মোঃইব্রাহিম নোয়াখালী প্রতিনিধি
স্থানীয় এমপির ব্যর্থতাকে দুষে নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছেন সদ্যঘোষিত কমিটির ১নং সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক সাবেক উপজেলা সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ জাফর আহমেদ চৌধুরী। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের তিনবারের সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান। রাত ৯টার দিকে নিজের ফেইসবুক পেজ থেকে লাইভে এসে তিনি এই পদত্যাগের ঘোষণা দেন। এছাড়াও ওই ঘোষিত কমিটির সদস্য পদ থেকেও পদত্যাগের ঘোষনা দেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ সম্পদাক সিহাব উদ্দিন। গুঞ্জন রয়েছে এ কমিটি থেকে আরো একাধিক নেতা পদত্যাগ করতে পারে।বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) সকালে জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়কের কাছে ওই দুই নেতা পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
এর আগে মঙ্গলবার ২৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক অধ্যক্ষ এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিম যুগ্ম-আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহীন ও সহিদুল্লাহ খান সোহেল স্বাক্ষরিত পত্রে সেনবাগ উপজেলা আওয়ামী লীগের ৬৩ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়।খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঘোষিত কমিটিতে নোয়াখালী-২ (সেনবাগ-সোনাইমুড়ী) আংশিক আসনের সাংসদ মোরশেদ আলমকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। এবং পাঁজনকে যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে। তাঁরা হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের তিনবারের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহম্মদ চৌধুরী, নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক লায়ন জাহাঙ্গীর আলম মানিক, সেনবাগ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বাহার উল্যা বাহার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সম্মেলন প্রস্তুতি পরিষদের আহ্বায়ক শওকত হোসেন কানন এবং সেনবাগ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর টিপুকে। এ ছাড়া কমিটিতে সদস্য করা হয়েছে ৬৩ জনকে।এ বিষয়ে জানতে চাইলে সেনবাগ উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আলহাজ জাফর আহমেদ পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
লাইভে তিনি অভিযোগ করে বলেন, স্থানীয় সাংসদ মোরশেদ আলম নেতাকর্মি চিনেনা, তিনি সময় দিতে পারেননা এবং ঊনি চেষ্টাও করেনা। তাঁর ব্যর্থতার কারণে সেনবাগে বর্তমানে দলের ভালো লোক, ত্যাগী সৎ লোক অবমূল্যায়িত হোতে হোতে অনেকে ঘরে ঢুকে গেছে। সেনবাগে ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে একজন দলীয় প্রার্থী ছাড়া কেউ নির্বাচিত হোতে পারেনি। আমরা সিন্ধান্ত দিয়েছি। আমরা দলের ত্যাগী নেতাদের চাই, তিনি আমাদের সাথে একমত হয়েছে। পরে ব্যক্তিগত ভাবে ওনার ডিউ লেটার দিয়ে ঊনি তদবির করে কিছু লোককে নমিনেশন দেয়। নমিনেশন সঠিক হয়নি বিধায় একজন চেয়ারম্যানও নির্বাচিত করতে পারেন নাই। আমাদের মেয়র নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী আবু জাফর টিপুকে মনোনয়ন দেয়। সেখানে দেখা গেছে ঊনিসহ কিছু লোক দলের বিরোধিতা করে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে নির্বাচিত করে।
তিনি অভিযোগ করে আরো বলেন, এতে আমাদের দলের ভাবমূর্তি অনেক লস হয়ে গেছে। যেটা আমরা মেকাপ করতে পারবনা। এত ব্যর্থতার পরও কালকে জেলা আওয়ামী লীগ থেকে একটা কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। ওই কমিটিতে এমপিকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। আমরা যতটুকু জানি এক উপজেলার লোক অন্য উপজেলায় এমপি হোতে পারে। তবে এক উপজেলার লোক আরেক উপজেলায় আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক বা সভাপতি হোতে পারে এটা আমার জানা ছিলনা। অন্য উপজেলা থেকে হাওলাত করে এনে বানানোর অর্থ হলো সেনবাগ আওয়ামী লীগে নেতৃত্বে যোগ্যতা বলে নেই। যদি যোগ্যতা থাকতো। আমার কথা বাদ দেন। আমাকে অপমান করা হচ্ছে। আরোতো সেনবাগে দুই লক্ষ নয় হাজার ভোটার আছে। একজন লোকও কি আওয়ামী লীগের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করার যোগ্যতা নেই।জাফর আহমদ চৌধুরী বলে, অন্য উপজেলার লোক এনে সেনবাগ উপজেলার আহ্বায়ক বানানোর পরে, আমি মনে করি আমরা যারা সেনবাগে আওয়ামী লীগ করি, আজকে আমরা লজ্জিত। মানুষ আমাদেরকে ধিক্কার দিচ্ছে। যে সেনবাগে যোগ্যতাপূর্ণ লোক না থাকায় অন্য উপজেলা থেকে হাওলাত করে লোক এনে আজকে আহ্বায়ক বানাইছে। যেখানে আমি কাউন্সিলর ভোটে পর পর তিনবার উপজেলা আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সভাপতি। গতকাল যে কমিটি হয়েছে সেখানে হয়তো আমাকে রাখবে না হয় বাদ দিবে। আমার কোন আপত্ত্বি নেই। কিন্তু তা না করে আমাকে আহ্বায়ক কমিটির ১নং যুগ্ম-আহ্বায়ক বানিয়ে কমিটি ঘোষণা করছে। এটা আমি লজ্জিত বোধ করছি। কারণ একজন তিনবার সভাপতি হওয়ার পর সে কি করে ১নং যুগ্ম-আহ্বায়ক হতে পারে। আমি মনে করি এটি সঠিক নয়। তাই উপজেলা আওয়ামী লীগের ১নং যুগ্ম-আহ্বায়ক পদ থেকে তিনি পদত্যাগ করেন।প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন,প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ব্যাপক উন্নয়ন,সুষ্ঠু ভাবে দল ও দেশ পরিচালনা। প্রধানমন্ত্রীর এত সুনাম। কিন্তু দুঃখের সাথে বলতে হয় সেনবাগের ব্যাপারে কেন ওনার এত অনিহা। কেন আমরা সুবিচার পাচ্ছিনা, কেন আমরা সু-নেতৃত্ব পাচ্ছিনা।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে নোয়াখালী-২ (সেনবাগ-সোনাইমুড়ী) আংশিক আসনের সাংসদ মোরশেদ আলমকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহীন বলেন, লাইভে এসে জাফর আহমদ চৌধুরী সদ্যঘোষিত কমিটির পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়ার ভিডিও আমি দেখেছি। দলীয় গঠনতন্ত্র মেনে কমিটি করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত লিখিত কোন পদত্যাগ পত্র আমরা পাইনি। লিখিত পদত্যাগ পত্র পেলে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।