নবীগঞ্জের আউশকান্দিতে এজেন্ট ইসলামী ব্যাংকে গ্রাহকের কোটি টাকা অর্থ কেলেঙ্কারি

প্রকাশিত: ৭:০৩ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২, ২০২০

নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি ॥ নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি বাজারে অবস্থিত ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং শাখা থেকে গ্রাহকের টাকা নিয়ে ব্যাংকের এজেন্ট ও ম্যানেজারের বিরুদ্ধে কেলেঙ্কারীর অভিযোগ উঠেছে। ইতিমধ্যে এক বিজ্ঞপ্তিতে আউশকান্দি এজেন্ট ব্যাংকিং শাখা পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। যে কোনো প্রয়োজনে ইসলামী ব্যাংক নবীগঞ্জ শাখায় যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। জানা যায়, প্রায় ২বছর পূর্বে নবীগঞ্জ উপজেলার বোরহানপুর গ্রামের আবুল হোসেন চঞ্চলকে আউশকান্দি বাজারে ইসলামী ব্যাংকের একটি এজেন্ট শাখা খোলেন। এজেন্ট শাখায় ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয় চঞ্চল পুত্র শাহ জীপুকে।
ওই এজেন্ট শাখায় হিসাব খোলা, গ্রাহকের এফডিআর, পিনকোড নাম্বার দিয়ে টাকা উত্তোলন, নগদ জমা লেনদেন চলতো। প্রতিদিন শতাধিক গ্রাহক ওই এজেন্টে যোগাযোগ করতেন। পূর্ণাঙ্গ ব্যাংকিং সুবিধা প্রদান করা হতো এজেন্ট শাখায়। আউশকান্দি বাজারের আশপাশ এলাকায় ইসলামী ব্যাংকের কোন শাখা না থাকায় ওই এজেন্ট শাখাটি জমজমাট ছিলো। এ সুযোগটি কাজে লাগিয়েছেন এজেন্ট আবুল হোসেন চঞ্চল ও তার পুত্র শাহ জীপু।
এজেন্ট শাখায় গ্রাহকগণ যে নগদ টাকা জমা করতেন এজেন্ট ব্যাংকিং শাখার ম্যানেজার নিজেরা সীল দিয়ে একটি জমা বাউচার বা রিসিট দিয়ে দিতেন। যারা এফডিআর, ডিপিএস সহ নানা ধরনের সঞ্চয়ী হিসাব খুলতেন। তাদের বেশির ভাগ লোকের এফডিআর ও ডিপিএস রিসিট তারা নিজেদের তৈরী ছিলো। ওই টাকা মুল ব্যাংকে জমা না দিয়ে এজেন্ট ব্যাংকের মালিক নিজের কাছে রেখে দিতেন। সম্প্রতি এক লন্ডন প্রবাসী তার এফডিআর ভাঙ্গানোর জন্য নবীগঞ্জ ইসলামী ব্যাংকে তাদের দেয়া টোকেন নিয়ে গেলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বলেন, এ নামে কোন এফডিআর নেই তাদের ব্যাংকে।
অনেক গ্রাহক এজেন্ট শাখায় তাদের একাউন্টে টাকা জমা দিলেও মুল ব্যাংকের একাউন্টে জমা হয়নি। অনেকে রিসিটও হারিয়ে ফেলেছেন। তারা এখন হন্যে হয়ে ব্যাংক এজেন্টকে খুঁজছেন।
লন্ডন প্রবাসী একজন গ্রাহক আউশকান্দি ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট শাখায় ৫ লাখ টাকার এফডিআর করেন। ৬ মাস পর এফডিআর ভাঙ্গাতে চাইলে এজেন্ট মালিক তাকে এক লাখ টাকা নগদ কর্জ দিয়ে বলেন, আপনি লন্ডন গিয়ে আমাদের টাকা দিয়ে দিবেন। এফডিআর ভাঙ্গানোর দরকার নাই। পরে তিনি লন্ডন চলে যান। সেখান থেকে ইসলামী ব্যাংক নবীগঞ্জ শাখায় যোগাযোগ করে জানতে পারেন ওই নামে কোন এফডিআর তাদের কাছে জমা হয়নি।
এ ব্যাপারে লন্ডন প্রবাসী আসাদুল হক জানান, তিনি বড় অংকের একটি এফডিআর করেছেন। এখন কোন হদিস পাচ্ছেন না। আবুল হোসেন চঞ্চলের নাম্বার বন্ধ রয়েছে।
লন্ডন প্রবাসী মীর মসুদ আলী, প্রবাসী রুবেল বখতের প্রায় ৪০ লাখ টাকা নয়ছয় হয়েছে। দিলারা বেগম নামে একজন গ্রাহক বলেন- তার স্বামী প্রায় ১০ লক্ষ টাকা ঐ এজেন্টে লেনদেন করেছেন। তিনি সরল বিশ্বাসে কোন রিসিট নেননি। এখন রিসিট ছাড়া ব্যাংক তাদের দাবি গ্রহণ করছে না। এভাবে আরো অনেক গ্রাহকগন এভাবে অহরহ দুর্নীতির অভিযোগ করছেন ভুক্তভোগীরা৷
এ ব্যাপারে আউশকান্দি বাজার ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট আবুল হোসেন চঞ্চল এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে ইসলামী ব্যাংক নবীগঞ্জ শাখার ম্যানাজার কায়সার আহমদ সংবাদ প্রকাশ না হওয়ার জন্য সাংবাদিকদেরও ম্যানেজ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে
বলেন, ইসলামী ব্যাংক আউশকান্দি বাজার এজেন্ট শাখায় কোন লেনদেন না করার জন্য আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি। তিনি বলেন, যাদের ডকুমেন্টস আছে তাদের টাকা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ উদ্ধার করে দিবে। তিনি বলেন- আমরা ইতিমধ্যে আউশকান্দি বাজার ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট আবুল হোসেন চঞ্চল এর কাছে থেকে প্রায় ২০ লাখ টাকা উদ্ধার করেছি। বাকি টাকা উদ্ধারে চেষ্টা চলছে। আমাদের সাথে চঞ্চল এর কথা বার্তা চলছে। তিনি বলছেন- যাদের ডকুমেন্টস আছে তাদের টাকা ফেরত দিবেন। আমরা কয়েক দিনের মধ্যে এজেন্টটি নতুন ডিলারে কাছে হস্তান্তর করবো। এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, যারা রিসিট হারিয়ে ফেলেছে তাদের ব্যাপারে আমাদের কিছু করার নেই। এদিকে সচেতন মহলের লোকজন সহ ভুক্তভোগীরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন৷




error: Content is protected !!