গণমুক্তিফৌজের শীর্ষ সন্ত্রাসী ও চরমপন্থি নেতা লিপটনের গ্রেফতারে প্রশাসনের কোন পদক্ষেপ নেই

প্রকাশিত: ৯:৫৬ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২২, ২০২৩

কে এম শাহীন রেজা, কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি ॥
কুষ্টিয়া দূর্বাচারা গ্রামের মধ্যে পুলিশ ক্যাম্প থাকা অবস্থায় মাস পার না পার হতেই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চার জেলার গণমুক্তিফৌজের শীর্ষ সন্ত্রাসী ও চরমপন্থি নেতা লিপটনের নির্দেশে ময়না সর্দ্দার ব্যাপারীকে তার পোষ্য অস্ত্রধারী ক্যাডার দিয়ে গত শনিবার সকাল ৮ টার সময় তার নিজ বাড়ীর সামনে দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে নির্মমভাবে জখম করেছে। তার মাথায় ১২টি সেলাই দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তিনি হাসপাতালে নিরাপত্তাহীনতায় ভ’গছে বলে প্রতিবেদককে জানান। তিনি বলেন লিপটনের সন্ত্রাসী বাহিনীরা এসে আমাকে অশ্রীল ভাষায় গালি গালাজ করছে, সেই সাথে চেয়ারম্যান ছানোয়ার মোল্লার গলা কেটে নেওয়া হবে বলে জনসম্মুখে বলে যাচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও তার দেওয়া তথ্য মতে জানা যায়, জামায়াত নেতা ছবদুল, বিএনপির নেতা সাইফুল ইসলাম ভূট্ট, গাঁজা ব্যবসায়ী রফিকুল, মুলাম, ইবাদত, ও চোরের সরদার সাইফুল এই ন্যাক্কারজনক হামলা করেছে। তারা আরো জানায়, তাকে মারার সময় এলাকাবাসী একজোট হয়ে ধাওয়া করে দুজনকে ধরে গনধোলাই দিয়ে ছেড়ে দেয়। এরা সকলেই গত মাসের ২৭ তারিখের মামলার জামিনপ্রাপ্ত আসামী। জামিনে বের হয়ে প্রকাশ্যে পুলিশ ক্যাম্পের সামনে এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলা চালাচ্ছে। এলাকার সূশীল সমাজের অভিযোগ যে পুলিশ প্রশাসন কি নাকে সরিষার তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছে ? না কি অর্থে গন্ধ শুকছে।
বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক তকমা লাগিয়ে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে জামাত-বিএনপি’র সাথে আতাত করে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চার জেলায় এখনো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এক সময়ের গণমুক্তিফৌজের শীর্ষ সন্ত্রাসী ও চরমপন্থি নেতা লিপটন। গত মাসের ২৬ তারিখ রাত ১০টার সময় প্রায় ৫০ থেকে ৬০ জন সন্ত্রাসীদের সাথে নিয়ে গুলি বর্ষন, বোমা ফাটিয়ে ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে দূর্বাচারা এলাকাটি আতংকিত করতে করতে ছুকুল সর্দ্দার, হামিদুল ইসলাম, শামীম সহ একাধিক নীরিহ ব্যক্তির বাড়ি ও দোকানে হামলা চালিয়ে ঘরবাড়ী ভাংচুর, লক্ষ-লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে যায়, বিপুল পরিমান স্বর্ণালংকার লুটপাট সহ একাধিক গরু ছাগল লুটসহ ব্যাপক ক্ষতিসাধান করে প্রাণ নাশের হুমকি দিয়ে চলে যায়। তার কিছুক্ষন পর ইবি থানার অফিসার ইনচার্জ আননূর যায়েদ, তার সঙ্গীয় ফোর্সদের নিয়ে ১৪ জন আসামীকে গ্রেফতার করে। ঐ সময় ৩ রাউন্ড পিস্তলের তাজা গুলি, ০৪ রাউন্ড পিস্তলের গুলির খোসা ও ০৫ টি লাল কসটেপ দ্বারা মোড়ানো ককটেল জাতীয় বিষ্ফোরিত বোমার অংশ বিশেষ, ০২ টি চাইনিজ কুড়াল, ১৩ টি ধারালো রামদা, ০২ টি হেমার, ০১ টি ছোট হাতুড়ি, ২৭ টি শড়কি, ০৪ ব্যাগ ইটের খোয়া, ০৪ টি বাঁশের লাঠি, ১০টি বেতের ঢাল ও ৮টি মোটর সাইকেল উদ্ধার করে উল্লেখিত সকল আসামীদের বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করেন। এলাকাবাসী