আজ পবিত্র সিরাতুন্নবী (সা.)

প্রকাশিত: ১০:১৯ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৯, ২০২২
উমার রাযী-
আজ ১২ই রবিউল আউয়াল রোববার। বিশ্বমানবতার মুক্তির দিশারী রহমাতুল্লিল আলামিন সাইয়েদুল মুরসালিন খাতামুন্নাবিয়ীন তাজদারে মদীনা জগতকূল শিরোমনি সর্বশ্রেষ্ঠ ও  শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর জন্ম ও ওফাত দিবস। আজ থেকে ১৪ শ ৪৯ বছর পূর্বে ৫৭০ খৃস্টাব্দে এ দিনে সুবহে সাদেকের সময় মক্কা নগরীর সভ্রান্ত কুরাইশ বংশে মা আমেনার গর্ভে জন্ম গ্রহণ করেন। জন্মের পূর্বেই তিনি পিতৃহারা হন এবং জন্মের অল্পকাল পরই বঞ্চিত হন মাতৃস্নেহ থেকে। অনেক দুঃখ, কষ্ট ও প্রতিকূলতার মধ্যদিয়ে চাচা আবু তালিবের আশ্রয়ে বড় হয়ে উঠেন। চল্লিশ বছর বয়সে উপনীত হওয়ার পর তিনি মহান রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে নবুওয়তের মহান দায়িত্ব লাভ করেন। অসভ্য বর্বর ও পথহারা জাতিকে সত্যের সংবাদ দিতে তিনি তাদের কাছে তুলে ধরেন মহান রাব্বুল আলামীনের তাওহীদের বাণী। কিন্তু অসভ্য মূর্খ জাতি তাঁর দাওয়াত গ্রহণ না করে রাসূলের উপর নির্যাতন শুরু করে, সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিভিন্নমুখী চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র করতে থাকে একের পর এক। আল্লাহর সাহায্যের ওপর ভরসা করে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য জীবনবাজী রেখে সংগ্রাম চালিয়ে যান তিনি। ধীরে ধীরে সত্যান্নেষী মানুষ তাঁর সাথী হতে থাকে। অন্যদিকে কাফেরদের ষড়যন্ত্রও প্রবল আকার ধারণ করে। এমনকি এক পর্যায়ে তারা রাসূল (সাঃ) কে হত্যার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। রাসূল (সাঃ) আল্লাহর নির্দেশে জন্মভূমি ত্যাগ করে মদীনায় হিজরত করেন। মদীনায় তিনি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে আল্লাহর আইন বাস্তবায়ন করেন এবং মদীনা সনদ নামে একটি লিখিত সংবিধান প্রণয়ন করেন। মদীনা সনদ বিশ্বের প্রথম লিখিত সংবিধান নামে খ্যাত। এ সংবিধানে ইহূদী খৃস্টান মুসলমানসহ সকলের অধিকার স্বীকৃত হয় যথার্থভাবে। এদিকে মক্কার কাফেরদের ষড়যন্ত্রের সাথে সহযোগিতায় হাত বাড়িয়ে দেয় লেবাসধারী মুনাফিকচক্র। এরা ইসলামের চরম ক্ষতি সাধনে লিপ্ত হয় মহানবী (সাঃ) এর বিরুদ্ধে। মুহাম্মদ (সাঃ) এর  নেতৃত্বে ওহুদ যুদ্ধে এক হাজার মুসলিম সৈন্য রওয়ানা করলে পথিমধ্যে মুনাফিক সর্দার আবদুল্লাহ ইবনে উবাইর নেতৃত্বের ৩শ জন সরে পড়ে এবং ওহুদ যুদ্ধে বিপর্যয় ঘটানোর অপচেষ্টা চালায়। এ যুদ্ধে মুসলমানরা বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখিন হয় একটি ভুলের কারণে। এতে অনেক সাহাবা শহীদ হন। স্বয়ং রাসূল (সাঃ)-এর দন্ত মোবারক শহীদ হয়। ২৩ বছর শ্রম সাধনায় অবশেষে রাসূলে পাক (সাঃ) দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বিজয় অর্জন করেন। মক্কা বিজয়ের মাধ্যমে তা পূর্ণতা লাভ করে। অতঃপর বিদায় হজ্বের ভাষণে তিনি আল্লাহর বাণী শুনিয়েছেন মানবজাতিকে। আজ থেকে তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন তথা জীবন ব্যবস্থাকে পরিপূর্ণ করে দেয়া হলো। তোমাদের জন্য দ্বীন তথা জীবন ব্যবস্থা হিসেবে একমাত্র ইসলামকে মনোনীত করা হয়েছে।
