ভেড়ামারা উপজেলার “চন্ডিপুর বটগাছ” নামক স্থানের জিকে ক্যানেলের পানি থেকে উদ্ধার হওয়া চাঞ্চল্যকর তরুণী আঁখি আক্তার হত্যা মামলার মূল আসামিসহ ২জনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছেন কুষ্টিয়ার পিবিআই ।
মোঃ শৌভন আহম্মেদ সবুজ নিজস্ব প্রতিনিধি:
আদালতে আঁখি হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকারপূর্বক দন্ডবিধির ১৬৪ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে রাজ্জাক ও লুকু।
কুষ্টিয়া পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন পিবিআই’র একটি চৌকষ টিম ভেড়ামারা উপজেলার চাঁদগ্রাম ইউনিয়নের চন্ডিপুর বটগাছ নামক স্থানের জিকে ক্যানেলের পানি থেকে উদ্ধার হওয়া চাঞ্চল্যকর আঁখি আক্তার হত্যা মামলার মূল আসামি রাজ্জাকসহ ২আসামীকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছেন। কুষ্টিয়া পিবিআই’র দায়িত্বশীল সূত্র ও ঐ দপ্তর থেকে প্রেরিত প্রেসনোট সূত্রে জানা গেছে, গত ১০মে রাত আনুমানিক সোয়া ৩টার দিকে আলোচিত ঐ হত্যাকান্ডের মূল আসামি রাজ্জাক (৪২)কে ঢাকার ধামরাই উপজেলার প্রত্যন্তাঞ্চল দ্বিমুখা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। জানা গেছে, ভেড়ামারা উপজেলা চাঁদগ্রাম ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের চাঁদগ্রাম এলাকার হেলা মন্ডল’র ছেলে রাজ্জাক (৪৫)’র পরিচয়ের সূত্রে রাজবাড়ি জেলার সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুরা গ্রামের আলম মিঞার মেয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা নন্দলাল পুরে বসবাসরত আঁখি আক্তার’র সাথে সখ্যতা গড়ে উঠে। তাদের দু’জনের মধ্যে বিভিন্ন ফোনালাপে রাজ্জাক বুঝতে পারে আঁখি মূলতঃ একজন দেহ ব্যবসায়ী পতিতা।
গত ১৬ফেব্রুয়ারি ১০হাজার টাকা চুক্তির বিনিময়ে রাজ্জাক আঁখি আক্তারকে নারায়ণগঞ্জ থেকে সড়কপথে কুষ্টিয়ায় নিয়ে আসে। পরবর্তীতে ঐদিন বিকেলে কুষ্টিয়া থেকে সিএনজি যোগে আঁখি আক্তারকে মিরপুর উপজেলার মধ্য দিয়ে নিজেদের ডেরায় নিয়ে আসে রাজ্জাক। সেখানে আঁখির সাথে রাজ্জাকসহ আরও কয়েকজন আমোদফূর্তি শেষে টাকা পরিশোধ নিয়ে আঁখির সাথে বিবাদে জড়িয়ে পড়ে। আঁখি তার সাথে চুক্তির পুরো ১০হাজার টাকা পরিশোধের জন্য চেঁচামেচি শুরু করলে রাজ্জাকসহ অন্যান্যরা আঁখিকে সজোরে চড় মারলে সে মাটিয়ে লুটিয়ে পড়ে। মাটিতে পড়ে যাওয়ার পর বেশ কিছুক্ষণ আঁখি নড়াচড়া না করলে সবাই বুঝে ফেলে আঁখি মারা গেছে। মারা যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য রাজ্জাক আঁখির হাতের আঙুলে কামড়ে ধরে। পরবর্তীতে মৃত আঁখির দেহ জিকে ক্যানালের পানিতে ডুবিয়ে রেখে রাজ্জাকসহ সবাই নিরাপদে সটকে পড়ে।
১৭-ই ফেব্রুয়ারি সকালে এলাকাবাসীরখবর পেয়ে ভেড়ামারা থানা পুলিশ পানি থেকে লাশ উদ্ধার করে সুরৎহাল রিপোর্ট শেষে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে। চাঞ্চল্যকর আঁখি আক্তার হত্যা মামলাটি (ভেড়ামারা থানার মামলা নং-২১, তারিখঃ ১৭/০২/২০২১ইং ও জিআর মামলা নং-৩৮/২০২১) ভেড়ামারা থানা পুলিশের পাশাপাশি কুষ্টিয়া পিবিআই ও ছায়া তদন্ত শুরু করে। পরবর্তীতে কুষ্টিয়া পিবিআইকে আনুষ্ঠানিক ভাবে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব হস্তান্তর করা হলে মামলাটির তদন্ত গতিশীল ভাবে এগোতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় কুষ্টিয়া পিবিআই মেহেরপুর জেলার গাঙনীর সোহেল ড্রাইভার নামক একজনকে গ্রেপ্তার করে। তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে কুষ্টিয়া পিবিআই মামলার মোটিভসহ হত্যাকান্ডে জড়িত অপরাপর আসামিদের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়। দীর্ঘদিন ধরে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আসামিদের গতিবিধি ও অবস্থান নিশ্চিত হয়েই সফল অভিযান পরিচালনা করে মূল আসামি রাজ্জাককে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করে নাটোর জেলার লালপুর উপজেলার বিলমারিয়া এলাকা থেকে লোকমান হোসেন @ লুকু (৪২) নামক আরেক আসামিকেও তড়িৎ গ্রেপ্তারে সক্ষম হয় তদন্তকারী পিবিআই টিম। গ্রেপ্তারকৃত লোকমান হোসেন @ লুকু চাঁদগ্রাম ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের রতন মোল্লা’র ছেলে। পৃথক সফল দু’টি অভিযানে গ্রেপ্তারকৃত রাজ্জাক ও লুকুকে বুধবার কুষ্টিয়ার আদালতে হাজির করার পর তারা আঁখি হত্যাকান্ডে নিজেদের সম্পৃক্ততা স্বীকার পূর্বক দণ্ডবিধির ১৬৪ধারায় জবানবন্দি দেওয়ার পর তাদের জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।