নেতৃত্ব ‘ছাড়ছেন’ বিশ্বকাপজয়ী মর্গ্যান
স্পোর্টস ডেস্ক:
লম্বা সময় ধরে হাসছে না ব্যাট। পারফরম্যান্সে ভাটার টান স্পষ্ট। ওয়েন মর্গ্যানের ফর্মহীনতা তাই আলোচনায় অনেক দিন ধরে। এবার নাকি সব কিছুর ইতি টেনে দিতে যাচ্ছেন ইংল্যান্ডের সাদা বলের অধিনায়ক।
ইএসপিএনক্রিকইনফোর সোমবারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় নিশ্চিতভাবেই নেতৃত্ব ছাড়তে যাচ্ছেন মর্গ্যান। মঙ্গলবার সকালে আসতে পারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা।
অনেকে তো মর্গ্যানের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারেরও শেষ দেখতে শুরু করেছেন। দা গার্ডিয়ান তাদের রোববারের প্রতিবেদনে লিখেছে, ইংল্যান্ডের ২০১৯ বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক নাকি ভাবছেন অবসরের কথা।
নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে সদ্য সমাপ্ত সিরিজের আগে মর্গ্যান জানিয়েছিলেন তার ভবিষ্যৎ ভাবনা। বলেছিলেন, দলের জন্য অবদান রাখতে না পারলে সরে দাঁড়াবেন নিজ থেকেই।
তিন ওয়ানডের সিরিজটিতে ডাচদের হোয়াইটওয়াশ করে ইংল্যান্ড। দলগত পারফরম্যান্স দুর্দান্ত হলেও ব্যক্তিগতভাবে ব্যর্থ ছিলেন মর্গ্যান। প্রথম দুই ম্যাচে আউট হন রানের খাতা খোলার আগেই। তৃতীয় ও শেষ ম্যাচ খেলতে পারেননি কুঁচকির চোটের কারণে।
শুধু এই সিরিজেই নয়, সবশেষ দেড় বছর ধরেই ব্যর্থতার বৃত্তে বন্দি মর্গ্যান। ২০২১ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাদা বলে ৪৮ ইনিংস ব্যাটিং করে কেবল একটিতে ছুঁতে পারেন তিনি পঞ্চাশ। ওয়ানডেতে এই সময় ৫ ইনিংসে ব্যাটিং করে ২৫.৭৫ গড়ে রান করেন মোট ১০৩। একমাত্র পঞ্চাশ ছাড়ানো ইনিংসটি এই সংস্করণেই। টি-টোয়েন্টি ৪৩ ইনিংসে রান করেন ৬৪৩। সর্বোচ্চ ৪৭, গড় স্রেফ ১৭.৮৬।
ইংল্যান্ড দলে যে এখন প্রবল প্রতিযোগিতা, তাতে মর্গ্যানের জায়গা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। পেশির চোট বারবার হানা দেওয়াটাও ভোগাচ্ছে তাকে। আগামী বছরের নভেম্বরে ভারতে ওয়ানডে বিশ্বকাপ পর্যন্ত তিনি টিকবেন কিনা, তা নিয়ে সংশয় ছিল আগে থেকেই।
যদিও সতীর্থরা সমর্থন দিয়ে আসছেন মর্গ্যানকে। নেদারল্যান্ডস সিরিজে তার বাজে পারফরম্যান্সের পর জস বাটলার, বেন স্টোকসরা আগের মতোই অধিনায়কের পাশে দাঁড়ান।
বাইরের প্রবল আলোচনার প্রভাব দলের মধ্যে পড়ছে না বলেও দাবি করেন তারা। দবে মর্গ্যানের ওপর হয়তো প্রভাব পড়েছে। তাই বোধহয় সবকিছুর সমাপ্তি এখনই টেনে দিতে চান ৩৫ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার।
