কে এম শাহীন রেজা কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি।।
বর্তমান পেক্ষাপটে বাংলাদেশে কর্মক্ষেত্র বাড়ছে না। অপরদিকে ছাঁটাই হচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে হাজার হাজার কর্মজীবী যুবকরা। ফলে অনেকেই বেকার থেকে যাচ্ছে। চাকরি যেন ‘সোনার হরিণ’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনকি বেকার যুবকরা ব্যর্থ হয়ে চাকরির সন্ধানে ধর্ণা দিচ্ছেন বিভিন্ন মানুষের কাছে। এ সুযোগে এক শ্রেণীর প্রতারক চাকরির নামে প্রতারণার ফাঁদ পেতে বসে আছে। এই ফাঁদে পড়ে অনেকেই প্রতারিত হচ্ছেন। এতে অনেকে চাকরি পাওয়ার আসায় উপরি দিতে গিয়ে সর্বস্ব হারাচ্ছেন।
এমনি এক প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার ৯ যুবকের সাথে। চাকরি দেয়ার নামে বেকার ঐ যুবকদের কাছ থেকে এক লক্ষ ৪ হাজার টাকা বাগিয়ে নিয়ে লাপাত্তা আলীম শেখ ও জিকু নামে দুই প্রতারক। এ ঘটনার পর থেকে ভুক্তভোগীরা আলীম শেখ ও জিকুর সাথে যোগাযোগ করলে উল্টো হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে বেকার যুবকরা প্রতারিত হয়ে তাদের জমানো সঞ্চয় হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
সোমবার দুপুরে ভুক্তভোগী যুবক এনামুল,সাজু, শামীম ও নাজমুলের সাথে কথা হয় প্রতিবেদকের। তারা জেলার কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের গট্রিয়া গ্রামের বাসিন্দা। তাদের মধ্যে শামীম রেজা ২০ বছর বয়সী একজন যুবক। বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি দিতে দুর সম্পর্কের আত্মীয় আলীম শেখ তাকে প্রাণ আর এফ এল কোম্পানিতে কুষ্টিয়ার আওতায় সি এম পদে চাকরির প্রলোভন দেয়। বিভিন্ন পদে চাকরী দেয়ার জন্য প্রতারক আলীম সাথে আরো কয়েকজনকে আবেদন করতে বলেন। সে অনুযায়ী তিনি গট্রিয়া গ্রামের নাসিম হোসেন(২০), নাজমুল আলম(৩০), এনামুল হক(২৯), শুভ হোসেন(১৯), সাজু ইসলাম(২২), রাশু উদ্দিন(২০), বানিয়াপাড়া গ্রামের হাফিজুর রহমান(২০) ও শিলাইদহের সাহেদ হোসেন(২৩) কে চাকরির বিষয়টি জানান।
ভুক্তভোগী যুবক শামীম রেজা বলেন, প্রতারক আলীম শেখ যদুবয়ারা ইউনিয়নের পূর্ব যদুবয়রা গ্রামের ছাতিয়ান ব্রীজ সংলগ্ন আজাহার পেচীর ছেলে। পূর্ব পরিচিত হওয়ায় আমরা তাকে বিশ্বাস করেছিলাম। এর মধ্যে আলীম শেখ আরেক প্রতারক একই গ্রামের আলিমের ছেলে জিকুকে প্রাণ আর এফ এল কোম্পানির কুষ্টিয়া টি,এস,এম সাজিয়ে আমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। গত ১১ মার্চ তারা দু’জনে চাকুরির যোগদানপত্র দেয়ার নাম করে আমাদের কাছ থেকে নগদ,বিকাশ ও রকেটের মাধ্যমে ১ লক্ষ ৪ হাজার টাকা আত্মসাৎ করে। পরবর্তীতে গত ১৩ এপ্রিল সবার হাতে একটি যোগদান পত্র ধরিয়ে দিয়ে লাপাত্তা হয়ে যায়। আমরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারি আমাদেরকে যে যোগদানপত্র দেয়া হয়েছে তা ভুয়া।
এদিকে ভুয়া যোগদান পত্রের কপি প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। সেখানে ভুয়া টি,এস,এম এর স্বাক্ষরযুক্ত করে বিভিন্ন জনকে বিভিন্ন পদে আগামী ১০ মে কর্মক্ষেত্রে যোগদানের কথা বলা হয়েছে। এছাড়া যোগদানের তিনদিনের মধ্যে হেড অফিসে না পৌছালে সংশ্লিষ্ট স্ট্যাফের বেতন কমিশন স্থগিত রাখা হবে বলে উল্লেখ করা হয়।
ভুক্তভোগী আরেক যুবক নাজমুল আলম বলেন, বেকারত্ব দুর হবে এই ভেবে চাকরির আশায় ছুটেছিলাম। কিন্তু প্রতারণার শিকার হবো ভাবি নাই। কিছু সঞ্চয় ছিল চাকরির আশায় তাও তাদের হাতে তুলে দিয়েছি। তারা তাদের ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বরও বন্ধ করে রেখেছে। বাধ্য হয়ে প্রতারক আলীম শেখ ও জিকুর বাড়ি পর্যন্ত গিয়েছিলাম। কিন্তু কোন প্রতিকার পাইনি। উল্টো তারা আমাদের না চেনার ভান করছে। তাছাড়া চাকরির নামে আমাদের কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর করে নিয়েছে তারা। এর প্রতিকার পাবো কিভাবে জানি না। তবে আমরা আইনের আশ্রয় নিবো।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতারক আলীম শেখ ও জিকুর বাড়ি পাশাপশি। তারা সম্পর্কে বন্ধু। এর আগেও চাকরি দেয়ার নামে প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। এ ব্যাপারে জানতে আলীম শেখের ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বর ০১৭৬১-৯৩৬১৮৪ ও জিকুর ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বরে ০১৩০৩-৮৫৭০৬০ যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাকিবুল ইসলাম(তদন্ত) বলেন, অভিযোগ পেলে তদন্ত করে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।