বলেন, লিপ্টন বাহিনীদের কাছে এখনো বিপুল পরিমান আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে যা প্রশাসন জানলেও উদ্ধারের কোন তৎপরতা নেই। এ বিষয়ে ছুকুল সর্দ্দার ও হামিদুল ইসলাম বাদী হয়ে গত ২৭ তারিখ কুষ্টিয়া ইবি থানায় ১৯০৮ আইন মতে ১৮৬০ সালের সালের পেনাল কোড অনুযায়ী ১৪৩/৪৪৭/৪৪৭/৩৮০/৪২৭/১১৪/৫০৬ ধারায় জাহাজীর কবির লিপ্টনকে ১নং আসামী করে ৪৩ জন সহ অজ্ঞাত আরও ২৫ থেকে ৩০ জনের নামে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন।
মামলা দায়েরের পর থেকে তাকে আর এলাকাতে দেখা যাচ্ছেনা না। কিন্তু এলাকাবাসীরা কুষ্টিয়া প্রশাসনের দিকে তীর ছুড়ে বলেন, এখনো ধরাছোয়ার বাইরে কেন গণমুক্তিফৌজের শীর্ষ সন্ত্রাসী ও চরমপন্থি নেতা লিপটন ? গণমুক্তিফৌজের শীর্ষ সন্ত্রাসী ও চরমপন্থি নেতা লিপটনের গ্রেফতারের বিষয়ে প্রশাসন কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না কেন ? সে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় অপহরণ, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি ও অস্ত্র ব্যবসায়ী লিপ্টন এখন পালাতক রয়েছে কেন ? তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা ও ২০/২৫টি জিডি থাকতেও প্রশাসনের কোন পদক্ষেপ নিচেছ না কেন ? দীর্ঘ ১৮ দিন পার হলেও মামলাখ্যাত শীর্ষ সন্ত্রাসী লিপ্টনকে গ্রেফতার করতে পারছে না কেন তার খুটির জোর কোথায় ? মোস্ট ওয়ান্টেড সন্ত্রাসী ও কুখ্যাত চরমপন্থি নেতা লিপটনের চাঁদাবাজী রুখবে কে ? সরকার জিরো টলারেন্স ঘোষনা দিলেও মামলার আসামী চরমপন্থী লিপ্টনকে গ্রেফতার করেেছ না কেন আমরা জানতে চাই ? তারা এটাও বলেন, আইন শৃংখলা বাহিনী ইচ্ছে করলে ২৪ ঘন্টার মধ্যে সকল আসামী গ্রেফতার করতে পারে, কিন্তু তাদের দূর্বলতা কোথায় ?
জেলা পুলিশের মোস্ট ওয়ান্টেড সন্ত্রাসী ও কুখ্যাত চরমপন্থি নেতা লিপটনের বাড়ি কুষ্টিয়া সদর উপজেলার দুর্বাচারা গ্রামে। তার বাবার নাম আজিজুর রহমান। তার ছোট ভাই আলমগীর কবির (বাইরন) নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয়ের উপ-সচিব পদে কর্মরত আছে। ছোট ভাইয়ের ক্ষমতা বলে এই চরমপন্থী সংগঠন দাড় করিয়ে নানা কু-কুকর্ম করে বেড়াচ্ছে বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেন। জামায়াত আদর্শের পরিবারে বড় হওয়া লিপটন নব্বইয়ের দশকের পর কলেজে ভর্তির পরই চরমপন্থি দল গণমুক্তিফৌজে নাম লেখায়। সে সময় নিজে হাতে একের পর এক হত্যা মিশন চালিয়ে আন্ডারওয়ার্ল্ডে শুটার হিসেবে পরিচিতি পায়। একপর্যায়ে নিজেই বাহিনী গড়ে তোলে। ইতিপূর্বে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে দেওয়া অভিযোগে জানা যায়, বিএনপি-জামায়াত সরকার আমলে জেলা বিএনপির দুই শীর্ষ নেতা, তৎকালীন সংসদ সদস্যের ছত্রছায়ায় টেন্ডারবাজি ও খুন-খারাবিতে মেতে ওঠে সে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জোরদার অভিযান শুরু করলে লিপটন ভারতে পালিয়ে যায়। এরপর অর্থের জোরে সবকিছু ম্যানেজ করে ২০১৩ সালে লিপটন দেশে ফিরে দীঘ এক যুগ ধরে আবারও চরমপন্থি সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ নেয়। অভিযোগ রয়েছে, লিপটন স্থানীয় র‌্যাবের কিছু সদস্যকে হাত করে নিজেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কথিত সোর্স পরিচয় দিয়ে থাকে।
