মুন্সীগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসে ভোগান্তিতে সেবা গ্রহিতারা দালাল চক্রে জিম্মি পাসপোর্ট অফিস
হাবিব হাসান (মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ
দালাল চক্রে জিম্মি হয়ে পড়েছে মুন্সীগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস। অনিয়ম আর দালালদের দৌরাত্মে ভোগান্তির শেষ নেই সেবা গ্রহীতাদের। অতিরিক্ত টাকা গ্রহন, টাকার জন্য হয়রানি, সামান্য ভূলে গ্রহিতার ফেরত দেওয়া, সেবা গ্রহিতার সাথে খারাপ ব্যবহার, দালালরে সাথে সাক্ষাৎসহ নানা অভিযোগ।
নাম মো: ইসমাইল হোসেন একজন নৈশ প্রহরী। তিনি আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা দামের মোটরবাইক হাকিয়ে বেড়ান। তিনি জসিম প্লাজার কম্পিউটারের দুটি দোকান ও রকিবের মার্কেটের দুটি কম্পিউটারের দোকানসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে পাসপোর্ট আবেদনের ফরম কালেকশন করে রাতভর কাজ করেন। গভীর রাত পর্যন্ত পাসপোর্টের ডেলিভারী এবং ফাইল দেয়া নেয়া চলে। তিনি ইতিমধ্যে কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন।
মুন্সীগঞ্জ জেলার পাসপোর্ট অফিস দালালদের নিয়ন্ত্রণ হতে বের হতে পারছেন না। কারণ অফিসের ভিতরেই দালালে ভরা। এ যেন সরিষার মধ্যে ভূত! একের পর এক সংবাদপত্রে নিউজ প্রকাশিত হলেও মুন্সীগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের দালালি বা দালালের মাধ্যম বন্ধ হয়নি। বরং এটা ফুলে ফেপে আরো বড় হয়ে উঠছে। মুন্সীগঞ্জ ৮০ শতাংশ লোক বৈদেশিক রেমিটেন্স দিয়ে সরকারকে সহায়তা করে থাকে। বাধ্য হয়েই দালালের শরণাপন্ন হন গ্রাহকগণ। এক শ্রেণির অফিস স্টাফ আর দালালদের সাক্ষাৎ মাধ্যমে এই জেলার গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসটি দালালদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ছে। জরুরী পাসপোর্ট কোন ক্রমেই দালাল ছাড়া সঠিক সময়ে গ্রাহকের হাতে আসে না। আবার দালাল ধরলে সব যেনো পানির মতো সহজ। এমনও প্রমাণ পাওয়া যায় এই অফিসের আনসার স্টাফ, মেয়াদ শেষে অনত্র চাকুরী না করে মুন্সীগঞ্জ পাসর্পোটের দালালি কাজে যোগ দিয়ে মাসে লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। ইতিমধ্যে অত্র অফিসের স্টাফরাই এই তিন দালালের মাধ্যমে ১০-১৫টি করে পাসপোর্ট জমা নেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাসর্পোট স্টাফ জানান, সাবেক স্টাফ আমিনুল , নাজমুল , আলমগীর এই অফিসের আশপাশে ভাড়া থেকেই দালালী করে যাচ্ছেন দীর্ঘদিন ধরে। অথচ জেলার কোন সচেতন ব্যক্তি এই বিষয়ে কথা বলছে না বলে ভোক্তভুগিরা চা দোকানে, বিভিন্ন আড্ডায় সমালোচনায় চা’র কাপ গরম করছেন। এই পাসর্পোটের বিষয় ২০০ দালালের হাতে জিম্মি তার খবর একাদিক পত্রিকায় নিউজ হবার পরেও অফিস স্টাফদের কারনে আরো ভয়ঙ্কর রুপ ধারণ করেছে। একের পর এক সাংবাদিক নিউজ করেও সাধারণ জনগনের ভোগান্তি থেকে রেহাই দিতে পারছেন না। বিশেষ করে পুরাতন কাচারীর মোড়ের জসিম প্লাজা, রকিবের মার্কেট, কলেজ মোড়, নতুন কোট এলাকা, প্রায় প্রতি ইউনিয়নের সচিবসহ একাধিক ব্যক্তি এই দালালী কাজে জড়িত।