তার দীর্ঘদিনের সতীর্থ মইন আলি মনে করছেন, আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শেষ দেখে ফেলেছেন মর্গ্যান। বিবিসির ‘টেস্ট ম্যাচ স্পেশাল’ শোতে এই অলরাউন্ডার বলেন, মর্গ্যানের কাছে দল আগে।
“সে ভালোভাবেই অনুভব করছে যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সঙ্গে তার সম্পর্ক শেষ। আর তার জন্য দল এখনও আগে। যা প্রমাণ করে, সে কতটা নিঃস্বার্থ। অসাধারণ কাজ করেছে সে এবং নিশ্চিতভাবেই সে আমাদের পাওয়া সেরা (অধিনায়ক)।”
ক্যারিয়ারের শুরুটা জন্মভূমি আয়ারল্যান্ডের হয়ে করলেও পরে তিনি বেছে নেন ইংল্যান্ডকে, দলটির হয়ে খেলা শুরু করেন ২০০৯ সালে। ২০১৪ সালে পান পাকাপাকিভাবে ইংলিশদের সীমিত ওভারের দায়িত্ব। ২০১৫ সালে তার নেতৃত্বে ওয়ানডে বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পড়ে যায় তারা।
তার নেতৃত্বে এরপর সাদা বলের ক্রিকেটে পুরোপুরি বদলে যায় ইংল্যান্ড দলটি। এই পথচলায় তার সঙ্গী ছিলেন কোচ ট্রেভর বেইলিশ। এই দুইজনের হাত ধরে ২০১৯ সালে ঘরের মাঠে প্রথমবারের মতো ওয়ানডে বিশ্বকাপ উঁচিয়ে ধরে ইংলিশরা।
বিশ্বকাপ জয় তো আছেই, এমনিতেও সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ইংল্যান্ডের সফলতম অধিনায়ক তিনি। ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দিয়েছেন ১২৬ ম্যাচে, যেখানে জয় ৭৬টি। টি-টোয়েন্টিতে তার নেতৃত্ব ৭২ ম্যাচ খেলে ইংলিশরা জিতেছে ৪২ ম্যাচ। দুই সংস্করণেই ইংল্যান্ডের হয়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচে নেতৃত্ব দেওয়া ও জয়ের রেকর্ড তার।
গণমাধ্যমের খবর সত্যি হলে, নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ওয়ানডেটি হয়ে থাকবে অধিনায়ক হিসেবে মর্গ্যানের শেষ ম্যাচ। হয়তো ক্যারিয়ারেও।
নতুন অধিনায়কের দৌড়ে এগিয়ে আছেন তার সহকারী জস বাটলার। ২০১৫ সাল থেকে এই দায়িত্বে কিপার-ব্যাটসম্যান এরই মধ্যে ১৩ বার ইংলিশদের নেতৃত্বও দিয়েছেন।
নেতৃত্ব ছাড়লে কেবল দলের সাধারণ সদস্য হিসেবে দলে জায়গা ধরে রাখতে পারেন কিনা মর্গ্যান, সেটাও হবে দেখার বিষয়।
ইংল্যান্ডের হয়ে ২২৫ ওয়ানডে খেলেছেন মর্গ্যান। ২৩ সেঞ্চুরি ও ৩৯.৭৫ গড়ে তার রান ৬ হাজার ৯৫৭। দলটির হয়ে এই সংস্করণে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলা ও রান করার কীর্তিও তার। ৬ হাজার রান আছে আর কেবল জো রুটের।
ইংল্যান্ডের হয়ে টি-টোয়েন্টিতেও সবচেয়ে বেশি ২ হাজার ৪৫৮ রান মর্গ্যানের। সবচেয়ে বেশি ১১৫ ম্যাচ খেলার রেকর্ডও তার। ফিফটি আছে ১৪টি, স্ট্রাইক রেট ১৩৬.১৭। টেস্ট খেলেছেন তিনি ১৬টি। ২ সেঞ্চুরি ও ৩ ফিফটিতে রান করেন ৭০০।