পূরণ হতে যাচ্ছে নোয়াখালী হাতিয়ার মানুষের স্বপ্ন

প্রকাশিত: ৩:১১ অপরাহ্ণ, মে ৩১, ২০২১

মোঃইব্রাহিম নোয়াখালী প্রতিনিধি।
পূরণ হতে যাচ্ছে নোয়াখালী হাতিয়ার ৭ লাখ মানুষের স্বপ্ন। সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে কোটি টাকা ব্যয়ে নদীর তীর রক্ষা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে স্থানীয়রা। জানা যায়, সম্প্রতি স্থানীয় ব্যবসায়ী, গ্রাম্য ডাক্তার, প্রবাসী, পরিবহন মালিক, জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নিজস্ব অর্থায়নে জিও ব্যাগ ফেলে নদীর তীর রক্ষার উদ্যোগ নিয়েছেন স্থানীয়রা। প্রাথমিক পর্যায়ে এই কাজে বরাদ্দ নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ৪ কোটি টাকা। সম্প্রতি নোয়াখালী দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার নলচিরা ঘাটের পাশে প্রায় ৭শত মিটার নদীর তীর এলাকায় এই জিও ব্যাগ দিয়ে নদী ভাঙ্গন রোধ করার সিদ্বান্ত নেওয়া হয়েছে। এ জন্য গঠন করা হয়েছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।ইতোমধ্যে বিভিন্ন পেশার মানুষ তাদের ভিটে মাটি রক্ষায় এই সংগঠনের নিকট অর্থের অনুদান দেওয়া শুরু করেছে। এই অনুদান গ্রহণের কার্যক্রম শুরু হয়েছে গত ৩ মে থেকে। গত এক মাসে নদীর তীর রক্ষায় অনুদান জমা পড়েছে প্রায় ৬৮ লাখ টাকা। যা সংগঠনের নিজস্ব ব্যাংক হিসাবে রাখা হয়েছে। এই জন্য গাজীপুরের একটি কারখানা থেকে দুই ধাপে আনা হয়েছে ২৪ হাজার জিও ব্যাগ। বালু ভর্তি ও ডাম্পিংয়ের জন্য রংপুর জেলা থেকে আসা অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ৫০ সদস্যের একটি শ্রমিক গ্রুপ এই কাজ বাস্তবায়ন করছে। আজ রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে এই কাজের উদ্বোধনের মাধ্যমে বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে এই দ্বীপের লাখ মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন।
করোনা মহামারির কারণে সরকার গত ২৬ এপ্রিল এক পরিপত্র জারি করে স্বাস্থ্য ও কৃষি সংশ্লিষ্ট ছাড়া সব ধরনের উন্নয়ন কাজ স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয়। এতে স্থানীয় সংসদ সদস্য আয়েশা ফেরদাউসের প্রচেষ্টায় হাতিয়ার নদী ভাঙ্গন রোধে একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা প্রায় ২২শত কোটি টাকার প্রকল্পটি বাস্তবায়নে অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি অব্যাহত নদী ভাঙ্গন হাতিয়ার সবচেয়ে বড় ব্যবসা কেন্দ্র আফাজিয়া বাজারের নিকটে চলে আসায় এই বাজারের ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে আফাজিয়া বাজারের ব্যবসায়ীরা একত্রিত হয়ে নিজস্ব অর্থায়নে নদীতে আপাতত জিও ব্যাগ পেলে ভাঙ্গন রোধ করা সিদ্বান্ত নেয় বলে জানান আফাজিয়া বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আজহার উদ্দিন।
তিনি আরও জানান, এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে এই কাজে সর্বাধিক সহযোগিতা করার আগ্রহ প্রকাশ করেন সাবেক সংসদ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলীসহ অনেকে।