যদিও তিনি আওয়ামীলীগের কোন অঙ্গ সংগঠনের সাথে জড়িত নেই তবুও এই দলের লেবাস গায়ে জড়িয়ে তার নিজ এলাকা কুষ্টিয়া দূর্বচারা গ্রামে গড়ে তুলেছে চরমপন্থী সংগঠনের দূর্গ। এই চরমপন্থী সংগঠনকে সাথে নিয়ে হত্যা, মুক্তিপণের দাবিতে অপহরণ, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি ও অস্ত্র ব্যবসার মাধ্যমে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমল থেকেই লিপটন মূর্তিমান আতঙ্ক হিসেবে পরিচিত। তার ফোন পেলে ঠিকাদার, ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদদের অনেকেরই ভয়ে বুক কেঁপে ওঠে। প্রায় আড়াই যুগ ধরে সন্ত্রাসী জগতে তৎপর লিপটন। শুরুতে বিভিন্ন অপারেশনে কিলার হিসেবে কাজ করত। নিজে প্রায় দুই ডজন হত্যায় নেতৃত্ব দিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সব মিলিয়ে অর্ধশতাধিক হত্যা মিশনের সঙ্গে তার সংশ্নিষ্টতা ছিল। এছাড়া তার নেতৃত্বে শহরে মাথা কেটে ফেলে রাখার মতো লোমহর্ষক ঘটনা এখনও কুষ্টিয়াবাসী ভোলেনি। এর বাইরেও ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরেও নানা অপারেশনে নেতৃত্ব দিয়েছে লিপটন। এখনও তার কাছে রয়েছে প্রচুর অস্ত্রের ভান্ডার। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিবেশী দেশ থেকে অস্ত্র এনে সে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করে। এমনকি ওই অস্ত্রের চালান ভারত থেকে চিটাগাং তার মামার শেল্টারে সওদাগরী ব্যবায়ের মাধ্যম দিয়ে রাজধানীতেও আসে বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
এখনও সে নিয়মিত চাঁদাবাজি করে আসছে ঠিকাদার ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। এসব ঘটনায় বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে ঠিকাদার ও ব্যবসায়ীদের শতাধিক জিডি রয়েছে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় লিপটন বেছে বেছে আওয়ামী লীগ নেতা ও এই দলের অনুসারী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেই বেশি চাঁদা আদায় করেছে। চাঁদা না দিলে তারাই বেশি অপহরণ ও হত্যার শিকার হয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে সদর উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল আলিম, কাঞ্চনপুর যুবলীগের আহ্বায়ক রাশিদুল ইসলাম (বর্তমান ইউপি মেম্বার), সাবেক নেতা হাবিবর রহমান ও ইমনকে অস্ত্র দিয়ে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়। বর্তানে এখন আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে আ’লীগ নেতা সহ সাধারন জনগনের উপর। এসব ঘটনার প্রতিবাদে এলাকার হাজার হাজার সাধারণ নারী-পুরুষ বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন করে লিপটনের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছিল কিন্তু কোন ফলাফল পায় নাই। যে কারনে লিপ্টন এখন আরো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে। তবে আগামী সংসদ নির্বাচনে আ’লীগককে ঘায়েল করতে জামাত-বিএনপির সাথে হাত মিলিয়ে মরিয়া হয়ে উঠেছে বলে অনেক সূধীজনেরা মন্তব্য ছুড়েছেন বিতর্কিত এই সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে। লিপটন ও তার বাহিনীর সদস্যদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে ইতিপূর্বে বেশ কয়েকটি বিক্ষোভ সমাবেশসহ হয়েছে নানা কর্মসূচিও। এতেও কাজ না হওয়ায় ভুক্তভোগীরা গত দুই বছর আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিতভাবে অভিযোগ করেছিল। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাও সন্ত্রাসী লিপটনের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছিল, কিন্তু হঠাৎই সবই স্থবির হল কেন? এ বিষয়ে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে তার সম্পর্কে আমাদের কাছে সকল তথ্য প্রমানাদি আছে সময়মত ব্যবস্থা নিব।
