আজ সেই ভয়াল ২৫ শে ফেব্রুয়ারী। ইতিহাসের এই জঘন্যতম দিনের ১৩ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ।

প্রকাশিত: ১:১২ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২২

বিশেষ প্রতিবেদন।

আজ সেই ভয়াল ২৫ শে ফেব্রুয়ারী। ইতিহাসের এই জঘন্যতম দিনের ১৩ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ। বাংলাদেশের ইতিহাসে কলঙ্কিত, লোমহর্ষক ও হৃদয়বিদারক ঘটনা হচ্ছে পিলখানা হত্যাকান্ড। কি নৃশংসভাবে ৫৭ জন মেধাবী সেনা কর্মকর্তাসহ মোট ৭৪ জনকে হত্যা করা হলো তা সত্যিই হৃদয়বিদারক। সময়ের আবর্তে ২৫ ফেব্রুয়ারি এই কলঙ্কজনক দিনটি আমাদের মাঝে বারবার ঘুরেফিরে আসে। ২০০৯ সালের এই দিনে রাজধানীর পিলখানায় অবস্থিত বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি-বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) হেডকোয়ার্টারে চলে নারকীয় হত্যাকান্ড। নিহত হন ব্রিগেডিয়ার শাকিল আহমদসহ ৫৭ জন মেধাবী সেনা কর্মকর্তা। পিলখানা হত্যাকান্ডের পেছনে যে উদ্দেশ্য ছিল তা হলো আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে নিশ্চি‎হ্ন করা। ষড়যন্ত্রকারীরা মেধাবী সেনা অফিসারদের হত্যা করে সেনাবাহিনীকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল। ন্যাক্কারজনক এই পিলখানা হত্যাকান্ড, বাংলাদেশের ইতিহাসে জঘন্যতম দিনের ১৩ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ শুক্রবার।

এই হত্যাকান্ডের পেছনে যে কারণটি ছিল তা হলো আমাদের ঐক্যহীনতা। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে সাড়ে সাত কোটি বাঙালি ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশ স্বাধীন করে। কিন্তু স্বাধীনতার বিগত ৪৪ বছরে একদিকে বৈদেশিক ষড়যন্ত্র পক্ষান্তরে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিভক্তিসমূহ একটি দিনের জন্য এই জাতিকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে দেয়নি। পশ্চিমা মতাদর্শভিত্তিক বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী রাজনৈতিক দল এই জাতিকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করে দেয়। এসব অপশক্তি না থাকলে আমরা একটি একক ও শক্তিশালী জাতিসত্তা গঠন করতে পারতাম। আমাদের এই অনৈক্যের সুযোগে আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশকে ঘিরে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী শক্তি এবং আধিপত্যবাদী রাষ্ট্রের যে ষড়যন্ত্র সেই ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতার ফসল হচ্ছে পিলখানার নারকীয় ট্রাজেডি।

পরিশেষে বলতে চাই, আমাদের এই প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশ, এই এক টুকরা মাটি; এদেশের মাটিতে আমরা সেজদা করি, এদেশে আমাদের পূর্বপুরুষদের অস্তিমজ্জায় মিশে আছে। লাঙল নিয়ে আমরা এদেশের মাটির বুক চিড়ে ফসল ফলাই এরপর আমরা ক্ষুধা নিবারণ করি। আজ দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে এদেশকে অস্থিতিশীল করে তোলার লক্ষ্যে দেশ ও জাতিকে ভয়াবহ বিপদের মধ্যে নিক্ষেপ করা হচ্ছে। এভাবে হানাহানি করতে করতে ইরাক-সিরিয়ার মতো এদেশকে ধ্বংস করে দিতে পারি না। এদেশ যদি ইরাক-সিরিয়া-আফগানিস্তান হয় তাহলে আমাদের কারও পায়ের নিচে মাটি থাকবে না। তাই আজ সময় এসেছে, আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে বিদেশি শকুনদের কালো থাবা থেকে রক্ষা করতে ধর্মের প্রকৃত আদর্শ দিয়ে ধর্মবিশ্বাসের অপব্যবহার রোধ এবং সব ধরনের অন্যায়, অসত্য, জুলুম, জঙ্গিবাদ ও অপরাজনীতির বিরুদ্ধে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে ১৬ কোটি বাঙালিকে ঐক্যবদ্ধ করা। এটা একদিকে আমাদের ঈমানি ও ধর্মীয় দায়িত্ব পক্ষান্তরে নাগরিক কর্তব্য।

উল্লেখ্য যে, ঐক্যহীন জাতিবিনাশী অপরাজনীতির ধারক-বাহক অশান্তির সিস্টেমের সৃষ্ট রাজনৈতিক হানাহানি ও স্বার্থের নামে রাজনীতির কারণে সংঘটিত হয় ১/১১। ১/১১ সরকারের ধারাবাহিকতার ফসল হিসেবে ২০০৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে। তার দুই মাসের মাথায় অর্থাৎ ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ঘটে পিলখানার নারকীয় হত্যাকান্ড। সেদিন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পিলখানার দরবার হলে ঘাতকরা জমায়েত হয়। এরপরই নারকীয় হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়। নৃশংসভাবে শহীদ করা হয় ৫৭ জন মেধাবী সেনা কর্মকর্তাসহ মোট ৭৪ জনকে। অভিযোগ আছে, হত্যাকান্ডের পর ষড়যন্ত্রকারী স্বার্থান্বেষীরা তাদের ঘাতকদের পালিয়ে যেতে সহায়তা করেছে। নারকীয় ট্রাজেডির পর যখন নিহত সেনা অফিসারদের ক্ষতবিক্ষত লাশগুলো বের করা হয় তখন নিহত স্বজনদের কান্না-আহাজারিতে বাংলার আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে উঠেছিল




error: Content is protected !!