পাসর্পোট করতে আসা সিরাজদিখানের শেখর নগরের পাউসার গ্রামের মোঃ সিরাজের পুত্র সেলিম। দীর্ঘ ৭ মাস হয়েছে পাসপোর্ট প্রিন্ট হয়েছে। কিন্তু পাসপোর্ট হাতে না পেয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। ফাস্ট কম্পিউটারের জাহাঙ্গীর এই পাসপোর্টটি তার কাছেই আছে বলে আরো ২৫হাজার টাকা দাবী করে ফোন দেন। ইতিমধ্যে জানা যায় এই পাসপোর্ট গ্রাহক বই না পেলেও দালালের টাকার দাবী এবং টাকা না দিলে চর থাপ্পরের হুমকী দিয়ে যাচ্ছে হর হামেশা। যাহার পাসর্পোট ডেলিভারী স্লিপ নং ৪১১৫০০০০৫৭৪২৬, জমা বা ফিঙ্গার তাং ২১/০৪/২০২২, ডেলিভারি তাং ০২/০৫/২০২২। সেলিমের কাছ থেকে জানা যায় তাহার আগের পাসর্পোট হারিয়ে যায়। নামে এবং বয়সে ভুল ছিলো। এভিডেভিড করা হয়, এমনকি ডিএসবি ভেরিফিকেশন করেন। তিনি আরো বলেন দালাল জাহাঙ্গীরকে প্রথমে ত্রিশ হাজার টাকা দেন। পরে ভেরিফিকিশনের জন্য আরো পাচঁহাজার টাকা নেন দালালচক্র জাহাঙ্গীর। এখন আরো পচিঁশ হাজার টাকা দাবী করেন জাহাঙ্গীর দালাল। ইতিপূর্বে আমি এবং আমার মামা শশুর হাফিজ পাসপোর্ট অফিসে আসলে দালাল জাহাঙ্গীরের সাথে কথা কাটা কাটির এক পর্যায় ফলে তর্ক হয়। সেই তর্কের কথা তুলে বাকী টাকা না দিলে আরো একলক্ষ বিশ হাজার টাকা দিতে হবে বলে সেলফোনে হুমকী প্রদান করেন জাহাঙ্গীর।
এমন বিষয়ে কয়েকজন সাংসাদিক পাসপোর্ট অফিসে গেলে পাসপোর্ট অফিসার (এডি) সাংবাদিকদের স্বাক্ষর করে যাওয়ার কথা বলে এবং কি জন্যে আসছি জানতে চায়। যখন বলা হয় (স্লিপ দেখিয়ে ) এই কাজে আসছি তখনই ক্ষেপে যান এডি। এক পর্যায় আমরা আমাদের নিয়মে তর্ক না করে ফিরে আসি। তবে অফিস পিয়ন স্লিপ দেখে বলেন এই পাসপোর্ট এখানেই আছে, আর এই স্লিপ আসল না, আবার বলেন অন্য কাউকে দিয়ে পাসর্পোট নিয়েছেন আপনারা। এমন কথার উত্তর আমারাও দিতে পারিনাই। তবে কম্পিউটারে স্লিপের নাম্বার অনুযায়ী চেক করলে জানতে পারি এই পাসপার্টটি অফিসেই পাসপোর্টটি আছে। দালালরা যে ভিকটিমকে টাকার জন্যে হুমকী দিচ্ছে এটা নিশ্চিত বুঝা যায়।
ইতিমধ্যে বেশ কিছু তথ্য আমাদের কাছে আছে। রাতে, দিনে এমনকি বন্ধের দিনে পাসপোর্ট সংক্রান্ত কাজ চলে হরহামেশা। দালালদের কাজে কোন কৈফিয়ত লাগে না। দালালদের ফাইল পেলে কোন ফাইল সংগ্রহ কারী অফিসার কোনো কথা ছাড়াই চোখ বুঝে ফাইল জমা করে নেন এবং স্বাক্ষর দিয়ে দেয়। আর ভিআইপি, কারোর ফাইল ২০১ নং কক্ষে পাঠিয়ে দেয়া হয়। ২০১ নং কক্ষের এডির যদি মনে ধরে তবে ভালো নয়তো এটাতে ভুল ওটাতে ভুল এমন করে ৩ হতে ৫ বার লাগে ফাইল সমাধানের জন্য।