এই সন্ত্রাসী লিপ্টনের নির্দেশে তার সন্ত্রাসী বাহিনী গত ১৮ আগষ্ট ঐ এলাকার কুদ্দুস খাঁকে নির্মমভাবে কুপিয়ে জখম করেছিল। ঐ সময় লিপ্টন দেশের বাইরে থাকায় তার নামে মামলা হয় নাই। তবে তার নির্দেশেই এই জঘন্যতম ঘটনা ঘটিয়েছিল। আর এ সংঘর্ষের পেছনে কলকাঠি নাড়াচ্ছেন নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয়ের উপ-সচিব পদে কর্মরত তারই আপন ছোট ভাই আলমগীর কবির (বাইরন)। গত ২৬ তারিখের যে ন্যক্কার জনক ঘটনার পেছনেও তার হাত রয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে আতংকিত দূর্বাচারার গ্রামের বাসিন্দারা। ঐ ঘটনার দিন ইবি থানা পুলিশ ১৪ জনকে আটক করলেও বাকী আসামীদের এখনো আটক করতে ব্যর্থ হয়েছেন। গত কয়েকদিন আগে উজানগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান ছানোয়ার মোল্লাকে প্রানে মারতে গিয়ে জনগনের হাতে ধরা খায় ঐ সন্ত্রাসী। তবে কুষ্টিয়া প্রশাসন নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে বলে এলাকাবাসী অভিযোগ তুলেছে। এলাকাবাসী বলেন, লিপটন বর্তমানে কোথায় আছে প্রশাসনের উপর মহল থেকে নীচ মহল পর্যন্ত সকলেই জানে। এখানে শুধুই টাকার খেলা চলছে।
কুষ্টিয়া ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আননুর যায়েদ এর কাছে গত শনিবার সকালের কথা জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ঘটনাটি নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দিয়েছে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। সেই সাথে গত মাসের ২৬ তারিখের ঘটনার বিষয়ে আসামীদের গ্রেফতারের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি।
গণমুক্তিফৌজের শীর্ষ সন্ত্রাসী ও চরমপন্থি নেতা লিপটনের গ্রেফতারে প্রশাসনের কোন পদক্ষেপ নেই
কে এম শাহীন রেজা, কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি ॥
কুষ্টিয়া দূর্বাচারা গ্রামের মধ্যে পুলিশ ক্যাম্প থাকা অবস্থায় মাস পার না পার হতেই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চার জেলার গণমুক্তিফৌজের শীর্ষ সন্ত্রাসী ও চরমপন্থি নেতা লিপটনের নির্দেশে ময়না সর্দ্দার ব্যাপারীকে তার পোষ্য অস্ত্রধারী ক্যাডার দিয়ে গত শনিবার সকাল ৮ টার সময় তার নিজ বাড়ীর সামনে দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে নির্মমভাবে জখম করেছে। তার মাথায় ১২টি সেলাই দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তিনি হাসপাতালে নিরাপত্তাহীনতায় ভ’গছে বলে প্রতিবেদককে জানান। তিনি বলেন লিপটনের সন্ত্রাসী বাহিনীরা এসে আমাকে অশ্রীল ভাষায় গালি গালাজ করছে, সেই সাথে চেয়ারম্যান ছানোয়ার মোল্লার গলা কেটে নেওয়া হবে বলে জনসম্মুখে বলে যাচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও তার দেওয়া তথ্য মতে জানা যায়, জামায়াত নেতা ছবদুল, বিএনপির নেতা সাইফুল ইসলাম ভূট্ট, গাঁজা ব্যবসায়ী রফিকুল, মুলাম, ইবাদত, ও চোরের সরদার সাইফুল এই ন্যাক্কারজনক হামলা করেছে। তারা আরো জানায়, তাকে মারার সময় এলাকাবাসী একজোট হয়ে ধাওয়া করে দুজনকে ধরে গনধোলাই দিয়ে ছেড়ে দেয়। এরা সকলেই গত মাসের ২৭ তারিখের মামলার জামিনপ্রাপ্ত আসামী। জামিনে বের হয়ে প্রকাশ্যে পুলিশ ক্যাম্পের সামনে এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলা চালাচ্ছে। এলাকার সূশীল সমাজের অভিযোগ যে পুলিশ প্রশাসন কি নাকে সরিষার তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছে ? না কি অর্থে গন্ধ শুকছে।
বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক তকমা লাগিয়ে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে জামাত-বিএনপি’র সাথে আতাত করে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চার জেলায় এখনো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এক সময়ের গণমুক্তিফৌজের শীর্ষ সন্ত্রাসী ও চরমপন্থি নেতা লিপটন। গত মাসের ২৬ তারিখ রাত ১০টার সময় প্রায় ৫০ থেকে ৬০ জন সন্ত্রাসীদের সাথে নিয়ে গুলি বর্ষন, বোমা ফাটিয়ে ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে দূর্বাচারা এলাকাটি আতংকিত করতে করতে ছুকুল সর্দ্দার, হামিদুল ইসলাম, শামীম সহ একাধিক নীরিহ ব্যক্তির বাড়ি ও দোকানে হামলা চালিয়ে ঘরবাড়ী ভাংচুর, লক্ষ-লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে যায়, বিপুল পরিমান স্বর্ণালংকার লুটপাট সহ একাধিক গরু ছাগল লুটসহ ব্যাপক ক্ষতিসাধান করে প্রাণ নাশের হুমকি দিয়ে চলে যায়। তার কিছুক্ষন পর ইবি থানার অফিসার ইনচার্জ আননূর যায়েদ, তার সঙ্গীয় ফোর্সদের নিয়ে ১৪ জন আসামীকে গ্রেফতার করে। ঐ সময় ৩ রাউন্ড পিস্তলের তাজা গুলি, ০৪ রাউন্ড পিস্তলের গুলির খোসা ও ০৫ টি লাল কসটেপ দ্বারা মোড়ানো ককটেল জাতীয় বিষ্ফোরিত বোমার অংশ বিশেষ, ০২ টি চাইনিজ কুড়াল, ১৩ টি ধারালো রামদা, ০২ টি হেমার, ০১ টি ছোট হাতুড়ি, ২৭ টি শড়কি, ০৪ ব্যাগ ইটের খোয়া, ০৪ টি বাঁশের লাঠি, ১০টি বেতের ঢাল ও ৮টি মোটর সাইকেল উদ্ধার করে উল্লেখিত সকল আসামীদের বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করেন। এলাকাবাসী বলেন, লিপ্টন বাহিনীদের কাছে এখনো বিপুল পরিমান আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে যা প্রশাসন জানলেও উদ্ধারের কোন তৎপরতা নেই। এ বিষয়ে ছুকুল সর্দ্দার ও হামিদুল ইসলাম বাদী হয়ে গত ২৭ তারিখ কুষ্টিয়া ইবি থানায় ১৯০৮ আইন মতে ১৮৬০ সালের সালের পেনাল কোড অনুযায়ী ১৪৩/৪৪৭/৪৪৭/৩৮০/৪২৭/১১৪/৫০৬ ধারায় জাহাজীর কবির লিপ্টনকে ১নং আসামী করে ৪৩ জন সহ অজ্ঞাত আরও ২৫ থেকে ৩০ জনের নামে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন।
মামলা দায়েরের পর থেকে তাকে আর এলাকাতে দেখা যাচ্ছেনা না। কিন্তু এলাকাবাসীরা কুষ্টিয়া প্রশাসনের দিকে তীর ছুড়ে বলেন, এখনো ধরাছোয়ার বাইরে কেন গণমুক্তিফৌজের শীর্ষ সন্ত্রাসী ও চরমপন্থি নেতা লিপটন ? গণমুক্তিফৌজের শীর্ষ সন্ত্রাসী ও চরমপন্থি নেতা লিপটনের গ্রেফতারের বিষয়ে প্রশাসন কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না কেন ? সে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় অপহরণ, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি ও অস্ত্র ব্যবসায়ী লিপ্টন এখন পালাতক রয়েছে কেন ? তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা ও ২০/২৫টি জিডি থাকতেও প্রশাসনের কোন পদক্ষেপ নিচেছ না কেন ? দীর্ঘ ১৮ দিন পার হলেও মামলাখ্যাত শীর্ষ সন্ত্রাসী লিপ্টনকে গ্রেফতার করতে পারছে না কেন তার খুটির জোর কোথায় ? মোস্ট ওয়ান্টেড সন্ত্রাসী ও কুখ্যাত চরমপন্থি নেতা লিপটনের চাঁদাবাজী রুখবে কে ? সরকার জিরো টলারেন্স ঘোষনা দিলেও মামলার আসামী চরমপন্থী লিপ্টনকে গ্রেফতার করেেছ না কেন আমরা জানতে চাই ? তারা এটাও বলেন, আইন শৃংখলা বাহিনী ইচ্ছে করলে ২৪ ঘন্টার মধ্যে সকল আসামী গ্রেফতার করতে পারে, কিন্তু তাদের দূর্বলতা কোথায় ?
