মুফতি ইবরাহীম আনোয়ারী;
আল্লাহ তায়ালা বছরের বিভিন্ন মাসে ও সময়ে তার মুমিন বান্দাদের জন্য অপার সুযোগ দিয়ে বিভিন্ন ইবাদতের কর্মসূচি পেশ করেছেন। যেমন তিনি জিলহজ্ব মাসের প্রথম দশ দিন ও রাতগুলো ইবাদতের জন্য দান করেছেন, যা প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের জন্য বোনাস স্বরূপ। যা আমাদের আমলের জন্য অত্যন্ত সুবর্ণ সুযোগ। এ বিষয়ে আল্লাহ তাআলা সুরায়ে ফজরের শুরুতে শপথ করে বলেন- শপথ ফজরের, শপথ দশ রাত্রির, শপথ জোড় ও বেজোড়-এর। (সুরায়ে ফজর ১-৩) জিলহজের¡ নয় তারিখ পর্যন্ত রোযার গুরুত্ব সম্পকের্ হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন, আল্লাহর ইবাদতের নিমিত্তে জিলহজ্বের প্রথম দশ দিনের চেয়ে শ্রেষ্ঠতম কোন আমল নেই। ১লা জিলহজ্ব থেকে ৯ই জিলহজ্ব পর্যন্ত এক এক দিনের রোযা এক এক বৎসরের নফল রোযা রাখার সমতুল্য এবং এক এক রাতের ইবাদত শবে কদরের সমপরিমাণ নফল ইবাদত করার সওয়াব পাওয়া যায়। জিলহজ্বে আল্লাহ তায়ালার নিকট পছন্দনীয় আমল প্রসংগে, হযরত ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তায়ালার নিকট জিলহজ্ব মাসের প্রথম দশকের আমলের চেয়ে অন্য কোন দিনের আমল অধিক পছন্দনীয় নয়। তাই তোমরা এদিন গুলোর মধ্যে তাকবির, তাহলিল এবং আল্লাহ তায়ালার জিকির অধিকহারে কর। কেননা এদিন গুলোর মধ্যে এক দিন রোযা রাখা এক বছর রোযা রাখার সমতুল্য, এবং এ দিনগুলোর আমলের সওয়াব বৃদ্ধি করে সাত শত গুণ পর্যন্ত দেওয়া হবে। (মেরকাতুল মাফাতিহ, খ: ২, পৃ: ২৬৮)
অন্যত্রে ইরশাদ হচ্ছে, হযরত উম্মে সালমা রা. থেকে বর্র্ণিত যে, রাসূল সা. ইরশাদ করেন, যখন জিলহজ্বের চাঁদ উদিত হয় এবং তোমাদের মধ্যে কেউ কুরবানি করার নিয়ত করে সে যেন কুরবানির পশু জবেহ করার পূর্বে তার নখ এবং কর্তন যোগ্য পশম ইত্যাদি কর্তন না করে।
এ প্রসংগে ওলামায়ে কেরাম বলেন, কুরবানি দাতার নখ, চুল, গোফ না কাটার পিছনে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে হাজি¦দের সাদৃশ্য ধারন করা। হাদিসের আলোকে আমরা বুঝলাম, জিলহজ্বের প্রথম দশ দিনের আমল হচ্ছে, ১লা জিলহজ্ব থেকে ৯ ই জিলহজ পর্যন্ত রোযা রাখা। কুরবানি করার পূর্ব পর্যন্ত চুল নখ, পশম কর্তন না করা। তাকবিরে তাশরিক আদায় করা। রাত্রিসমূহে নফল ইবাদত বেশি বেশি করা। জিলহজ্বের দশ তারিখ কুরবানি করা। তাকবিরে তাশরিক সংক্রান্ত বিষয়ে বলা হচ্ছে যে, তাকবিরে তাশরিক আরাফার দিন অর্থাৎ জিলহজের নয় তারিখের ফজরের পর থেকে ১৩ তারিখ আসর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর নারী, পুরুষ, মুকিম, মুসাফির সকলের একবার তাকবির পড়ে নেওয়া ওয়াজিব, যে একাকি নামাজ পড়বে তার ওপরও ওয়াজিব। পুরুষরা উচ্চস্বরে আর মহিলারা নিম্নস্বরে পড়বে। তাকবিরে তাশরিক হচ্ছে, আল্লাহু আকবর আল্লাহু আকবর লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবর আল্লাহু আকবর ওয়া লিল্লাহিল হামদ। (তাহতাবি, পৃ:৩৩)
তাকবিরে তাশরিক সংক্রান্ত কিছু কথা- নামাযে মাসবুক ব্যক্তির জন্য নিজের নামাজের শেষান্তে তাকবির পড়ে নেওয়া ওয়াজিব। যদি কেউ ফরজ নামাজ আদায় করার পর মূহুর্তে তাকবির বলতে ভুলে যায় এবং নামাজের পর মসজিদ বা নামাজের স্থান থেকে বেরিয়ে পড়ে, অথবা ইচ্ছা-অনিচ্ছাতে কথোপকথন করে তাহলে তাকবির বলার সুযোগ থাকবে না। তাকবির বলার পূর্বে যদি কারো অজু ভেঙ্গে যায়, তবে তার জন্য নতুন অজু অথবা তায়াম্মুম করা জরুরি নয়। উক্ত সময়ের জুমার নামাজের পরও তাকবির পড়া ওয়াজিব। বিতিরের নামাজের পর তাকবির পাঠ করা ওয়াজিব নয়। যদি কেউ আইয়্যামে তাশরিকের ক্বাজাকৃত নামাজ সেই বছরের আইয়্যামে তাশরিকের সময় আদায় করে, তখন নামাজ শেষে তার জন্য তাকবির আদায় করতে হবে। হ্যাঁ যদি কেউ আইয়্যামে তাশরিকের পূর্বের নামাজ তাশরিকের দিনসমূহে আদায় করে বা তাশরিকের দিনের নামাজ অন্য সময় আদায় করে তাহলে তার উপর তাকবিরে তাশরিক পড়া ওয়াজিব নয়। ইমাম সাহেব কখনো ভুলে গেলেও মুক্তাদিকে উচ্চঃস্বরে তাকবির পড়ে নিতে হবে। মাসবুক যদি নিজের নামাজের পূর্বে ইমামের সাথে তাকবির পড়ে নেয়, তাহলে তার নামাজ ফাসেদ হবে না। স্মরণ রাখা উচিৎ যে, তাকবিরে তাশরিক ৩ বার নয়, একবার পড়া জরুরি ও ওয়াজিব। (তাহতাবি, ফতোয়ায়ে আলমগীরি)
খতিব ও সিনিয়র শিক্ষক, বায়তুল করিম কমপ্লেক্স জামে মসজিদ,হালিশহর, চট্টগ্রাম