উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে শুরু হতে যাচ্ছে কুষ্টিয়ায় সদরের ১১টি ইউপি নির্বাচন

প্রকাশিত: ১০:৪৯ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৪, ২০২২

কে এম শাহীন রেজা, কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি।।

উদ্বেগ ওউৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে ৫ জানুয়ারি বুধবার পঞ্চম ধাপে শুরু হতে যাচ্ছে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চলেছে রাজনীতির ভিতরে রাজনীতি। বিশেষ করে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়ে বিপাকে পড়েছে দলটি। প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নেই আওয়ামীলীগ দলীয় নেতা কর্মিরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। বিদ্রোহীদের কারনেই ভরাডুবি হতে পারে নৌকার। এদিকে বিএনপি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার দলীয় সিদ্ধান্তে অটল থাকায় কিছুটা ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন দলটির নেতা কর্মীরা। যদিও বিএনপি পন্থী বেশ কয়েকেজন নির্বাচনে অংশগ্রহন করেছেন।
নির্বাচনকে ঘিরে একদিকে যেমন উৎসবের আমেজ বিরাজমান, তেমনি অন্যদিকে ছিল টানটান উত্তেজনা এবং ভোটারদেরকে দলে টানার নানান কৌশল এবং প্রতিশ্রুতি। নির্বাচনী আচরণ বিধি মোতাবেক সোমবার ৩ জানুয়ারী মধ্যরাত থেকে নির্বাচনী প্রচারণা বন্ধ। কিন্তু মধ্যরাতের পরেও গোপনে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে দেখা গেছে প্রার্থী এবং সমর্থকদের।
গত ২১শে ডিসেম্বর বটতৈল ইউনিয়নে বড় ধরনের সহিংসতা ঘটার পর গত রবিবার এবং সোমবার আব্দালপুর, গোস্বামী দূর্গাপুর, মনোহরদিয়া এবং পাটিকাবাড়ী ইউনিয়নে হামলা পাল্টা হামলার ঘটনায় বেশ কয়েকজন কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এরমধ্যে পাটিকাবাড়ী ইউনিয়নের মাঝিলা গ্রামের দুইজন প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাড়ী ফিরে গেছেন।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলা ১১ ইউনিয়নের সাধারণ ভোটারদের মধ্যে ভোট উপলক্ষে উৎসবের আমেজ বয়ে চলেছে। অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ ভোট নিয়ে শঙ্কার মধ্যে দিনযাপন করছেন। সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ভোট সুষ্ঠ হবে কিনা সেই ব্যাপারে তাদের মধ্যে সংশয় কাজ করছে। অনেক প্রার্থী অভিযোগ করে বলেন, আমরা চাই ব্যালট পেপার ভোটের দিন সকালে অর্থাৎ বুধবার ৫ সকালে ভোট কেন্দ্রে প্রেরণ করা হোক। অন্যথায় রাতের আঁধারে ভোট কাটার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও তারা অভিমত ব্যক্ত করেন। ভোট কেন্দ্রে গোপনীয়তার বিষেেয়ও নির্বাচন কমিশনকে দৃষ্টি আর্কষন করেছেন তারা। এছাড়াও কোন ভোটারকে যাতে প্রকাশ্যে সিল মারতে বাধ্য না করা হয়, সেই বিষয়ে প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতা কমনা করেছেন আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
গোস্বামী দূর্গাপুর, হরিনারায়নপুর, মনোহরদিয়া, হরিপুর, পাটিকাবাড়ী এবং আব্দালপুর ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামীলীগ দলীয় প্রার্থী এবং সমর্থকদের কারণে আমরা ঠিকমত ভোটারদের কাছে ভোট চাইতে পারি নাই। আওয়ামীলীগ দলীয় প্রার্থী এবং সমর্থকরা বিভিন্ন সময় আমাদের কর্মীদের উপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। আমাদেরকে ঠিকমত ভোটের মাঠে বের হতে দেওয়া হয় নাই। ভোট আদৌও সুষ্ঠ হবে কিনা সেই বিষয়ে আমরা যথেষ্ট সংশয়ের মধ্যে রয়েছি।
এদিকে উপজেলা নির্বাচন অফিসার মোঃ সহিদুর রহমান একাধিকবার বলেছেন ভোটের দিন সকালে কেন্দ্রগুলোতে ব্যালট পেপার সরবরাহ করা হবে। উপজেলা নির্বাচন অফিস এর পক্ষ থেকে ভোট সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ করতে সর্বপ্রকার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
কুষ্টিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাব্বিরুল আলম এবং ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান রতন ভোট নিরপেক্ষ করার বিষয়ে ইতিপূর্বে বিবৃতি প্রদান করেছেন।
সাধারণ ভোটারদের পক্ষ থেকে অনেকেই ভোট নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। অনেকেই অভিযোগ করে বলেছেন, তাদেরকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে, ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য। আবার অনেক সাধারণ ভোটার শত বাধা উপেক্ষা করে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছেন।
কুষ্টিয়া সদরের ১১ টি ইউনিয়নের ১১৬ টি ভোট কেন্দ্রের ৬৯৫ টি কক্ষে ভোট গ্রহণ করা হবে। আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে কুষ্টিয়া সদরের ১১ টি ইউনিয়নে ২,১৭,২৪২ (দুই লক্ষ সতেরো হাজার দুইশত বিয়াল্লিশ) জন ভোটার রয়েছেন। যার মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ১,০৮,৮৭৯ (এক লক্ষ আট হাজার আটশত ঊনআশি) জন এবং মহিলা ভোটারের সংখ্যা ১,০৮,৩৬৩ (এক লক্ষ আট হাজার তিশত তেষট্টি) জন । আসন্ন নির্বাচনে ৫৯ জন চেয়ারম্যান ১২৮ জন মহিলা মেম্বার এবং ৩৮৪ জন মেম্বার সহ মোট ৫৭১ প্রার্থী ভোটযুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করবেন।




error: Content is protected !!