বিথঙ্গলের ১৩’শ বছরের পুরনো জড়াজীর্ণ শ্রীশ্রী জগৎমোহন জিউর আখড়াটি সংস্কারের দাবি
নিজস্ব প্রতিনিধি- বানিয়াংয়ের পৈলারকান্দির বিথঙ্গল গোসাইহাটি গ্রামে অবস্হিত শ্রীশ্রী জগৎমোহন জিউর আখড়াটি বিগত ১৩’শ বছর পূর্বে স্হাপিত হয়। বর্তমানে এর অবস্হা খুবই নাজুক বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে একটু বৃষ্টি হলেই এর ছাদ ছুঁয়ে আখড়ার ভিতরে ভিতরে পানি পড়ে। যার কারণে সেবাইত বিগ্রহসেবা করা ও পবিত্র শ্রীমদ্ভগবত গীতা পাঠ সহ আখড়ায় উপস্হিত ভক্তবৃন্দ নানা ধরণের ভূগান্তির শিকার হচ্ছে।
জানা যায়,
হবিগঞ্জের বানিয়াংয়ের পৈলারকান্দি ইউনিয়নের বিথঙ্গল গোসাইহাটিতে ১ হাজার ৩ শত বছর পূর্বে তৎকালীন ভারতবর্ষের দিল্লির গৌরীয় মতাদর্শের বৈষ্ণবগণ বঙ্গের বিভিন্ন স্হানে তাদের শাখা স্হাপনের ধারাবাহিকতায় শ্রীশ্রী জগৎমোহন জিউর আখড়াটি স্হাপন করেন। বৈদিক কারুকার্য সম্বলিত শ্রীশ্রী জগৎমোহন জিউর মূল আখড়া সহ সেবাইত ও ভক্তদের বসবাসসের ভবন, নাটমন্দির, শান-বাঁধানো পুকুরঘাট সহ এর আওতাধীন অনেক কৃষিজমি ছিল। আখড়া চত্বর সহ এর আশেপাশে ছিল নানা ধরণের বনজ ও ফলদ উদ্ভিদ। ভোরে বিভিন্ন প্রজাতির পাখির কলতানে ঘুম ভাঙ্গতো বৈষ্ণবদের। হবিগঞ্জ সহ আশপাশের জেলাসমূহ হতে ভক্ত নারী-পুরুষের সমাগমে সর্বদা মূখরিত থাকত ওই আখড়া। উক্ত আখড়াকে ঘিরে প্রধান অনুষ্ঠান গুলো যেমন জন্মাষ্টমী, রাধাষ্টমী, রামনবমী সহ বিশেষ বিশেষ উৎসব গুলোতে হাজার হাজার শিষ্যদের আগমনে আনন্দঘন পরিবেশের সৃষ্টি হত উক্ত ধর্মীয় প্রতিষ্টানটিতে। কালের বিবর্তনে দেশ বিভাজনের কারণে ১৯৪৭ ইং সনের পর হইতে ১৯৯০ ইং পর্যন্ত বিপুল সংখ্যক সনাতন ধর্মাবলম্বী প্রতিবেশী দেশ ভারতে চলে যায়। ওই এলাকায় একসময় হিন্দুরা সংখ্যাগুরু হলেও বর্তমানে তারা সংখ্যালঘু হিসেবে বসবাস করছে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অনেক কৃষিজমি ও আখড়ার জায়গা বেদখল হয়ে গেছে। গতকাল বুধবার সরজমিনে ওই আখড়ায় উপস্হিত হয়ে দেখা গেল, এক সময়ের কারুকার্য মন্ডিত আখড়াটির নানা ধরণের শৈল্পিক নিদর্শন ভেঙ্গে ক্ষয় হয়ে পড়ে যাচ্ছে। দেয়ালের সিমেন্টের প্রলেপ উঠে যাচ্ছে। শ্রীশ্রী জগৎমোহন জিউর আখড়ার মূল সেবাইত শ্রী জ্যোতিষ গোস্বামী, দৈনিক প্রতিদিনের বাণী কে জানান, বর্তমানে আখড়ার ভিতরে বসবাস করার কোন উপায় নেই বিধায়, এর সামনে একটি টিনসেড দিয়ে ছোট ঘর নির্মাণ করে বসবাস করছি। এ ছাড়া বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে ছাদ ছুঁয়ে বৃষ্টি পানি আখড়ার ভিতরে পড়ে। যার কারণে বিগ্রহের নিত্যসেবা দিতে অনেক কষ্ট হয়। এ ছাড়া পবিত্র গ্রন্হ শ্রীমদ্ভগবত গীতা পাঠের আয়োজন করলে, আখড়ায় আসা ভক্ত নারী পুরুষ ও শিষ্যদের চরম ভূগান্তির শিকার হতে হয়। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে বা উক্ত আখড়াটি সংস্কারের জন্য একাধিক জনপ্রতিনিধিদের নিকট বিভিন্ন সময়ে দ্বারস্থ হলেও, তারা শুধুই আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন। কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। তাই উক্ত আখড়াটি অচিরেই সংস্কারের দাবি জানিয়েছে এলাকার সনাতনধর্মাবলম্বীরা।