জেলা পুলিশের মোস্ট ওয়ান্টেড সন্ত্রাসী ও কুখ্যাত চরমপন্থি নেতা লিপটনের বাড়ি কুষ্টিয়া সদর উপজেলার দুর্বাচারা গ্রামে। তার বাবার নাম আজিজুর রহমান। তার ছোট ভাই আলমগীর কবির (বাইরন) নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয়ের উপ-সচিব পদে কর্মরত আছে। ছোট ভাইয়ের ক্ষমতা বলে এই চরমপন্থী সংগঠন দাড় করিয়ে নানা কু-কুকর্ম করে বেড়াচ্ছে বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেন। জামায়াত আদর্শের পরিবারে বড় হওয়া লিপটন নব্বইয়ের দশকের পর কলেজে ভর্তির পরই চরমপন্থি দল গণমুক্তিফৌজে নাম লেখায়। সে সময় নিজে হাতে একের পর এক হত্যা মিশন চালিয়ে আন্ডারওয়ার্ল্ডে শুটার হিসেবে পরিচিতি পায়। একপর্যায়ে নিজেই বাহিনী গড়ে তোলে। ইতিপূর্বে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে দেওয়া অভিযোগে জানা যায়, বিএনপি-জামায়াত সরকার আমলে জেলা বিএনপির দুই শীর্ষ নেতা, তৎকালীন সংসদ সদস্যের ছত্রছায়ায় টেন্ডারবাজি ও খুন-খারাবিতে মেতে ওঠে সে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জোরদার অভিযান শুরু করলে লিপটন ভারতে পালিয়ে যায়। এরপর অর্থের জোরে সবকিছু ম্যানেজ করে ২০১৩ সালে লিপটন দেশে ফিরে দীঘ এক যুগ ধরে আবারও চরমপন্থি সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ নেয়। অভিযোগ রয়েছে, লিপটন স্থানীয় র‌্যাবের কিছু সদস্যকে হাত করে নিজেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কথিত সোর্স পরিচয় দিয়ে থাকে।
যদিও তিনি আওয়ামীলীগের কোন অঙ্গ সংগঠনের সাথে জড়িত নেই তবুও এই দলের লেবাস গায়ে জড়িয়ে তার নিজ এলাকা কুষ্টিয়া দূর্বচারা গ্রামে গড়ে তুলেছে চরমপন্থী সংগঠনের দূর্গ। এই চরমপন্থী সংগঠনকে সাথে নিয়ে হত্যা, মুক্তিপণের দাবিতে অপহরণ, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি ও অস্ত্র ব্যবসার মাধ্যমে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমল থেকেই লিপটন মূর্তিমান আতঙ্ক হিসেবে পরিচিত। তার ফোন পেলে ঠিকাদার, ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদদের অনেকেরই ভয়ে বুক কেঁপে ওঠে। প্রায় আড়াই যুগ ধরে সন্ত্রাসী জগতে তৎপর লিপটন। শুরুতে বিভিন্ন অপারেশনে কিলার হিসেবে কাজ করত। নিজে প্রায় দুই ডজন হত্যায় নেতৃত্ব দিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সব মিলিয়ে অর্ধশতাধিক হত্যা মিশনের সঙ্গে তার সংশ্নিষ্টতা ছিল। এছাড়া তার নেতৃত্বে শহরে মাথা কেটে ফেলে রাখার মতো লোমহর্ষক ঘটনা এখনও কুষ্টিয়াবাসী ভোলেনি। এর বাইরেও ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরেও নানা অপারেশনে নেতৃত্ব দিয়েছে লিপটন। এখনও তার কাছে রয়েছে প্রচুর অস্ত্রের ভান্ডার। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিবেশী দেশ থেকে অস্ত্র এনে সে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করে। এমনকি ওই অস্ত্রের চালান ভারত থেকে চিটাগাং তার মামার শেল্টারে সওদাগরী ব্যবায়ের মাধ্যম দিয়ে রাজধানীতেও আসে বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
