সাধারণ ভোক্তার পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। বস্তুত এসব বিষয়ে আমাদের দেশের কতজন মানুষ সচেতন, এটাও এক বড় প্রশ্ন।
কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া আমাদের দেশে এখনও যেখানে বিভিন্ন ভোগ্যপণ্যের মোড়কে উৎপাদন, ব্যবহারের শেষ তারিখ ইত্যাদি তথ্যের উল্লেখ থাকে না, সেখানে ভোগ্যপণ্যে ক্ষতিকর উপাদান আছে কি না, এ প্রশ্ন করে অনেক ভোক্তাকে যে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হবে তাতে সন্দেহ নেই। আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় যেসব পণ্য থাকে, তা ঝুঁকিমুক্ত করার পদক্ষেপ নিতে হবে।