উমার রাযী,কক্সবাজার
বিধাতার কী অপরূপ সৃষ্টি, অপার মহিমার প্রকাশ । যতই দেখি ততই মুগ্ধ হই । তার অপরূপ সৃষ্টির অন্যতম নিদর্শন হলো মানব শিশু।
কী সুন্দর, কী অপরূপ, কী কোমল, কী মায়া, কী স্নেহ, কী মমতা ! কুসুম যেমন কোমল, তার চেয়ে অধিক তার কোমলতা, তার শোভা। যতই দেখি তৃষ্ণা মেটে না। তার স্পর্শ, তার চাহনি, তার হাঁটি, হাঁটি; পা, পা চলন, তার বলন, তার হাসি-উচ্ছ্বাস, উচ্ছলতা, তার আধো আধো বোল, হৃদয়গ্রাহী, মনোমুগ্ধকর ।
বিধাতার কী নিষ্কলুষ সৃষ্টি ! আমি মুগ্ধ, আমি বিমোহিত, সমাহিত ।
যখন নরম কোমল এক হাতে গলা জড়িয়ে, অপর হাত বুকের উপর রেখে, পরম নির্ভরতায় বুকের উপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে, তখন দেহের ভিতর এক অপূর্ব শিহরণ খেলে যায়, এক স্বর্গীয় শোভা প্রস্ফুটিত হয় ।
মনে হয় পেলাম, জগতের সমস্ত মূল্যবান রত্ন বুজি আজ আমার বক্ষে শায়িত । এর মূল্য হয় না, এ সম্পদ অমূল্য । এর নিকট ব্রহ্মাণ্ডের সমস্ত সম্পদ তুচ্ছ, মূল্যহীন । মহাকাশের সমগ্র তারকারাজি আমার বক্ষে আজ শায়িত । তার শোভার নিকট জগতের সমস্ত শোভা আজ অনাড়ম্বর। আমি যেন অবশ হয়ে যাচ্ছি, পায়ের পাতার দিকটায় শীতলতা অনুভব করছি, শরীর মনে হয় জমে যাচ্ছে । কিন্তু অন্তরাত্মা এক পরম প্রাপ্তিতে যেন পরিপূর্ণ ।
তার নরম, কোমল তুলতুলে গালে যখন চুমু খাই, তখন মনে হয় পান করলাম, এক অমৃত সুধা ।
সকল অপূর্ণতা আজ পূর্ণতা পেয়েছে, দিশাহীন জীবন পেয়েছে পথের দিশা । সকল আকাঙ্খার হয়েছে অবসান, নিশাবসান ।
হ্যাঁ অবশ্যই তাই, বিধাতা সৃষ্ট সবচেয়ে সুন্দর, কোমল ও নির্মলতম নিদর্শন হলো “ শিশু ”।
নিষ্পাপ শিশু-কিশোরদের মন খুবই সরল, কোমল ও পবিত্র। মহানবী (সা.) শিশুদের মনপ্রাণ দিয়ে ভালোবাসতেন। যেকোনো শিশুকে তিনি নিজের সন্তানের ন্যায় আদর-সোহাগ করতেন। শিশুদের কোনো ধরনের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন না করে তাদের সঙ্গে সব সময় ভালো ব্যবহারের মাধ্যমে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা দানের কথা উল্লেখ করে নবী করিম (সা.) ঘোষণা করেছেন, ‘তোমরা শিশুসন্তানদের স্নেহ করো, তাদের সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করো এবং সদাচরণ ও শিষ্টাচার শিক্ষা দাও।’ (তিরমিজি)
রাসুলুল্লাহ (সা.) মানবসন্তানকে সুশিক্ষা প্রদানের নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘সন্তানকে সদাচার শিক্ষা দেওয়া দান-খয়রাতের চেয়েও উত্তম।’ শিশুদের উত্তম ও যুগোপযোগী শিক্ষাদানের জন্য তিনি নির্দেশ প্রদান করেছেন, ‘তোমাদের সন্তানদের উত্তমরূপে জ্ঞানদান করো। কেননা তারা তোমাদের পরবর্তী যুগের জন্য সৃষ্ট।’(মুসলিম)
আদব-কায়দা ও শিষ্টাচার দ্বারাই শিশুরা প্রকৃত মানুষে পরিণত হয়। শিশুর মানসিক বিকাশের জন্য রাসুলে করিম (সা.) তাদের সঙ্গে কোমল ব্যবহার নিজে করেছেন এবং অন্যদেরও সদাচার করার নির্দেশ প্রদান করেছেন। তিনি চাইতেন শিশুরা যেন কোনো সময় কষ্ট না পায় বা নির্যাতনের শিকার না হয়। শিশুদের যেকোনো মৌলিক চাহিদা মেটাতে তিনি ছিলেন অত্যন্ত যত্নশীল। কোনো শিশু দুষ্টুমি করলে তিনি তাকে কড়া শাসন না করে হাসিমুখে শোধরানোর কৌশল গ্রহণ করতেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘোষণা করেন, ‘যে ছোটকে স্নেহ-মমতা করে না এবং বড়কে শ্রদ্ধা করে না সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (বুখারি, তিরমিজি)