এখনও সে নিয়মিত চাঁদাবাজি করে আসছে ঠিকাদার ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। এসব ঘটনায় বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে ঠিকাদার ও ব্যবসায়ীদের শতাধিক জিডি রয়েছে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় লিপটন বেছে বেছে আওয়ামী লীগ নেতা ও এই দলের অনুসারী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেই বেশি চাঁদা আদায় করেছে। চাঁদা না দিলে তারাই বেশি অপহরণ ও হত্যার শিকার হয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে সদর উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল আলিম, কাঞ্চনপুর যুবলীগের আহ্বায়ক রাশিদুল ইসলাম (বর্তমান ইউপি মেম্বার), সাবেক নেতা হাবিবর রহমান ও ইমনকে অস্ত্র দিয়ে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়। বর্তানে এখন আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে আ’লীগ নেতা সহ সাধারন জনগনের উপর। এসব ঘটনার প্রতিবাদে এলাকার হাজার হাজার সাধারণ নারী-পুরুষ বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন করে লিপটনের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছিল কিন্তু কোন ফলাফল পায় নাই। যে কারনে লিপ্টন এখন আরো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে। তবে আগামী সংসদ নির্বাচনে আ’লীগককে ঘায়েল করতে জামাত-বিএনপির সাথে হাত মিলিয়ে মরিয়া হয়ে উঠেছে বলে অনেক সূধীজনেরা মন্তব্য ছুড়েছেন বিতর্কিত এই সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে। লিপটন ও তার বাহিনীর সদস্যদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে ইতিপূর্বে বেশ কয়েকটি বিক্ষোভ সমাবেশসহ হয়েছে নানা কর্মসূচিও। এতেও কাজ না হওয়ায় ভুক্তভোগীরা গত দুই বছর আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিতভাবে অভিযোগ করেছিল। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাও সন্ত্রাসী লিপটনের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছিল, কিন্তু হঠাৎই সবই স্থবির হল কেন? এ বিষয়ে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে তার সম্পর্কে আমাদের কাছে সকল তথ্য প্রমানাদি আছে সময়মত ব্যবস্থা নিব।
এই সন্ত্রাসী লিপ্টনের নির্দেশে তার সন্ত্রাসী বাহিনী গত ১৮ আগষ্ট ঐ এলাকার কুদ্দুস খাঁকে নির্মমভাবে কুপিয়ে জখম করেছিল। ঐ সময় লিপ্টন দেশের বাইরে থাকায় তার নামে মামলা হয় নাই। তবে তার নির্দেশেই এই জঘন্যতম ঘটনা ঘটিয়েছিল। আর এ সংঘর্ষের পেছনে কলকাঠি নাড়াচ্ছেন নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয়ের উপ-সচিব পদে কর্মরত তারই আপন ছোট ভাই আলমগীর কবির (বাইরন)। গত ২৬ তারিখের যে ন্যক্কার জনক ঘটনার পেছনেও তার হাত রয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে আতংকিত দূর্বাচারার গ্রামের বাসিন্দারা। ঐ ঘটনার দিন ইবি থানা পুলিশ ১৪ জনকে আটক করলেও বাকী আসামীদের এখনো আটক করতে ব্যর্থ হয়েছেন। গত কয়েকদিন আগে উজানগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান ছানোয়ার মোল্লাকে প্রানে মারতে গিয়ে জনগনের হাতে ধরা খায় ঐ সন্ত্রাসী। তবে কুষ্টিয়া প্রশাসন নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে বলে এলাকাবাসী অভিযোগ তুলেছে। এলাকাবাসী বলেন, লিপটন বর্তমানে কোথায় আছে প্রশাসনের উপর মহল থেকে নীচ মহল পর্যন্ত সকলেই জানে। এখানে শুধুই টাকার খেলা চলছে।
কুষ্টিয়া ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আননুর যায়েদ এর কাছে গত শনিবার সকালের কথা জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ঘটনাটি নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দিয়েছে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। সেই সাথে গত মাসের ২৬ তারিখের ঘটনার বিষয়ে আসামীদের গ্রেফতারের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি।




error: Content is protected !!