রাসূলের রেখে যাওয়া সেই শান্তি প্রতিষ্ঠার আদর্শ থেকে মুসলমানরা বিমুখ হওয়ায় বর্তমান বিশ্বে অশান্তির আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে। ইসলাম বিরোধীদের হাতে আজ বিশ্বের সর্বত্র লাখো লাখো মুসলমান নিহত হচ্ছে। অন্যায়, অবিচার আর বর্বরতার সীমা ছাড়িয়ে গেছে। তাই অশান্ত এই পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠায় মুহাম্মদ (সাঃ) এর মহান আদর্শ প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। বর্তমানে যারা রাসূলের রেখে যাওয়া আদর্শ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করে যাচ্ছেন তাদের পথ কুসুমাস্তীর্ণ নয়। কাফের ও ইসলামের  লেবাসধারী মুনাফিকদের ষড়যন্ত্র এখনো চলছে। কাফেরদের পাশাপাশি ধর্মের লেবাসধারীরাও ইসলামকে কলঙ্কিত করতে চায়।
কাফের, মুশরিক ও মুনাফিকদের কোন ষড়যন্ত্রই রাসূলের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে পারেনি, আজও পারবে না, কেননা আল্লাহ বলেছেন, সত্য সমাগত, মিথ্যা বিতাড়িত। আর নিশ্চয়ই মিথ্যা বিলুপ্তির জন্য। সুতরাং সত্যের সংগ্রামে সাফল্য অনিবার্য।
মানুষ রাসূল সা. এর জন্মের এ দিনটিকে বিভিন্নভাবে উদযাপন করে থাকে: কেউ কেউ এ উপলক্ষে জমায়েত হয়ে নবীজীর জন্মের ঘটনা আলোচনা করে এবং বক্তৃতা ও কাসীদা পড়ে। কেউ বা মিষ্টি-খাবার প্রভৃতি তৈরী করে বিতরণ করে। কেউ কেউ মসজিদে তা উদযাপন করে, কেউ বা উদযাপন করে বাড়িতে।
আজ পবিত্র সিরাতুন্নবী (সা.) উপলক্ষে বিভিন্ন ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। রাসূল (সাঃ)-এর সীরাতের উপর আলোচনা, সিম্পোজিয়াম, সেমিনার ও দোয়া মাহফিলসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে বাংলাদেশ বেতার ও  টেলিভিশনসহ বিভিন্ন চ্যানেল বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করছে। জাতীয় দৈনিকগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। আজ সংবাদপত্র সমূহে ছুটি পালিত হবে। তাই আগামীকাল সোমবার দৈনিক পত্রিকাসমূহ প্রকাশিত হবে না।
বাণী : পবিত্র সিরাতুন্নবী (সা.) উপলক্ষ্যে প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পৃথক পৃথক বানী দিয়েছেন। বানীতে তারা মুসলমান ভাই বোনদের প্রতি শুভেচ্ছা জানান এবং রাসূল (সা:) এর আদর্শ নিজেদের জীবনে প্রতিফলন ঘটাতে আল্লাহর কাছে দোয়া করেন।
পবিত্র সিরাতুন্নবী (সাঃ) উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি বিশ্ববাসীসহ মুসলিম উম্মাহকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানান।



error: Content is protected !!