ইনাতগঞ্জের মসজিদের নামফলকসহ নানা অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ ভুমিদাতা পরিবারের

প্রকাশিত: ১০:২৮ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৭, ২০২০

নবীগঞ্জ উপজেলার ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের একটি মসজিদের নামফলক নিয়ে বাণিজ্যসহ নানা অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন এই মসজিদের ভূমিদাতা পরিবার। দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে নেই মসজিদের আয় ব্যয়ের কোনো হিসেব। মসজিদ সুরক্ষায় ভূমিদাতা পরিবারের পক্ষ থেকে চলে আসছে মামলা মোকদ্দমা। এদিকে ইনাতগঞ্জ বাজার জামে মসজিদ নাম পরিবর্তন করে স্থানীয় এক মৃত ব্যক্তির লন্ডন প্রবাসীর স্ত্রীর নামে করা হয়েছে মসজিদের নামফলক। এতে করে বিব্রতবোধ করছেন এলাকার ধর্ম প্রাণ মুসল্লীগণ। ইনাতগঞ্জ পশ্চিম বাজারে নির্মিত মসজিদ নিয়ে এমন আলোচনায় সরব এলাকার জনপদ।সরেজমিন জানা যায়, ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের মুনসুরপুর গ্রামের সাংবাদিক আশাহিদ আলী আশার দাদা ওয়াহাব উল্লাহ নিজ ভুমিতে মসজিদ প্রতিষ্ঠিত করেন। পরবর্তীতে তার পিতা ইব্রাহীম উল্লাহ মসজিদের ভূমিদাতা হিসেবে মসজিদের নামে রেজিষ্টারী কবলার মাধ্যমে ইনাতগঞ্জ বাজার জামে মসজিদ নামে ওয়াকাফ্ নামা প্রদান করেন। ১৯৮৯ সালের ১৫ জানুয়ারী ৩৩/৮৯ নম্বর দলিল মুলে। ইনাতগঞ্জ জামে মসজিদ নামকরণে জায়গা হস্তান্তর করেন তৎকালীন কমিটির কাছে। পরবর্তীতে প্রায় ২ মাস পরই ১৯৮৯ সালের মার্চ মাসের ১৫ তারিখ অদৃশ্য কারনে মসজিদের নাম বদল করে দেওয়া হয়। ইনাতগঞ্জ জামে মসজিদের নাম বদল করে সালেহা জামে মসজিদ নামে নামকরণ করা হয়। এতে করে মসজিদের ভূমিদাতা পরিবার ও এলাকায় মিশ্রপ্রতিক্রিয়া দেখাদেয়। ধর্ম প্রাণ মুসল্লীদের মধ্যে বিরাজ করে নানা প্রশ্ন। এনিয়ে বির্তকের একপর্যায়ে দ্ন্ধগড়ায় ওয়াহাব উল্লাহ’র পুত্র ইব্রাহীম উল্লাহ এবং তাঁর নাতি আশাহিদ আলী আশা পর্যন্ত। দীর্ঘ প্রায় তিন যুগ কেটে গেলেও এই দন্ধের কোনো সুরাহা পাননি মসজিদের ভূমিদাতা পরিবার। বিগত ৩০ বছর ধরে মসজিদ নিয়ে অনিয়ম, দুর্নীতি ও নামফলক বাণিজ্য বন্ধ এবং মসজিদ সুরক্ষার জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন সাংবাদিক আশাহিদ আলী আশা ও তার পরিবারের লোকজন। সর্বশেষ ২০১৯ সালে ইনাতগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বজলুর রশিদ ও ইনাগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক সামছু উদ্দিন খানের মধ্যস্থতায় নবীগঞ্জ থানার বিদায়ী ওসি ইকবাল হোসেন, ইনাগঞ্জ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ খালেদ আহমেদ পাঠান, মাসুদ আহমেদ জিহাদী, বড়ভাকৈড় ইউনিয়নের সাবেক চেয়ার‌্যান মোঃ ছুবা মিয়া, নবীগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক শাহ আবুল খায়ের, নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আনোয়ার হোসেন মিঠু,মুরাদ আহমদ,দৈনিক হবিগঞ্জ সময় পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্মাদকসহ এলাকার বিশিষ্ট গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে সালিশ বিচার অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। উক্ত সালিশ বিচারে ৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি বোর্ড গঠন করে,বোর্ডের সুপারিশ গুলো লিখিত আকারে রেজুলেশন গৃহিত হয়। এসময় সালিশ বিচারে আশাহিদ আলীর আশার পরিবারকে মসজিদের ভূমিদাতা হিসেবে স্বিকৃতি দেন শালিশানগণ।