এ জি মুন্না- নীলফামারী জেলা প্রতিনিধিঃ নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য পাচ্ছেন বয়স্কভাতা। উপজেলা সমাজসেবা অফিসকে ম্যানেজ করে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে বয়স্কভাতা কার্ড করেছেন ওই ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড মেম্বার। যার প্রথম কিস্তির টাকা গত ঈদুল আজহার সময় উত্তোলন করেছেন তিনি। একজন সরকারী সুবিধাভোগী ব্যক্তি হয়েও আবারও সরকারী ভাতা আত্মসাৎ করতে এমনটা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে ইউনিয়নসহ পুরো উপজেলায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, কামারপুকুর ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড মেম্বার মোঃ আতাউর রহমান। নিজবাড়ী গ্রামের মৃত জবান উদ্দিনের ছেলে। তিনি চলতি বছরের প্রথম দিকে ইউনিয়ন পর্যায়ে বয়স্কভাতা প্রদানের জন্য উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক চলমান জরিপের সময় তার নাম অন্তর্ভূক্ত করেন তালিকায়। যা ইউনিয়নের চেয়ারম্যানসহ কেউই সে সময় জানতে পারেননি। সে অনুযায়ী পরবর্তিতে তার নামে কার্ড ইস্যু করে সমাজসেবা অফিস। এক্ষেত্রে বয়স্কভাতা প্রাপ্তির নিয়মাবলী অনুযায়ী তিনি মেম্বার হিসেবে সরকারী ভাতা তথা সম্মানী প্রাপ্তির সাথে সাথে অন্য কোন সরকারী সুবিধা ভোগী হতে পারবেন না এ বিষয়টিকে তোয়াক্কা করেনি সংশ্লিষ্ট দপ্তর। বরং এ বিষয়টিকে পুঁজি করে উপজেলা সমাজ সেবা অফিসের কামারপুকুর ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইউনিয়ন সমাজকর্মী মোঃ শাহজাহান আলী ওই মেম্বারকে কার্ড করে দেয়ার বিনিময়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়। শাহজাহান আলীর সহযোগিতায় বিষয়টি ধামাচাপা দেয়া হয়।
পরবর্তীতে ভাতার টাকা উত্তোলনের সময় ইউনিয়নের অন্যান্য বয়স্ক ভাতাভোগীরা বিষয়টি আঁচ করতে পারে এবং সেসময় তা জনসম্মুখে আসে। এক পর্যায়ে তা চাউর হয়ে যায়। সর্বত্র আলোচনা শুরু হয় যে মেম্বার ভাতা প্রাপ্তির যোগ্যতা যাচাই বাছাই করবেন তিনিই কি না সম্পূর্ণ অবৈধভাবে নিজের নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড করেছেন। তাও আবার টাকার বিনিময়ে সমাজ সেবা অফিসকে ম্যানেজ করে। যা একজন দরিদ্র বয়স্ক মানুষ যদি এই কার্ডটা পেতো তাহলে তিনি উপকৃত হতেন। যা বিভিন্ন ভাতা প্রদানের ক্ষেত্রে সরকারের উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু তিনি তা না করে উল্টো নিজেই জনগণের হক মেরে খেয়েছেন।
সৈয়দপুর উপজেলা সমাজ সেবা অফিসে এভাবে বিভিন্ন ভাতার কার্ড করে দেয়ার নামে চলছে টাকার খেলা। টাকা দিতে পারলে যোগ্য না হয়েও পাচ্ছেন ভাতা কার্ড। আর টাকা দিতে না পারলে উপযুক্ত হয়েও বঞ্চিত হচ্ছেন প্রকৃত দরিদ্র ও বয়স্করা। যার সুবিধা নিচ্ছেন দালাল শ্রেনির কতিপয় বহিরাগতসহ ওই অফিসের কয়েকজন কর্মচারী। যারা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তৈরী তালিকা অনুযায়ী আগামীতে ভাতা প্রাপ্তির জন্য নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন এমন ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ করে অর্থের বিনিময়ে নয়ছয় করে চলেছেন। যা তদন্ত করলে আরও অনেক তথ্য বেড়িয়ে আসবে বলে মনে করেন সচেতন মহল।
