।।ওসমান গনি।।
মানবদেহ অসুস্থ্য হলে সুস্থ্য করার প্রধান উপাদান হলো ওষুধ। করোনাভাইরাসের কারনে এখন মানুষের সাধারণ রোগের ওষুধ গুলো এখন মানুষের কাছে হয়ে গেছে সোনার। সোনার হরিন একটা কাল্পনিক বস্তু। যা শুধু কল্পনা করা বস্তু ছাড়া আর কিছুই না। এটা কোন দৃশ্যমান বস্তু না। টাকা পয়সা, অঢেল ধনসম্পদ হলেও শত চেষ্টা করলেও তা হাতের নাগালে পাওয়া যাবে না। যেহেতু এটা শুধু কাল্পনিক বস্তু। কিন্তু মানুষের সাধারণ জ্বর, সর্দি ও কাশির ওষুধও এখন সোনার হরিনের মতো অদৃশ্য বা কাল্পনিক বস্তু বলে মনে করেন অনেকে।
কিন্তু এটা কোন কাল্পনিক বস্তু নয়। ওষুধ হলো একটা বাস্তব দৃশ্যমান বস্তু। তাহলে এটাকে কেন মানুষ সোনার হরিনের মতো বলে আখ্যায়িত করে? তার কারন হলো বর্তমানে করোনাভাইরাস নামক এক জীবাণুর কারনে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্ব আজ লণ্ডভণ্ড অবস্থায় আছে। এ ভাইরাসটির আজ পর্যন্ত কোন ওষুধ বা ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়নি। এ রোগের লক্ষণ সাধারণ জ্বর,সর্দি, হাচি কাশির মতো। আমাদের বাংলাদেশে নয় সারাবিশ্বে এ রোগের জন্য গরম পানির বাস্প, লেবু,আদা আর গরম পানির মাধ্যমে মাধ্যমে এসব উপসর্গ থেকে কোন রকম নিস্তার পাওয়া যায়। সাথে ডাক্তারদের সাজেশন মোতাবেক প্যারাসিটামল, ফেক্সো,সিভিট,নাপা ইত্যাদি জাতীয় ওষুধ দেয়া হয়। যেগুলো মানুষ সাধারণ জ্বর সর্দিতে ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু করোনাকালীন সময়ে ডাক্তাররা এসব ওষুধ প্রেসক্রিপশন করার কারনে আমাদের বাংলাদেশের মানুষ অনেকেই বক্স বক্স পুরো ওষুধ নিয়ে বাড়িতে জমা রাখছে । অতিরিক্ত বেচাকেনা দেখে ওষুধ ফার্মেসীর মালিকগন কয়েকগুণ দাম বাড়িয়ে বিক্রি করে। মানুষকে চাহিদা মতো ওষুধ সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়। তখন অনেক ফার্মেসীর মালিক এসব ওষুধ গুদামজাত করে সাধারণ লোকজন কে বলে ওষুধ নাই। ওষুধের সংকট দেখায়। তবে ক্রেতাগন কে বলে যে, এনে দেয়া যাবে দাম পড়বে বেশী। তারপরও মানুষ অতিরিক্ত টাকা দিয়ে ওষুধ কিনছে। আসলে কোম্পানী হতে ওষুধের তেমন কোন উল্লেখযোগ্য দাম বাড়ায়নি। যেটা করছে সবটাই হোল সেলার দোকানদারের কারসাজি। আর এসব ওষুদগুলো আগের মতো সচরাচর না পাওয়ার কারনে অনেকেই এগুলোকে সোনার হরিনের সাথে তুলনা করছে।
বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের মধ্যেই সাধারণ জ্বর-সর্দি-কাশির রোগীরা প্রয়োজনীয় ও প্রচলিত ওষুধ সেবন করে আসছিলেন। সাধারণ সর্দি-কাশির চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের মধ্যে নাপা, ফেক্সো, এইস, সিভিট, কেভিক কিংবা রেক্সের মতো ওষুধগুলো অন্যতম। হঠাৎ করে এই ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে। দোকানের পর দোকান ঘুরে কাঙ্ক্ষিত ওষুধ না পেয়ে দুর্ভোগে সাধারণ মানুষ। ওষুধগুলো মনে হচ্ছে সোনার হরিণ হয়ে গেছে। আর যদি কাঙ্ক্ষিত ওষুধ মেলেও তাহলে তার জন্য গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ। এ নিয়ে বিক্রেতা-ক্রেতার মধ্যে তর্কাতর্কি লেগেই রয়েছে। বিক্রেতাদের দাবি, চলমান করোনা সংকটে এমনিতেই এই ওষুধগুলো পাওয়া যাচ্ছে না। পাইকারি বাজারে যদিওবা কোথাও কোথাও পাওয়া যাচ্ছে তাদের কাছ থেকে বেশি দাম দিয়ে কিনে আনার ফলে বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে।
ফার্মেসিগুলো বলছে, সরবরাহ না থাকায় বিক্রি করতে পারছেন না তারা। ওষুধ শিল্প সমিতি বলছে- কোভিডের প্রাথমিক চিকিৎসায় এসব ওষুধের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় চাহিদা মতো সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না।
এদিকে ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানীগুলো বলছে, তাদের
উৎপাদন ও সরবরাহ ঠিক আছে। কোনো সংকট নেই। তবে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ওষুধ তাড়াতাড়ি বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। আমরা তো নির্দিষ্ট সময় পর পর ওষুধ দোকানগুলো ওষুধ সরবরাহ করি। হয়তো এই গ্যাপে ওষুধ বিক্রি হয়ে যাওয়ায় সংকট সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া ওষুধ কোম্পানির কাঁচামালগুলো বিদেশ থেকে আমদানি করে থাকেন। করোনার সংকটে আমদানি রপ্তানি বন্ধ থাকায় অনেক কোম্পানি বার্ষিক স্বাভাবিক যে চাহিদা রয়েছে সে অনুযায়ী উৎপাদন করতে পারছেন না। সেই কারণে ওষুধের একটা সংকট হয়ে থাকতে পারে।ওষুধের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরকে আরও কার্যকর ভূমিকা পালনের তাগিদ সাধারণ মানুষের।