এজন্য বিভিন্ন পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করে করা হয়েছে ৫১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি। যার নাম দেওয়া হয়েছে “হাতিয়া নদী শাসন ও তীর সংরক্ষণ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন”। এতে উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহম্মেদকে সভাপতি, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি মহিউদ্দিন মুহিনকে সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি সদস্য আজহার উদ্দিনকে করা হয় অর্থ সম্পাদক। এই কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও অর্থ সম্পাদকের যৌথ মালিকানায় খোলা হয়েছে একটি ব্যাংক হিসাব।স্বেচ্ছাসেবী ওই সংগঠনের সদস্য সাজেদ উদ্দিন জানান, গত ৩০ এপ্রিল স্থানীয় আফাজিয়া বাজারে বিভিন্ন পেশার প্রায় সহস্রাধিক মানুষের উপস্থিতিতে এর কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর থেকে বিভিন্ন পেশার মানুষ তাদের আর্থিক অবস্থানুযায়ী অনুদান কমিটির নিকট জমা দেওয়া শুরু করে। হাতিয়ায় বসবাস করা লোকজন ছাড়াও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অনেকে আর্থিক সহযোগিতা করছে এই কাজে। আর্থিক আয় ব্যয়ে স্বচ্ছতা আনার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় এই সংগঠনের নামে খোলা হয়েছে একটি পেজ। যাতে প্রতিদিন অনুদান দেওয়া লোকজনের নাম, পরিচয় ও টাকার পরিমাণ উল্লেখ করে পোষ্ট দেওয়া হয়।এই বিষয়ে “হাতিয়া নদী শাসন ও তীর সংরক্ষণ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন” কমিটির সাধারণ সম্পাদক মহি উদ্দিন মুহিন বলেন, আমাদের এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সবচেয়ে বেশি উৎসাহ পেয়েছি আমরা উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলীর নিকট থেকে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সবচেয়ে বড় আর্থিক সহযোগিতাটি তিনি করেছেন। ইতিমধ্যে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য তিনি ৪ লাখ ফুট বালি ও নগদ ২০ লাখ টাকার অনুধান দিয়েছেন। এটি আমাদের প্রকল্পের জন্য এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় সহযোগিতা। আমরা আমাদের প্রকল্পটি বাস্তবায়নে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সহযোগিতা নিচ্ছি।
স্বাধীনতার পর থেকে অব্যাহত নদী ভাঙনে হাতিয়ার তিনটি ইউনিয়ন সম্পূর্ণভাবে নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যায়। এছাড়া বর্তমানে হাতিয়ার উত্তর পাশে সূখচর, নলচিরা ও চানন্দী ইউনিয়নের বৃহৎ অংশ নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যায়। নদী ভাঙ্গন এই দ্বীপের সবচেয় বড় সমস্যা। গত বছর পানি উন্নয়ন বোর্ড হাতিয়ার এই ভাঙ্গন এলাকায় ২৯৭ মিটার জায়গায় পরীক্ষামূলক কিছু জিও ব্যাগ ফেলেছে। তাতে দেখা যায় এক বছরে উক্ত জায়গায় নদীর ভাঙ্গন অনেকটা রোধ হয়েছে। এর ফলে স্থানীয় মানুষরা মনে করছে শুধু জিও ব্যাগ দিয়ে হাতিয়ার এই নদী ভাঙ্গন অনেকটা রোধ করা সম্ভব।এ ব্যাপারে নোয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী জামিল আহম্মেদ পাটোয়ারী বলেন, হাতিয়া নদীশাসন ও তীর সংরক্ষণ কমিঠির লোকজন আমাদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন। এখানে সবচেয়ে ভালো দিক হলো পানির গভীরতা অনেকটা কমে গেছে। তাতে জিও ব্যাগ ফেলে সুফল পাওয়া যেতে পারে। আমরা একটি ডিজাইন ঠিক করে দিয়েছি। আমাদের একজন প্রতিনিধি সার্বক্ষণিক এই কাজের তদারকি করছেন। আমাদের বাজেট না থাকায় আমরা কাজটি করতে পারছি না। তারা তাদের নিজস্ব অর্থায়নে কাজ করছে। আমি তাদের এই কাজকে সাধুবাদ জানাই।




error: Content is protected !!