সুস্থভাবে খেয়েপরে নিরাপদে বেঁচে থাকা প্রত্যেক শিশুর মৌলিক অধিকার। শিশুদের জীবন রক্ষা করার জন্য মহানবী (সা.) সর্বাগ্রে দয়ামায়াহীন আরব পৌত্তলিকদের জুলুমের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। শিশুদের যথার্থ মর্যাদায় অভিষিক্ত করে তিনি শিশুহত্যায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে বলেন, ‘তোমরা তোমাদের সন্তানদের গোপন পন্থায় ধ্বংস করবে না।’ (আবু দাউদ)
যে জাতি আপন সন্তানকে জীবিতাবস্থায় মাটিচাপা দিয়ে আনন্দ-উল্লাস করত, ইসলামের নবীর সংস্পর্শে ও হুঁশিয়ার বাণীতে তা পরিত্যাগ করে তারাও সভ্য সমাজ হয়ে ওঠে। এভাবে তিনি কোমলমতি শিশুদের পৃথিবীতে নিরাপদে বেঁচে থাকার মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ধন-সম্পদ, বংশীয় আভিজাত্য, রূপ-গুণ এবং দ্বীনদারী-এ চারটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ রেখেই মেয়েদের বিবাহ কর। কারণ একজন শিশু তাঁর মায়ের ধন-সম্পদ, রূপগুণ, বংশীয় আভিজাত্যের পাশাপাশি তাঁর দ্বীনদারীর গুণাবলীও উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়ে থাকে।’
প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তম সন্তান লাভে উত্তম নারীদের বিয়ে করার পরামর্শ দিয়েছেন। যে উত্তম নারীর গর্ভের সন্তানও হবে সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী। হাদিসে এসেছে-
“রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ধন-সম্পদ, বংশীয় আভিজাত্য, রূপ-গুণ এবং দ্বীনদারী-এ চারটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ রেখেই মেয়েদের বিবাহ কর। কারণ একজন শিশু তাঁর মায়ের ধন-সম্পদ, রূপগুণ, বংশীয় আভিজাত্যের পাশাপাশি তাঁর দ্বীনদারীর গুণাবলীও উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়ে থাকে।”
শিশুর সামাজিকীকরণের সবচেয়ে বড় মাধ্যম তার পরিবার । ভবিষ্যৎ জীবনে সে কী রকম মানুষ হয়ে গড়ে উঠবে তা নির্ভর করে, শিশুর সামাজিকীকরণ তথা পারিবারিক শিষ্টাচারের উপর । শিশুর জীবনে মায়ের ভূমিকা ব্যাপক ।
মা ও শিশুর বন্ধন আত্মিক বন্ধন । যুগ হতে যুগান্তরের কাল হতে কালান্তরের এ বন্ধন । শিশু জন্মের পর কাউকে চিনতে পারুক আর নাই বা পারুক, সে ঠিকই তার মা’কে চিনতে পারে । চিনতে পারবেই বা না কেন ? মায়ের আরেকটি সত্তাই যে তার সন্তান (শিশু)। দেহের ভিতর আরেকটি দেহ , মনের ভিতর আরেকটি মন । “ মা ” যে সন্তানের সবচেয়ে আপনজন।
সুতরাং শিশুদের প্রতি ভালোবাসা পোষণ ও উত্তম চরিত্রবান হিসেবে গড়ে তুলতে সতর্কতা অবলম্বন জরুরি। আজকে যারা শিশু তারাই আগামীতে বড় হবে এবং সমাজের দায়িত্ব গ্রহণ করবে। সে জন্য তাদের নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে এবং তাদের জাতির বড় ধরনের স্বার্থে যোগ্য নাগরিক হিসেবে বেড়ে ওঠার সুযোগ ও সুবিধা দিতে হবে।