‘বিএনপি’ : সময় কথা বলে । ইতিহাস বড়ই নির্মম, কাউকেই ক্ষমা করে না !!
৪ এপ্রিল ১৯৭৯ । ‘দ্বিতীয়’ জাতীয় সংসদে সংবিধানের ‘পঞ্চম সংশোধনী’ বিল উত্থাপন করলেন তৎকালীন আইন প্রতিমন্ত্রী ব্যারিস্টার আবদুস সালাম তালুকদার । সংসদে তখন বিএনপি’র আসন সংখ্যা ২০৭ জন । আসাদুজ্জামান খানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ( মালেক ) -এর সংসদ সদস্য ৩৯ জন । মিজানুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ( মিজান ) -এর সদস্য সংখ্যা ২ জন । অন্যান্যের মধ্যে সংসদে আছেন, তৎকালীন একতা পার্টির নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত । সংসদে বিএনপি’র ‘দুই তৃতীয়াংশ’ সংসদ সদস্য । তাই ‘সংবিধান – সংশোধনী’ বিল পাস বিএনপি’র জন্য সময়ের ব্যাপার মাত্র ।
সেই বিলে কুখ্যাত ‘ইনডেমনিটি’ অধ্যাদেশ সহ অনেকগুলো ‘মানবতা বিরোধী এবং নিপীড়নমূলক কালো আইনকে বৈধতা দেওয়ার প্রস্তাব’ করা হয়েছে ।
সংসদের বিরোধী দলের নেতা আসাদুজ্জামান খান এই বিলের তীব্র বিরোধিতা করলেন । এনিয়ে বিরোধী দলকে বক্তব্য রাখার সুযোগ দেওয়া হলো না । পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে একতা পার্টির নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন – ‘আজ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে আপনারা বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার রোধ করেছেন । ‘৭২ -এর সংবিধানকে ছিন্নভিন্ন করছেন । কিন্তু, ভুলে যাবেন না, এই দিন আপনাদের থাকবে না । যে অন্যায় আজ আপনারা করছেন, সেই অন্যায়ের বিচার এই সংসদেই হবে । তখন আপনাদের পক্ষে কথা বলার লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না । সংসদে আপনাদের দলের লোক খুঁজতে দূরবীন লাগবে । ইতিহাস বড় নির্মম । কাউকে ক্ষমা করে না, আপনাদেরও করবে না’ ।
বাকেরগঞ্জ – ১৪ থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এডভোকেট সুধাংশু শেখর হালদার পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে বলেন – ‘আজ আইনের শাসন এবং সংবিধানকে যেভাবে পদদলিত করা হলো, একদিন ইতিহাস তার বিচার করবে । এই সংসদে একদিন আপনাদের অপকর্মের বিচার করবে । সেইদিন আপনাদের অনুশোচনা ছাড়া কিছুই করার থাকবে না । সাড়ে চার লাখ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীকে বিনা বিচারে আটক রেখেছেন । তাঁদের উপর নৃশংস নির্যাতন চালানো হচ্ছে । তিল তিল করে কারাগারে মুক্তিযোদ্ধাদের বিনা চিকিৎসায় মারা হচ্ছে । এই পরিণতি একদিন আপনাদেরও হবে । তখন বুঝবেন, আজ কি ভুল করছেন’ ।
আওয়ামী লীগের একাংশের নেতা মিজানুর রহমান চৌধুরী বলেন – ‘সংখ্যাগরিষ্ঠতার বড়াই কইরেন না । ২০৭ তখন ৭ হয়ে যাবে । তখন বুঝবেন ‘গণতন্ত্র’ কতো দরকার । আজ সংসদে আমাদের কথা বলতে দেন না । হত্যা করেন, জেলে পুরেন । আজ যদি এই বিল পাশ করেন, তাহলে প্রতিহিংসার আগুনে আপনারাও পুড়বেন’ ।
ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস !! ঠিক ত্রিশ বছর পর এই এপ্রিলেই বিএনপি’র সংসদে সদস্য সংখ্যা মাত্র ৫ জন । তাদের খুঁজতে সত্যিই দুরবীন লাগে । যে প্রতিহিংসার সূচনা ‘জিয়াউর রহমান’ করেছিলো, সেই আগুনে আজ পুড়ছে তার স্ত্রী, তার দল – ‘বিএনপি’ ।।