মিঠুন গোস্বামী রাজবাড়ী প্রতিনিধি
সময় যত বাড়ছে ততই যেন ইটের ভাটাগুলোতে বাড়ছে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা। দেশের শিশুশ্রম আইনকে তোয়াক্কা না করে শিশুদের দিয়ে কাজ করাচ্ছেন ভাটার মালিকরা। ভাটার ঝুঁকিপূর্ণ কাজে মজুরি বৈষম্যেরও শিকার হচ্ছে ভাটায় কাজ করা এই সকল শিশুরা। বিভিন্ন সময় বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে এলেও এ ব্যাপারে তেমন কোনও পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না।
সরেজমিনে রাজবাড়ীর মোট ৮০টি ইটভাটার মধ্যে প্রায় ২৩টি ইটভাটায় গিয়ে দেখা যায়, স্কুল পড়ুয়া প্রায় দুই শতাধিক শিশু ভাটাগুলোতে কাজ করছে। দুই হাজার থেকে দুই হাজার দুইশ’টি ইট শুকানোর জন্য প্রতিটি শিশুকে দেওয়া হয় মাত্র ৭০ থেকে ৮০ টাকা। অথচ এই কাজ করানোর জন্য একজন শ্রমিক নিয়োগ দিলে তাকে দিতে হতো ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। মজুরি সাশ্রয় করতে আইন অমান্য করে এভাবে শিশুদের কাজে লাগাচ্ছেন ভাটার মালিকরা।
পাংশা উপজেলার কলিমহর ইউনিয়নের সাঁজুরিয়াই কৃষি জমিতে গড়ে ওঠা এটিবিবি ব্রিকস। এখানে নিয়মিত কাজ করে সাঁজুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র ইব্রাহীম (৯)। সে ওই এলাকার হানেফ ইসলামের ছেলে। একই স্কুলের ছাত্র ও ইব্রাহীমের সহপাঠী ইমন (১০) ওই ভাটায় কাজ করে।
তাদের মতো অসংখ্য শিশু জেলার প্রায় ৮০টি ইটভাটায় কাজ করছে। অনেক শিশুকে দেখা গেছে ইটভাটার মূল প্ল্যাটফর্মের উপরিভাগে কাজ করতে। তাছাড়া অনেকে চুল্লিতে কয়লা বা কাঠ দেওয়ার কাজও করছে, যা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। অনেক সময় মাটিভর্তি ট্রলি ঠেলে নিয়ে যাওয়ার কাজ করতে দেখা যায় শিশুদের।
এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভাটা মালিক বলেন, ‘অধিকাংশ ভাটার মালিকেরা মনে করে শিশুরা কাজ করছে তাতে কী হয়েছে। এ কাজ তো বেশি কষ্টদায়ক নয়। গরিব মানুষ এখানে কাজ করে যা আয় করছে, তাতে পরিবারের ব্যয় নির্বাহ হচ্ছে। এ বিষয়টি তো সাংবাদিকদের দেখার কথা নয়। এগুলো যাদের দেখার কথা, তারা তো নিশ্চুপ। শিশুরা স্কুল ছুটির পর ইটভাটায় কাজ করে। এতে তো কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তাছাড়া শিশুরা তো ভাটার নিয়মিত শ্রমিক নয়। তাই এ ব্যাপারে কারও নাক গলানোর প্রয়োজন নেই।’
এব্যাপারে শিশুশ্রমে যুক্ত একাধিক শিশুর পরিবারের সাথে কথা হলে তারা জানান, আমাদের মতো পরিবারের শিশুরা কাজ না করলে সংসার চলবে না, এমন পরিবারকে কিছু ভাতার ব্যবস্থা করে দিলে আমারা একটু স্বচ্ছল হয়ে শিশুকে কাজে যোগ দেওয়া থেকে বিরত রাখতাম।
এব্যাপারে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম জানান, এ সংক্রান্ত আইন রয়েছে; তবে তা এখনও গেজেটভুক্ত না হওয়ায়, প্রয়োগ করা সম্ভব নয়। এরপরও ইটভাটার মালিকের বিরুদ্ধে আইন অমান্যের কোনও অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিশেষ করে শিশুশ্রমের বিষয়ে।
শ্রম আইন-২০০৬-এর ২৮৪ ধারা অনুযায়ী, ‘কোনো ব্যক্তি কোনো শিশু বা কিশোরকে চাকরিতে নিযুক্ত করলে অথবা আইনের কোনো বিধান লঙ্ঘন করে কোনো শিশুকে চাকরি করার অনুমতি দিলে, তিনি ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন।’