এছাড়া শালিস বৈঠকে মসজিদের ভেতরে আশাহিদ আলীর আশার নামেও কিছু জায়গা রয়েছে বলে সিদ্ধান্তে বলা হয় এবং জামাল মিয়া নামের ভূমিহীন এক ব্যক্তি মসজিদের জায়গা দখল হস্তান্তর করবেন বিনিময়ে তাকে ৪ লাখ টাকা মসজিদ কমিটির পক্ষে ক্ষতিপূরন হিসেবে প্রদান করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এবং পাশাপাশি মসজিদের ভূমিদাতা পরিবারের নাম থাকবে নামফলকে। সালিশ বিচারের ২ মাসের ভেতরে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করার কথা থাকলেও বছর পেরিয়ে গেলেও তা কার্যকর হয়নি। প্রশাসন ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতি সালিশ বিচারের সিদ্ধান্ত মানছেন না বর্তমান মসজিদ কমিটি। উচ্চ পর্যায়ের সকল ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে সালিশ বিচার কার্যকর না হওয়ায় এলাকায় ধর্ম প্রাণ মুসল্লীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে নানা প্রতিক্রিয়া। এছাড়াও উল্লেখ্য যে, মসজিদের নামফলকে দেখা গেছে ভিন্ন ভিন্ন দুটি লিখা! প্রথমে সাবেক ইনাতগঞ্জ জামে মসজিদ! ২য় নাম ফলকে সালেহা জামে মসজিদ।এতে মসজিদ কমিটির ভূমিকা নিয়ে তৈরি হয় হযবরল অবস্থা? জানতে চাইলে মসজিদ কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মসজিদ নিমার্ণের জন্য টাকা ছিল না তাই তৎকালীন লন্ডন প্রবাসী আরজান আলী টাকা দিয়েছিলেন ভবন নির্মাণ করার জন্য। এজন্য তার স্ত্রী সালেহা বেগমের নামে মসজিদের নামফলক করা হয়েছে। তবে শালিস বিচারে ভূমিদাতা হিসেবে স্বীকৃত আশাহিদ আলী আশার পরিবার সহ সালিশ বিচারের গৃহিত সিদ্ধান্ত কেন মানা হচ্ছে না জানতে চাইলে মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক হাজ্বী হেলিম প্রশ্নটি এড়িয়ে যান। অভিযোগ উঠেছে, নামফলক দেখিয়ে লন্ডন প্রবাসী সাহেলা বেগমের নিকট থেকে আর্থিকভাবে সুবিধা ভোগ করছেন। ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মাসুদ জিহাদী বলেন, মসজিদের নাম পরিবর্তন করার পেছনে একটি মহল সুবিধা ভেগ করে দুর্নীতির সাথে জড়িত রয়েছেন।এবং আমরা ধারণা করছি নামফলক দেখিয়ে অর্থও হাসিল করছেন ওই মহল। এব্যাপারে মসজিদ ভূমিদাতা পরিবারের সদস্য সাংবাদিক আশাহিদ আলী আশা বলেন, আমার দাদা ওয়াহাব উল্লাহ এবং আমার পিতা ইব্রাহীম উল্লাহ মসজিদ নির্মাণের জায়গা দিয়েছেন। দুই যুগ ধরে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে হামলা, মামলার শিকার হয়েছি।চলমান বিষয়ে নিষ্পত্তির আশায় আজ আমাদের পরিবার নিঃস্ব। কিন্তু মসজিদ নিয়ে কোনো প্রকার অন্যায় অনিয়ম, দুর্নীতি সহ্য করব না।




error: Content is protected !!