লালমোহনে গৃহবধূ স্বপ্নাকে ধর্ষণের পর হত্যা

প্রকাশিত: ৭:১৩ অপরাহ্ণ, মার্চ ৯, ২০২৩

লালমোহন (ভোলা) প্রতিনিধি:
ভোলার লালমোহনে বাকপ্রতিবন্ধি গৃহবধূ স্বপ্না
বেগমকে হত্যার ২৪ ঘন্টার মাথায় দুই খুনিকে গ্রেফতার
করেছে পুলিশ। গ্রেফতারের পর আদালতে প্রেরণ করা হলে দুই
খুনি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। পরে
তাদের জেল হাজাতে পাঠানো হয়। হত্যাকাÐের শিকার
বাকপ্রতিবন্ধি গৃহবধূ স্বপ্না উপজেলার লালমোহন
ইউনিয়নের দেওয়ানকান্দি এলাকার আলমগিরের মেয়ে।
লালমোহন থানার ওসি মো. মাহাবুবুর রহমান জানান, গত
রোববার (৫ মার্চ) রাতে উপজেলার দেওয়ানকান্দি গ্রামের
নিজ বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন ২ সন্তানের জননী
বাকপ্রতিবন্ধি স্বপ্না বেগম (২৮)। নিখোঁজের দুই দিন
পর গত মঙ্গলবার (৭ মার্চ) দুপুরে প্রতিবেশি মিঝি বাড়ির
বাগানের ডোবার মধ্য থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। এ
ঘটনায় নিহত স্বপ্নার ভাই রিয়াজ বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামা
ব্যক্তিদের আসামী করে লালমোহন থানায় মামলা করেন। ওই
মামলার তদন্ত করেন লালমোহন থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই)
সাইদুর রহমান। এরপর ওই দিনই স্বপ্না হত্যার ক্লু বের করে
হত্যাকারী একই এলাকার নাজিম ও আনোয়ারকে গ্রেফতার
করা হয়। গ্রেফতারের পর নাজিম ও আনোয়ার স্বপ্নাকে
পালাক্রমে ধর্ষণের পর গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে
হত্যা করেছে বলে পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে
স্বীকার করে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সাইদুর রহমান বলেন,
লাশ উদ্ধারের পর সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির সময় গৃহবধূ
স্বপ্নাকে ধর্ষণের আলামত পেয়ে আমাদের সন্দেহ হয়। এরপর
পুরোদমে তদন্ত শুরু করি। ঘটনার পরে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে

যাচ্ছিল আনোয়ার। ৭ মার্চ রাত ১২টার দিকে ভোলার ইলিশা
ফেরিঘাট দিয়ে পালানোর সময় আনোয়ারকে গ্রেফতার
করা হয়। এরআগে একই দিন সন্ধ্যার দিকে গ্রেফতার করা হয়
নাজিমকে।
গ্রেফতারকৃত নাজিম উপজেলার লালমোহন ইউনিয়নের
দক্ষিণ ফুলবাগিচা এলাকার মফিজুল ইসলামের ছেলে। সে
পেশায় জাহাজের শ্রমিক। আনোয়ার ওই এলাকার দুলাল
হোসেনের ছেলে। সে পেশায় টাইলস মিস্ত্রি।
পুলিশ ও আদালতের জিজ্ঞাসাবাদে আনোয়ার ও নাজিম
জানিয়েছে, গত ৫ মার্চ সন্ধ্যার পর বাড়ির কাছের একটি
দোকানে প্রয়োজনীয় মালামাল কেনা শেষে ঘরে ফিরছিল
বাকপ্রতিবন্ধি গৃহবধূ স্বপ্না বেগম। এসময় স্বপ্নার
পিছু নেয় তারা। ওই বাকপ্রতিবন্ধি গৃহবধূ বাড়ির
কাছাকাছি যাওয়ার এক পর্যায়ে জোরপূর্বকভাবে
বাগানের মধ্যে নিয়ে পালাক্রমে একাধিকবার ধর্ষণ করে
তারা। এতে অসুস্থ হয়ে পড়ে প্রতিবন্ধি গৃহবধূ স্বপ্না
বেগম। যার জন্য বাড়ি ফিরে স্বপ্না যেন কাউকে ঘটনাটি
বলতে না পারে সে জন্য তাকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয় আনোয়ার
ও নাজিম। সিদ্ধান্ত মোতাবেক স্বপ্নার গায়ের ওড়না গলায়
পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে মৃত্যু নিশ্চিত করে নির্ঝণ
বাগানের ডোবার মধ্যেই ফেলে রেখে পালিয়ে যায় তারা।
স্বপ্নার ভাই ও মামলার বাদি রিয়াজ জানান, স্বপ্নার স্বামী
শুক্কুর আলী দ্বিতীয় বিয়ে করায় তাকে দুই সন্তানসহ ফেলে
রেখে খাগড়াছড়ি চলে যায়। সে থেকে স্বপ্না আমাদের
বাড়িতেই সন্তানদের নিয়ে বাস করছিল। ৫ মার্চ সন্ধ্যায় ২
সন্তানকে বাড়িতে রেখে পার্শ্ববর্তী দোকানে গিয়েছিল
স্বপ্না। এরপর আর সে বাড়ি ফিরেনি। রাত ৩ টার দিকে
মাকে না দেখে দুই সন্তান কান্নাকাটি শুরু করে। এর দুই
দিন পর স্বপ্নার লাশ আমাদের বাড়ি থেকে প্রায় আধা
কিলোমিটার দূরে একটি নির্ঝণ বাগানের ডোবার মধ্য
থেকে উদ্ধার করা হয়। পরে আমি নিজে বাদি হয়ে লালমোহন

থানায় একটি মামলা দায়ের করি। এরপর দুই আসামিকে
গ্রেফতার করে পুলিশ। আমি ও আমার পরিবার এই দুই
আসামির সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।




error: Content is protected !!