এখনো অবহেলিত পাংশার যে গ্রাম

প্রকাশিত: ৬:৪৯ অপরাহ্ণ, আগস্ট ৩১, ২০২১

মিঠুন গোস্বামী রাজবাড়ীঃ

রাজবাড়ী জেলার পাংশা থানার একটি গ্রামের নাম বসাকুস্টিয়া। এই গ্রামটি রাজবাড়ি জেলা ও ঢাকা বিভাগের শেষ সীমানা, এই গ্রামের থেকেই শুরু কুষ্টিয়া জেলা এবং খুলনা বিভাগের। গ্রামটি জেলার শেষ সীমান্তে হওয়ায় গ্রামের মানুষ অনেক আগে থেকেই অবহেলার স্বীকার হয়ে আসছে।

যে রাজনৈতিক দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন, তাদের প্রতিনিধিরা শুধু ভোটের সময়ই এই গ্রামে আসে। নির্বাচন শেষ হয়ে গেলে সারা বছরেও তাদের আর দেখা মিলে না। নির্বাচন শেষে জনপ্রতিনিধিদের জীবন মান উন্নয়ন হলেও উন্নতি হয় না গ্রামের মানুষের জীবন মানের।

এছাড়াও দুই জেলার সীমান্ত এলাকা হওয়ায় অনেক আগে থেকেই গ্রামটি বিভিন্ন সন্ত্রাসীবাহিনী এবং মাদক ব্যবসায়ীদের জন্য পছন্দের জায়গায় হিসেবে বিবেচিত। তার উপর এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার রাস্তা গুলো কাঁচা হওয়ায় বছরে একবারও প্রশাসনের কেউ আসতে চায় না গ্রামে।

গ্রামটির মানুষের জীবন যাত্রার উন্নয়ন আটকে আছে শুধুমাত্র একটা পাকা রাস্তার উপর, যার অভাবে গ্রামের মানুষ তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য সহ যাবতীয় কিছু বাজারজাত করতে শহরে নিতে ব্যর্থ হচ্ছে। গ্রামের স্কুলগামী ছেলেমেয়েরা বর্ষাকালে স্কুলে যেতে দুর্ভোগের শেষ নেই। ছোট ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসায়ী পণ্য থানা শহরে বিক্রি করতে এবং সেখান থেকে ক্রয়কৃত পণ্য আনতে পোহাচ্ছে অভাবনীয় দুর্ভোগ। আর এই দুর্ভোগ যেন মহামারি আকারে দেখা দেয় বর্ষাকালে। কারণ বর্ষাকালে সামান্য বৃষ্টিতে গ্রামের রাস্তাগুলো হাটু সমান কাঁদাপানিতে ডুবে যায়।।

কথা হয় এই গ্রামেরই সন্তান আইনজীবী আব্দুর রাজ্জাকের সাথে, তিনি বলেন গ্রামের মানুষের এই দুর্ভোগ আজ থেকে নয়, অনেক আগে থেকেই। সবাই নির্বাচনের সময় কথা দিয়ে যায়, কিন্তু কাজের কাজ কেউ কর না। গ্রামের স্কুল পড়ুয়া ছাত্রছাত্রী এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের আসলে সব থেকে বেশী সমস্যা। তাদের এই বর্ষাকালে সব থেকে বেশী দুর্ভোগ পোহাতে হয়। আমি সরকারের কাছে আবেদন করবো, যেন এই অবহেলিত গ্রামটার মানুষের জন্য কিছু একটা করে।

বসাকুষ্টিয়া বাজারের ব্যবসায়ী চুন্নু বলেন, এই যে দেখেন আমরা দোকানের মাল আনতে যাই কত কস্ট হয়, কোন ভ্যানগাড়ি আসতে চায় না। এই কাদা পানির জন্য দুইতিন গুন বেশী ভাঁড়া দিয়ে তাদের আনতে হয়। প্রতিদিনই আমাদের অতিরিক্ত টাকা খরচ হয়, এইসব বেঁচে আমাদের কত টাকাই বা লাভ হয়? যা হয় তা সব ভাঁড়া দিতেই চলে যায়।

বসাকুস্টিয়া জামে মসজিদের ইমাম সাহেব বলেন, এই কাদাপানির জন্য গ্রামের মানুষ ঠিক মত নামাযে আসতে পারে না। বিশেষ করে ছোট বাচ্চারা এবং বৃদ্ধরা নামাজে আসতে পারে না, তাদের জন্য এই কাঁদা মাটির রাস্তায় চলাচল মুশকিল। যদি সরকারের লোকজন একটা পাকা রাস্তা করে দিতো।তাহলে গ্রামের মানুষের খুব উপকার হতো।

গ্রামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী শাহীন জানান, এই দেখেন আমরা কিছু পাট কিনেছি গ্রামে থেকে, এখন এইটা নিয়ে বাজারে যাবো কিভাবে? রাস্তা না শুকানো পর্যন্ত কোন গাড়ি বা কিছুই নেয়ার জন্য পাব না। এই বৃষ্টি কাঁদার দিনে যেন আমাদের মরনের অবস্থা।

এই ওয়ার্ডের মেম্বার আইনুদ্দিনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমিও তো চাই গ্রামে একটা পাকা রাস্থা হোক, কিন্তু সেটা তো ব্যক্তিগত ভাবে করা সম্ভব না। আমি চেষ্টা করছি চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলে কিছু করা যায় কিনা।

কলিমহর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আঃ জলিল মন্ডল এর ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।

পাংশা থানার উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ আব্দুল হাকিম বলেন, এটা তো আমাদের হাতে না, এম্পি সাহেবের হাতে। সে আমাদের যা বরাদ্দপত্র দেয়, আমারা সেই অনুযায়ী কাজ করি। আর আমাদের হাতে আপাতত কলিমহর ইউনিয়নের রাস্তা পাকা করার কোন কাজ নাই।

পাংশা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আলী বলেন, আসলে এই বিষয়ে তো আগে কেউ আমাকে জানাইনি, যেহেতু আমি এখন জানলাম। দেখি কি করা যায়। আর আমাকে গ্রামের নামটি মেসেজ করে দেন,আমি পরবর্তীতে স্থানীয় ইউনিয়ন পর্যায়ে কথা বলে কিছু করা যায় কিনা দেখবো।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ ফরিদ হাসান ওদুদ বলেন, আমরা কিভাবে ব্যবস্থা নিবো, যদি গ্রামের মানুষ আমাদের কাছে না আসে। আপনি একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে তো আপনার এলাকার সব খোজ খবর রাখেন তাই না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি খোজ খবর কিভাবে রাখবো? যাদের সমস্যা তাদের তো আমাদের কাছে আসতে হবে? গ্রামের মানুষ আমার কাছে আসুক, আমি কি করা যায় দেখবো।
এই বিষয়ে জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দিলসাদ বেগম বলেন, আমি এখনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে কথা বলে গ্রামটিতে কিভাবে একটা পাকা রাস্তার ব্যবbস্থা করা যায় দেখছি। আমি চাইনা আমার অধীনে থাকা কোন গ্রামের মানুষ দুর্ভোগে থাকুক। আমি এই বিষয়ে যত দ্রুত সম্ভব ব্যবস্থা নিবো।




error: Content is protected !!