এ ব্যাপারে কথা হয় ৯ নং ওয়ার্ড মেম্বার মোঃ আতাউর রহমানের সাথে। তিনি বলেন, বয়সের দিক থেকে ভাতা প্রাপ্তির যোগ্য হওয়ায় আমার ভাতা কার্ড হয়েছে। যার বই নং ১৪১৪, হিসাব নং ১১৬৮। যাতে জন্ম তারিখ দেখানো হয়েছে ১২ জুন ১৯৫২ খ্রীষ্টাব্দ। মেম্বার থাকা অবস্থায় আপনি কি অন্য কোন সরকারী সুবিধা বা ভাতা নিতে পারেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মেম্বারী আর কয় দিন আছে। আগামী নির্বাচনে আমি মেম্বার হতে পারবো এমন গ্যারান্টিও নাই। তাই কার্ডটা করে নিয়েছি।
কামারপুকুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মোঃ রেজাউল করিম লোকমান বলেন, মেম্বারের বয়স্কভাতা কার্ড করার বিষয়টি আমি জানতাম না। তিনি কিভাবে এমন কাজ করলেন তা আমার চিন্তায় আসছেনা। তিনি বলেন, আমার জানা মতে একজন মেম্বার কোনভাবেই সরকারী অন্যকোন সুবিধা নিতে পারেন না। তবে এ বিষয়টি দেখার দায়িত্ব উপজেলা সমাজ সেবা অফিসের। কেননা এখন সরাসরি ওই অফিস কর্তৃক অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তালিকা তৈরী করা হয় জরিপের মাধ্যমে। এটা সার্বিকভাবে তদারকি করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা কর্মচারীরা। কিন্তু সম্ভবত তারা বিষয়টি যাচাই বাছাই করেন নি বা করে থাকলেও অনৈতিক সুবিধা নিয়ে তারা এ কার্ড করে দিয়েছেন। কেননা একজন ওয়ার্ড মেম্বার কে তারা চিনেন না এমনটা কোনভাবেই হতে পারেনা।
উপজেলা সমাজ সেবা অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কামারপুকুর ইউনিয়ন সমাজকর্মী মোঃ শাহজাহান আলীর সাথে কথা হলে তিনি জানান, ইউপি মেম্বার মোঃ আতাউর রহমানকে আমি চিনি। তিনি মূলতঃ বয়সের ভিত্তিতে ভাতাভোগী হয়েছেন। মেম্বার কি অন্যকোন সরকারী ভাতা পেতে পারেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, না পারেন না। কিন্তু কিভাবে যে আতাউর মেম্বারের নামে কার্ডটি হয়েছে তা আমি বুঝতে পারছিনা। কেননা ওইসময় আমরা খুবই ব্যস্ত ছিলাম। তাই হয়তো দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে। টাকার বিনিময়ে কার্ড করে দিয়েছেন এমন মন্তব্যের প্রেক্ষিতে তিনি কোন সুদত্তর দিতে পারেননি।
উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার মোছাঃ হাওয়া খাতুন বলেন, এধরণের ব্যক্তির নামে কার্ড হতে পারেনা। এটা দেখার বিষয় আমার অফিসের স্ট্যাফদের। হয়তো ভুলবশত এমনটা হয়েছে। তবে যেহেতু আমি বিষয়টি জানতে পেরেছি। এখন আমরা কার্ডটি বাতিল করবো।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ নাসিম আহমেদ বলেন, এমন ঘটনা ঘটে থাকলে অবশ্যই তালিকা থেকে ওই মেম্বারের নাম বাতিল করা হবে। কিভাবে তালিকায় তার নাম উঠলো তা তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।