কুষ্টিয়ার একই গ্রামে অবৈধ দশটি ইট ভাটা: প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ
কে এম শাহীন রেজা কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি।।
পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে কুষ্টিয়া কুমারখালী উপজেলার যদুবয়রা ইউনিয়নের কেশবপুর ৪ নং ওয়ার্ড। গড়াই নদীর তীরে গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ দশটি ইটভাটা। এ কে বি ব্রিকস মালিক আমিরুল ইসলাম বাবু, সৈনিক ব্রিকস মালিক মোঃ আঃ করিম, জে এন ব্রিকস মালিক সামছুল সাগর, এস আর বি মালিক আরিফুল ইসলাম, মহুয়া ব্রিকস মালিক আনোয়ার হোসেন এবং আরিফুল ইসলাম ইটের ভাটা । এই সমস্ত ইট ভাটা’র’ মালিক গন গ্রাম জুড়ে প্রায় ১ শত ৫০ বিঘা ফসলি জমি লিজ নিয়ে ইটের ভাটা তৈরি করেছে। বছর- বছর ইটের ভাটা বাড়ছে এই ওয়ার্ডে। প্রতিবছর এই ওয়ার্ডে ইটের ভাটা নির্মাণ করা হচ্ছে কিভাবে ? ওই সকল ইটের ভাটার নেই কোন অনুমোদন। সব কয়টি ভাটার পাশেই লোকালয় ও কৃষি জমি, শিক্ষা ও প্রতিষ্ঠান।
গাছ কেটে খড়ি বানিয়ে এসব ইটভাটাগুলোতে ইট পোড়ানোর হচ্ছে। খরচ সাশ্রয়ের জন্য সরকারি নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে অনেকেই নির্ভয়ে প্রকাশ্যেই পোড়াচ্ছে কাঠ। এসব ভাটাগুলো পড়েছে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ও ভাটার ধোঁয়ায় আশপাশের পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। ফসলি জমি গিলে খাচ্ছে, ইট ভাটা। বর্ষার পানি জমি থেকে নেমে যাওয়ার পর থেকে যত্রতত্র পুকুর খনন ও ইটভাটা ফসলি জমি সাবাড় করে ফেলছে। এটা দিন রাত চললেও দেখার কেউ নেই। জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়াই একটি ওয়ার্ডে গড়ে উঠেছে ১০ টি ইটের ভাটা। কোনো নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে এসব ভাটায় ইট তৈরিতে আশে পাশের গ্রামের ফসলি জমির মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে গত এক যুগে এলাকায় শত শত একর ফসলি জমি নষ্ট করে শতাধিক পুকুর খনন করা হয়েছে। প্রশাসনের নীরবতায় প্রতিবছরই পুকুর খননের সংখ্যা বেড়ে উজাড় হচ্ছে ফসলি জমি। ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় বায়ু দূষণ অতিমাত্রায় বেড়ে যাওয়ায় ক্রমাগত জনস্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে। এছাড়া প্রধান সড়কের সাথে একাধিক ইটভাটা হওয়ায় চলাচলকারী যাত্রীদের প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাতে হয়।তবে কেউই তা কর্ণপাত না করে ইটভাটা চালু রেখেছে।জানা যায়, ইট প্রস্তুত ও ভাটা (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ অনুযায়ী কৃষিজমি বা পাহাড়-টিলা অথবা যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ব্যতীত মৌজা পুকুর বা খাল-বিল বা খাঁড়ি বা দিঘী বা নদ-নদী বা হাওর-বাওড় বা চরাঞ্চল বা পতিত জায়গার মাটি ব্যবহার নিষিদ্ধ।
প্রধান সড়কের পাশে, জনবসতি এলাকায়, কৃষিজমি, বন ও জলাভূমির এক কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপনও বে আইনি। এমনকি উপজেলা ইউনিয়ন বা গ্রামীণ সড়কে ভারী যানবাহনে ইট বা ইটের কাঁচামাল পরিবহন করাও অপরাধ বলে গণ্য হবে। স্থানীয়দের অভিযোগ, এক ওয়ার্ডে দশটি ইটভাটা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। এসব ইটভাটার বেশির ভাগই প্রভাবশালী হওয়ায় অনেকটা দেখেও না দেখার ভান করে আছেন স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কয়েক গজের মধ্যে ইটভাটা। এগুলোতে প্রক্যাশে কাঠ পোড়ানো হয়। স্থানীয় কৃষক রবিউল বলেন, ইটের ভাটার কারণে আমার বেগুন চাষ, কলা চাষ করতে খুব সমস্যা হচ্ছে । ইটের ভাটা কাঠ পুড়ানোর ছায় কারণে বেগুন ও কলা ফলন ভালো হচ্ছে না। এই অবৈধ ইটের ভাটা, কেউ বন্ধ করতে তৎপর নয়। এসব ইটভাটার তাপে নারিকেল গাছের ফল ছোট হয়ে গেছে। গাছগুলো লাল হয়ে যাচ্ছে। লোকালয়ের মধ্যে থাকা ভাটায় ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে কৃষকের ফসলের। মাঝে মাঝে পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকজন আসেন। কিন্তু তারা চলে যাওয়ার পরপরই ভাটা আবার চালু হয়ে যায়। তা ছাড়া বেশির ভাগ ইটের ভাটায় ব্যবহার করা হচ্ছে কম উচ্চতার টিনের চিমনি। ইট ভাটার ধোঁয়ায় আশপাশের পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। এই সম্পর্কে যদুবয়রা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম বলেন, কয়েকটি ইটের ভাটা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করেছেন। বেশিরভাগ ইটের ভাটা কোন আইন কানুন মানে না। এই বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর প্রযোজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এমন আশা আমার। কুষ্টিয়া পরিবেশ অধিদপ্তর উপ পরিচালক আতাউর রহমান জানান, এই বিষয়ে আমরা যে কোন সময় অভিযান চালাবো। পরিবেশ অধিদপ্তরের নিয়ম মেনে ইটের ভাটা চালাতে হবে’ নয় তো ইটের ভাটায় বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলবে। কুমারখালী উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা রাজিবুল ইসলাম খান বলেন, অবৈধভাবে যারা ইটের ভাটা তৈরি করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। পরিবেশবাদীদের দাবি কোন ছাড় পত্র ছাড়াই, কুমারখালী উপজেলার দিনের পর, দিন যে ভাবে ইটের ভাটা তৈরি হচ্ছে তাতে করে অচিরেই পরিবেশ বিপর্যয় দেখা যেতে পারে।