সরকারি এক কর্মকর্তা ও তার স্ত্রীর পার্সপোর্ট করার জন্য অনলাইন আবেদন করা হয়। অনলাইন আবেদনে এনআইডি কার্ড অনুযায়ী সকল তথ্য ফিলাপ করলেও এডি ফিরিয়ে দেন যে এনআইডির ঠিকানায় হবে না শ্বশুরবাড়ির ঠিকানা দিয়ে আবেদন করতে হবে। অপরদিকে সরকারি কর্মকর্তার অফিস থেকে এনওসি দেওয়ার পরেও তিনি ফাইল দুটি ফেরত দেন।
এ বিষয় জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুলের সাথে তার সেল ফোনে কথা হয় তিনি বলেন বিষয়টি দেখবো এবং এর প্রতিকারে অভিযান করে দালাল মুক্ত করবো। এ জন্যে আপনাদের সহযোগীতারও প্রয়োজন। দারোয়ান হতে শুরু করে পাসপোর্টের স্টাফদের বিষয় তিনি বলেন এটার বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে, ইতিমধ্যে এসিল্যান্ড পাঠিয়েছি। দালালরা টের পেয়ে সরে পরে বিধায় কোনো দালাল ভ্রাম্যমান আদালত পাঠিয়েও ধরা যাচ্ছে না।
যে সকল কম্পিউটার দোকানে পাসপোর্ট অনলাইন আবেদন করা হয় প্রতিটা কম্পিউটারের দোকানে অভিযান করে কম্পিউটারগুলো জব্দ করলেই সকল অপকর্মের দলিল পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন মুন্সীগঞ্জবাসী। জেলাপ্রসাশক আরো বলেন পাসর্পোট দালালরা যদি মোটা অংকের টাকা দাবী করে হয়রানী করে তবে ভুক্তভোগীদের আমার কাছে পাঠিয়ে দিবেন বলে সাংবাদিককে আশ্বস্ত করেন।
বিশেষ সূত্রে জানা যায়, পাসপোর্ট নতুন এডি তাহার স্টাফদের নিয়ে মিটিংয়ে ফাইল জমা নেয়া আর এপ্রোপ করার বিষয়ে আলোচনায় এডি বলেছেন কেনো টাকা পয়সা নেয়া হয় না? এমন প্রশ্নের উত্তর অফিস চ্যানেল কোনো কথা বলার সাহস না করে সকল চ্যানেল চুপ হয়ে যায়। দালাল এবং অফিস চ্যানেলদের সাথে এই বিষয়ে কথা হয় বলে জানতে পারি। এমনও আলোচনা হয় য়ে পাসপোর্টধারী থেকে টাকা নিয়েছেন ফাইল জমা পড়েছে এখন পাবলিক আর অফিস চ্যানেল এর খরাপ আচরণ কি করে পরিত্রান পাবে এমন আশংকায় আছে দালালরা। অপর দিকে সময় পার হওয়াটা অফিস চ্যানেল সবুর করতে বলছে সকলকেই।
দালাল চক্র জানান, অফিস স্টাফ চ্যানেল পরিবর্তন হবে, সবুর করার কথা বলছেন। এমন কথাও আলোচনায় এস যে কোন ফাইল কেনো এপ্রোপ হচ্ছে না এমন পরিপ্রেক্ষিতে অফিস চ্যানেল এডি বরাবর তদবিরে গেলে এডি ব্যক্তিকে আসার বিষয়ে জানিয়ে দেন চ্যানেল কে। নতুন পুরাতন মিলে শতশত ফাইল গত এক মাসে আটকে আছে বলেও জানা যায়। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে ঘুষের টাকা জমা হলেও হাহা কারে পড়ে টাকা মাইর কি না এমন কথায় দালাল চক্র বলেন মাইর হবে না তবে ভোগান্তি হবে।
পাসপোর্ট অফিসার জানান, নৌশো প্রহরী ইসমাইল সাংবাদিকদের সাথে খারাপ ব্যবহার করা হয়নি। কোনো সাংবাদিক আসছে কিনা আমার জানা নেই। নৌশো প্রহরী ইসমাইল বিভিন্ন কম্পিউটারের দোকান থেকে ফাইল কালেকশন করে ১৫০০টাকা নেয়ার বিষয় তিনি জানেন না বলে জানিয়েছেন। গভীর রাত পর্যন্ত পাসপোর্ট আবেদন গ্রহণ বা পাসপোর্ট ডেলিভারি দেয়ার বিষয় তিনি কিছুই জানেন না। তবে বিষয়টি তিনি দেখবেন বলে জানিয়েছেন।