চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন আপীল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি আব্দুল হাই
মোঃজামাল হোসেন লিটন,চুনারুঘাট প্রতিনিধি : সবাইকে কাঁদিয়ে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন বাংলাদেশ শ্রম ও আপীল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার ১০ নং মিরাশী ইউনিয়নের আইনত গ্রামের কৃতি সন্তান মো: আব্দুল হাই । রবিবার (২১ ফেব্রয়ারী) বাদ জোহর আইতন জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে জানাযার নামাজ শেষে নিজ গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। চুনারুঘাট উপজেলা সহ বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে আগত হাজার হাজার জনতা অশ্রুসিক্ত নয়নে বিদায় জানিয়েছেন এই মহান ব্যক্তিকে। ঢাকা থেকে মরদেহ বাড়িতে পৌঁছার আগে থেকেই বাড়ির সামনে অপেক্ষমান আত্নীয় স্বজন, নেতাকর্মী ও স্থানীয় লোকজন একনজর দেখার জন্য অ্যাম্বুলেন্স ঘিরে ধরেন। বিচারপতি আব্দুল হাই গত ২ ফেব্রয়ারী করোনায় আক্রান্ত হয়ে ঢাকা পপুলার হাসপাতালে নেয়া হয় । পরবর্তীতে পিজি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। গত শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারী) সকাল ৮ টায় ঢাকা পিজি হাসপাতালে চিকিৎিসাধীন অবস্থায় শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি । তার প্রথম জানানযার নামাজ বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট প্রাঙ্গণে শনিবার বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটে অনুষ্ঠিত হয়। ২য় জানাযার নামাজ রবিবার (২১ ফেব্রুয়ারী) চুনারুঘাট কেন্দ্রীয় ঈদগাহে ১১ টায় ও ৩য় জানাযার নামাজ নিজ বাড়ি আইনত জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে জোহর নামাজ বাদ অনুষ্ঠিত হয়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। জানাযার নামাজে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ, সাংবাদিক, শিক্ষক,বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ সহ সাধারণ মানুষ। উল্লেখ্য : বিচারপতি মোঃ আব্দুল হাই বিচারক জীবনে ৫০ বছর বিচারক হিসেবে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন । মৃত্যুকালে তিনি দুই সন্তান স্ত্রী সহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। বড় ছেলে আরিফুল হাই রাজীব বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক ও ছোট ছেলে ব্যারিস্টার মোঃ ইমরানুল হক সজীব বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য ও সুপ্রিমকোর্টে আইন পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন। বিচারপতি মোঃ আব্দুল হাই ১৯৭০ সালের ২৯ অক্টোবর ইপিসিএস (বিচার) ক্যাডারে (মুন্সেফ) হিসেবে সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন। প্রথম পোষ্টিং হিসেবে নারায়ণগঞ্জ মহকুমা (বর্তমানে সমগ্র নারায়ণগঞ্জ জেলা) দায়িত্ব পান। চাকরিতে যোগদানের মাত্র ৫ মাসের মাথায় ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে একজন নবীন কর্মকর্তা হিসেবে তিনি বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান নেন। তিনি নারায়নগঞ্জের তৎকালীন আওয়ামিলীগ নেতা শমসুজ্জোহা, আব্দুর রাজ্জাক, এম এন এ এড. ফজলুর রহমানের নির্দেশনায় বিভিন্ন মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করেন। তিনি বিভিন্ন পদে সাফল্যের সাথে দায়িত্ব পালন শেষে তিনি ১৯৮৬ সালে জেলা ও দায়রা জজ পদে পদোন্নতি লাভ করে ঝালকাঠি, গাইবান্ধা ও নরসিংদী জেলার দ্বায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে পদোন্নতি পেয়ে প্রশাসনিক আপীল টাইব্যুনালের সদস্য (বিচার) পদে ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালে সচিবালয় কর্মকর্তারা জনতার মঞ্চ তৈরী করলে তিনি তাতে যোদ দেন। পরে আইন, বিচার ও আইন বিষয়ক মন্ত্রনালয়ে যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২৫ মে ২০০০ সাল থেকে ২০০১ সালে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগের আগ পর্যন্ত আইন সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। আইন সচিবের দায়িত্ব পালনকালে তার তত্বাবধানে সুপ্রিম কোর্টের এনেক্স ভবনের কাজ শেষ হয়। ২০০১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারী তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুপ্রিম কোর্টের এনেক্স ভবন উদ্বোধন করেন এবং দায়িত্ব পালনের উপহার স্বরূপ ২০ ফেব্রুয়ারী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান এবং ২২ ফেব্রুয়ারী বিচারপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। মরহুমের ছেলে আরিফুল হাই রাজিব তার পিতার আত্মার মাগফেরাত কামনা করতে সবার দোয়া চেয়েছেন। তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা , চুনারুঘাট উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুল কাদির লস্কর। চুনারুঘাট প্রেস ক্লাব সভাপতি মো: মো: কামরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মো: জামাল হোসেন লিটন।