খরা, বৃষ্টি, পোকা আক্রমন ও লোডশেডিং এর কারণে হবিগঞ্জে ২৪টি চা বাগানের চায়ের উৎপাদন ধস
সৈয়দ আখলাক উদ্দিন মনসুর শায়েস্তাগঞ্জ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি \
হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার পার্শ্ববর্তী উপজেলা মাধবপুর,
চুনারুঘাট, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলায় চা বাগান গুলোতে একদিকে
খরা অন্যদিকে লোডশেডিংয়ের কারণে হবিগঞ্জের ২৪টি চা শিল্প অস্তিত্ব
সংকটে পড়েছে। খরার কারণে ভরা মওসুমে চা গাছে নানা রোগ আর
লোডশেডিংয়ের কারণে উৎপাদন ব্যহত হওয়ার কারণে লস্করপুর ভ্যালির চায়ের
উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার পাশাপাশি চা শিল্পে চাহিদার চরম
ঘাটতি দেখা দিয়েছে। জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত পুরো মৌসুমে
চা উৎপাদন। ভরা মৌসুমেও খরার কারণে কাঁচা চা পাতা না পাওয়ায়
ইতোমধ্যে কোনো কোনো বাগানে মেশিন বন্ধ রয়েছে। যা ভ্যালির
ইতিহাসে এই প্রথম ঘটনা। চুনারুঘাট উপজেলার লস্করপুর ভ্যালির ২৪টি
বাগানের মধ্যে ২০২১ সালে চায়ের উৎপাদন ছিল এক কোটি সাড়ে ১৭
লাখ কেজি। যা চলতি বছরের লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু চলতি বছর
খরার কারণে চায়ের মৌসুম ফেব্রæয়ারির পরিবর্তে শুররু হয় মার্চ
মাসে। উৎপাদনের শুরু তেই চা বাগানগুলো খরার কবলে পড়ে। চা উৎপাদনের
ভরা মওসুম চলছে এখন। অথচ গত তিন সপ্তাহ ধরে দেশে চলছে প্রচন্ড
তাপদাহ। ভ্যালির চা বাগানগুলো খরার কবলে পড়ে রেড স্পাইডার ও
হেলোফিলিস রোগের পাশাপাশি এক ধরনের বড় বড় পোকার আক্রমন
মারাত্বক আকার ধারণ করেছে। এসব পোকা দ্রæত কাঁচা চা পাতা খেয়ে
ফেলে। খরা আর নানা রোগের কারণে ভরা মৌসুমে যেখানে বড় চা
বাগানগুলো দৈনিক ৪৫-৫০ হাজার কেজি কাঁচা চা পাতা উত্তোলন
হওয়ার কথা, সেখানে হচ্ছে দৈনিক ১০-১২ হাজার কেজি পাতা। উৎপাদন
হ্রাস পাচ্ছে প্রায় তিন গুন। ভ্যালির সবচেয়ে বড় ডানকান ব্রাদার্সের
চান্দপুর চা বাগানে দৈনিক চা পাতা যা চয়ন হয় তা দিকে ফ্যাক্টরি
চালানো সম্ভব নয় বিধায় তারা একই কোম্পানির আমু বাগানে চা
পাতা পাঠিয়ে দিচ্ছে। চান্দপুর চা বাগানে এ সময়ে দৈনিক ৪৫
হাজারেরও বেশি চা পাতা চয়ন হওয়ার কথা, অথচ চা পাতা পাওয়া যাচ্ছে
দৈনিক ১০ থেকে ১২ হাজার কেজি। এমতাবস্থা বিরাজ করছে ভ্যালির
আমু, নালুয়া, লস্করপুর, চন্ডিচড়াসহ বিভিন্ন বাগানে। আর ছোট
ছোট বাগানগুলোতে অবস্থা আরও ভয়াবহ। এতে চলতি বছর লক্ষ্যমাত্রা
অর্জিত হবে না বলে বলছেন চা সংশ্লিষ্টরা। গত জুন মাসে প্রতিটি
