কুয়াকাটায় গণধর্ষনের শিকার ৮ম শ্রেনী পড়–য়া কিশোরী-ছাত্রী, গ্রেফতার-২ ॥

প্রকাশিত: ৩:০৩ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ২৭, ২০২০

রাসেল কবির মুরাদ,কলাপাড়া(পটুয়াখালী)প্রতিনিধি; কুয়াকাটায় বন্ধুর
সাথে বেড়াতে গিয়ে বরগুনার আমতলী পৌরসভার এ কে স্কুল এন্ড কলেজের ৮ম
শ্রেনীর শিক্ষার্থী লাবনী আকতার মীম প্রলোভনে পরে গনধর্ষণের শিকার হয়েছে।
এ ঘটনায় মীমের মা সাবিনা বেগম বাদী হয়ে অপহরণ ও গনধর্ষণের অভিযোগ এনে
আমতলী থানায় মঙ্গলবার দুপুরের দিকে একটি মামলা দায়ের করেছে। এ গণধর্ষণের
সাথে জড়িত মীমের বন্ধু জিসান ওরফে সোহেল (১৮) ও ভাড়াটিয়া মটরসাইকেল চালক
সাগর (২১)কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সোমবার রাতে কুয়াকাটার আবাসিক হোটেল
রাজু ও সাগর নীড় হোটেলে এ গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে।

পুলিশের সূত্রে জানা যায়, মহিপুর থানার সদর ইউনিয়নের সেরাজপুর গ্রামের
বাদশা গাজীর পুত্র জিসান ওরফে সোহেল এর সাথে মোবাইলে কথোপোকথনের মাধ্যমে
মীমের বন্ধুত্ব হয়। মীমের সাথে জিসানের প্রায়ই মোবাইলে কথা হতো। এক সময়ে
জিসান মীমের সাথে দেখা করার প্রস্তাব দেয়। সোমবার শেষ বিকেলে জিসান মীমের
সাথে দেখা করতে আমতলী পৌর এলাকার মীমের বাসা সংলগ্ন সকাল-সন্ধা হোটেলের
সামনে গিয়ে ফোন করে। মীম বাসা থেকে বেড়িয়ে জিসানের সাথে দেখা করে। এসময়
জিসান তার সাথে ঘুরতে যাবার আবদারে অটো রিক্সায় তুলে কলাপাড়া-আমতলীর
মধ্যবর্তী স্থান খুড়িয়ার খেয়াঘাটের দিকে নিয়ে যায়। সেখানে আগে থেকেই
প্রস্তুত রাখা ভাড়াটিয়া মটরসাইকেলে কিছু বুঝে ওঠার আগেই তুলে নেয়। এসময়
মীম আপত্তি করলেও মটরসাইকেল চালক দ্রুতগতিতে চালিয়ে মীমকে কুয়াকাটায় নিয়ে
যায় এবং রাত আটটার দিকে কুয়াকাটা মহাসড়কের পাশে অবস্থিত আবাসিক হোটেল
রাজু’র ২০৩ নম্বর কক্ষে উঠায়। সেখানে জিসান ওরফে সোহেল (১৮) ও সাগর (২১)
সহ ৫জনে মিলে প্রথম দফায় ধর্ষণ করে মীমকে। হোটেলে ওঠার এক ঘন্টা পর হোটেল
রাজু’র কক্ষ থেকে মীমকে নিয়ে বেড়িয়ে যায়। রাত সাড়ে ১০টার দিকে জেলা পরিষদ
ডাক বাংলো সংলগ্ন আবাসিক হোটেল সাগর নীড়’র নীচ তলায় এ-ফোর ও এ-ফাইভ নামে
দু’টি কক্ষ ভাড়া নিয়ে রাতভর পাঁচ যুবক মিলে ধর্ষণ করে মীমকে। সকালে মীমকে
পরিবহন গাড়ীতে করে আমতলী পাঠিয়ে দেয়, মীম বাসায় গিয়ে মায়ের কাছে এঘটনা
জানায়।

এঘটনায় মীমের মা আমতলী সরকারী কলেজের ৪র্থ শ্রেনীর কর্মচারী সাবিনা বেগম
বাদী হয়ে অপহরণ ও গনধর্ষণের অভিযোগ এনে আমতলী থানায় মঙ্গলবার দুপুরের
দিকে একটি মামলা দায়ের করে। আমতলী থানার ওসি তদন্ত মো: হেলাল উদ্দিনের
নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল ওইদিন বিকেলে মীমকে নিয়ে আসামীদের ধরতে অভিযানে
নামে। এ অভিযানকালে মীমের সনাক্ত মতে আমতলী পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের সানু
হাওলাদারের পুত্র ভাড়াটিয়া মটরসাইকেল চালক সাগর (২১) কে গ্রেফতার করে।
এরপর মহিপুর থানার সদর ইউনিয়নের সেরাজপুর গ্রামের বাদশা গাজীর পুত্র
জিসান ওরফে সোহেল (১৮) গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত দুই ধর্ষক ও মীমকে নিয়ে
সন্ধ্যায় কুয়াকাটা আবাসিক হোটেল রাজু ও সাগর নীড় হোটেলে ঘটনাস্থল
পরিদর্শন করে হোটেলের গেষ্ট রেজিস্টার খাতা জব্দ করে হোটেলের ম্যানেজার ও
স্টাফদের সাথে কথা বলে অভিযোগের সত্যতা পান।

পুলিশ আরও জানায়, আবাসিক হোটেল সাগর নীড়’র গেষ্ট রেজিষ্টার খাতায়
লিপিবদ্ধ রুম ও নামের সাথে কোন মিল নেই এবং মীমের নাম রেজিষ্টার খাতার
কোনখানে লিপিবদ্ধ করা হয়নি, দুই রুমে মীম সহ ৬জন অবস্থান করলেও রেজিষ্টার
খাতায় শুধু ১জনের নাম রয়েছে, রুম নম্বর দেখানো হয়েছে বি-ফোর ও বি-ফাইভ।
হোটেলের গেষ্ট রেজিষ্টারে কোন ধরনের নিয়মকানুন মানা হয়নি।

আমতলী থানার ওসি (তদন্ত) মো: হেলাল উদ্দিন বলেন, লাবনী আকতার মীম’র মা
বাদী হয়ে অপহরণ ও গনধর্ষণের অভিযোগে আমতলী থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে।
প্রাথমিক তদন্তে ধর্ষণের প্রমাণ পাওয়া গেছে। মীমের সনাক্ত মতে ধর্ষক
২জনকে আটক করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে বাকী আসামীদের চিহ্নিত করণ ও
গ্রেফতারে পুলিশ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।




error: Content is protected !!