গাইবান্ধা গৃহকর্মীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে স্কুলশিক্ষকের বিরুদ্ধে।

প্রকাশিত: ২:৩৯ অপরাহ্ণ, জুন ১০, ২০২০

তারেক আল মুরশিদ,গাইবান্ধা প্রতিনিধিঃ
গাইবান্ধায় সদর উপজেলায় কিশোরী এক গৃহকর্মীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে এক স্কুলশিক্ষকের বিরুদ্ধে। তার নাম ইউনুস আলী। তিনি গাইবান্ধা সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক।
এই ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে গাইবান্ধা সদর থানায় ধর্ষণের শিকার ওই কিশোরীর দাদি বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। এ ঘটনায় জেলা শহর ও সুন্দরগঞ্জে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের বিচার দাবি করেছেন নির্যাতিতার স্বজন ও সচেতন মানুষ।
শিক্ষক ইউনুস সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর ইউনিয়নের নওহাটী চাচিয়া গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে।
জানা যায়, গাইবান্ধা জেলা সদরের থানাপাড়া এলাকার শিক্ষক ইউনুসের বাসায় কাজ করতেন ওই কিশোরী। সেখানে তিন মাস বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে ওই কিশোরীরে ইউনুস ধর্ষণ করেন। ঘটনাটি কাউকে না জানাতে ধর্মগ্রন্থ ও তার শরীর স্পর্শ করে শপথ করান ওই শিক্ষক।
পরে মেয়েটি বাড়িতে গিয়ে ইউনুসের নির্যাতনের বর্ণনা দেন। ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে ভুক্তভোগী পরিবারকে প্রলোভন দেখায় অভিযুক্তের পরিবার। এতে কাজ না হওয়ায় নানা মাধ্যমে হুমকি দেয়া হয় ভুক্তভোগী পরিবারকে। এমনকি পরিবারের কেউ যাতে বাড়ির বাহিরে যেতে না পারে সেজন্য তাদের অবরুদ্ধ করে রাখেন ওই শিক্ষকের লোকজন।
ভুক্তভোগী ওই কিশোরীর পরিবার জানায়, গাইবান্ধা সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ইউনুস আলী সুন্দরগঞ্জের ওই কিশোরীকে পড়াশোনার পাশাপাশি বাড়ির গৃহকর্মীর কাজ করার জন্য গাইবান্ধায় নিয়ে যান। শিক্ষক ইউনুস সদরের থানাপাড়া এলাকায় তিনতলা বাড়িতে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকতেন।
করোনার কারণে সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ওই শিক্ষক বাসাতেই অবস্থান করতেন। বাড়ির লোকজনের আড়ালে ওই কিশোরীকে মোবাইল ফোনে বিভিন্ন পর্ন ছবি দেখাতেন। এছাড়া মেয়েটিকে ফুসলিয়ে ও নানা প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করেন। বিষয়টি যেন কাউকে না জানায় সেজন্য মেয়েটিকে বিভিন্ন ধর্মের বই ও শিক্ষকের শরীর স্পর্শ করিয়ে শপথ করান।
ওই কিশোরীর বাবা আরও জানান, `ইউনুস ও তার বউ আমার বাড়িতে এসে মেয়েটাকে পড়াশোনা আর বাড়ির টুকটাক কাজ করার জন্য নিয়ে যেতে চায়। কিন্তু আমি তাদের প্রস্তাবে রাজি ছিলাম না। বারবার ঘুরতে থাকে আর বলে তোর মেয়ে আমার মেয়ের মতোই থাকবে কোন কষ্ট দেব না। পড়াশোনা করিয়ে বিয়ে দেব। অনেক কথা বলে আমার মেয়েকে নিয়ে যায়। এরপর আমার মেয়েকে ধর্ষণ করে বাড়িতে রেখে যায়।‘
কান্নাজড়িত কন্ঠে ওই গৃহকর্মীর বাবা বলেন, মেয়ের এমন ঘটনার বিচার চাইতে ইউনুসের বাবা গেলেও তিনি কোনো বিচার করেননি। উল্টো তিনি হুমকি দেন।
কিশোরীটির বাবা আরও জানান, এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে বিচার নিয়ে যাই। কিন্তু সেখানে তার (ওই শিক্ষক) লোকজন দিয়ে ঘিরে রাখেন। পরে পরিস্থিতি খারাপ দেখে চেয়ারম্যান আমাকে পাঠিয়ে দেন। এরপর থেকে নানা ধরণের হুমকি ধামকি দিয়ে আসছে। বাড়ি থেকে বের হতে পারছি না। আমি গরিব মানুষ তাই বলে কি এমন অন্যায়ের বিচার পাবো না?-বলেই হু হু করে কেঁদে ফেলেন তিনি।
এদিকে সংবাদকর্মীদের মাধ্যমে বিষয়টি পুলিশ সুপারের নজরে এলে তিনি নির্যাতনের শিকার মেয়েটিকে উদ্ধার করে সদর থানায় নিয়ে আসেন এবং মামলা করার নির্দেশ দেন।
গাইবান্ধা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খান মো. শাহরিয়া বলেন, এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর দাদি একটি অভিযোগ করেছেন। পরে একটি মামলা রুজু হয়েছে। মামলা নং ৩৫। যাচাই-বাছাইয়ের পর অপরাধ প্রমাণিত হলে ওই শিক্ষককে আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে অভিযুক্ত শিক্ষক ইউনুস আলীর মুঠোফোনে একাধিবার কল দেয়া হয়। একবার ফোন ধরলেও সাংবাদিক পরিচয় জানার পর তিনি ফোনটি কেটে দেন।




error: Content is protected !!