বাগানে ১৫ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত উৎপাদন ঘাটতি রয়েছে। এক দিকে
খরা আর রোগের আক্রমন, অন্যদিকে যোগ হয়েছে লোডশেডিং।
উপজেলায় দৈনিক ২ ঘন্টা লোডশেডিং হওয়ার কথা থাকলে
লোডশেডিং হচ্ছে দৈনিক ৮ থেকে ১২ ঘন্টা। এ অবস্থায় অধিকাংশ
চা বাগানের ফ্যাক্টরি প্রতিদিন গড়ে ১০ ঘন্টা বন্ধ থাকছে। এ ছাড়া বার
বার ফ্যাক্টরি বন্ধ হওয়ার কারণে চায়ের গুণগত মান নষ্ট হচ্ছে। একদিকে খরা
আর রোগের আক্রমনে চায়ের গুণগত মান নষ্ট হচ্ছে অন্যদিকে বিদ্যুৎ এর
কারণে ফ্যাক্টরি বার বার বন্ধ থাকায় নষ্ট হচ্ছে বিপুল পরিমাণ চা। চায়ের
উৎপাদন চালু রাখতে গিয়ে কোনো কোনো বাগান গ্যাস জেনারেটর
ব্যবহার করার কারণে তাদের উৎপাদন খরচও বাড়ছে। একদিকে খরার কারণে
পাওয়া যাচ্ছে না চায়ের পাতা, অন্যদিকে ফ্যাক্টরি চালু রাখতে
বাগানগুলোতে গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত খরচ। অথচ নিলামে চায়ের মুল্য না
বেড়ে দিন দিন কমছে। ফলে চায়ের উৎপাদন এবং মুল্য ধরে রাখতে না পেয়ে
চরম ক্ষতির মধ্যে পড়েছেন চা বাগানগুলো। চান্দপুর চা বাগানের সিনিয়র
ব্যবস্থাপক শামীমুল হুদা বলেন, কোম্পানীর ৫টি বাগানের মধ্যে চায়ের ভরা
মৌসুমে চা পাতা পাওযা যাচ্ছে না, পাতা চয়ন কমে গেছে কয়েকগুন।
মাঝে মধ্যে বৃষ্টি হচ্ছে আবার খরা থাকায় রোগের আক্রমনও বাড়ছে।
পাশাপাশি বিদ্যুতের সমস্যা নিয়ে আমাদের নতুন করে ভাবতে হচ্ছে।
সবমিলিয়ে চায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনই এখন কঠিন চ্যালেঞ্জ হযে
দাড়িয়েছে। দেউন্দি চা বাগানের ডিজিএম ও সিনিয়র ব্যবস্থাপক
রিয়াজ উদ্দিন বলেন, লালচান চা বাগান, নোয়াপাড়া চা বাগান ও দেউন্দি
চা বাগানে চায়ের ভরা মৌসুমে প্রচন্ড খরায় আমাদের সেচ দিতে হচ্ছ।
নতুন করে বিদ্যুৎ সমস্যা আমাদের মরার উপর খারার গা হয়ে দাড়িয়েছে।
সেচ এবং জেনারেটর ব্যবহারে উৎপাদন খরচ কয়েকগুন বাড়ছে। এছাড়া
নানা রোগের আক্রমন তো আছেই। লালচান চা বাগান ব্যবস্থাপক
মোফাজ্জল হোসেন ও নোয়াপাড়া চা বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক
সোহাগ আহমেদ বলেন পুরো চা বাগানে চায়ের উৎপাদনে বাধা
দীর্ঘমেয়াদি খরা, নানা রোগ। নতুন যোগ হয়েছে বিদ্যুতের
লোডশেডিং। সবমিলিয়ে চা শিল্প বড় সমস্যায় পড়তে যাচ্ছে। অপর দিকে
লস্করপুর ভ্যালি চেয়ারম্যান ও তেলিয়াপাড়া চা বাগানের ব্যবস্থাপক মোঃ
রফিকুল ইসলাম এ প্রতিনিধিকে বলেন, পুরো ভ্যালিতেই এবার চায়ের
উৎপাদনে বাধা ও খরা, নানা রোগ ও লোডশেডিং এর কারণেই এসব
সমস্যায় পড়তে হয়েছে। #