ডাঃএস,এম ইব্রাহীম।
কোভিড১৯ টেস্ট করানোর জন্য ঢাকার বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে অপেক্ষার এক পর্যায়ে ক্লান্ত হয়ে যান দুই নারী। অভাবনীয় এক পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে যাচ্ছে পুরো বিশ্ব। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। করোনাভাইরাসের বিস্তার এতো দ্রুত গতিতে হবে, বাংলাদেশে অনেকে সেটি ভাবতেই পারেননি। প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে বিস্তার সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা যে চিত্র দিচ্ছেন সেটি আঁতকে ওঠার মতো কারণ, সংক্রমণের চূড়ান্ত পর্যায়ে এখনো আসেনি।
#এখন বলা হচ্ছে,করোনাভাইরাসের চূড়ান্ত ধাক্কা আসতে পারে জুন অথবা জুলাই মাসে। অথচ এরই মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ৩০ হাজারের কাছাকাছি। মৃতের সংখ্যা ৪০০ ছাড়িয়েছে। জানুয়ারি মাসে চীন যখন করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে প্রাণপণ লড়াই চালিয়েছে, তখন বাংলাদেশ ছিল অনেকটাই নির্ভার। অবশ্য ইউরোপ-আমেরিকাও বিষয়টি নিয়ে মোটেও মাথা ঘামায়নি।
বাংলাদেশের ভেতরে অনেকেই এই ভাইরাসের কথা শুনে হেসে উড়িয়ে দিয়েছেন। চীনের ‘খাদ্যাভ্যাসকে’ দায়ী করে নানা রকম হাস্যরস করেছেন অনেকে। বাংলাদেশের অনেক সুপরিচিত চিকিৎসক বেশ জোরেশোরে বলেছিলেন,করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এখানে হবেনা। কারণ বাংলাদেশের তাপমাত্রা বেশি। অথচ এর তিন মাসের মধ্যেই দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক এবং উদ্বেগ পুরো সমাজে জেঁকে বসেছে।
পরিস্থিতির ভয়াবহতা আঁচ করতে পেরে ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু এই সাধারণ ছুটির মেয়াদ দু’মাসেরও বেশি সময় ছাড়িয়ে যাবে সেটি অনেকে ভাবতেই পারেননি। সরকারি ছুটির মেয়াদ দফায়-দফায় বাড়িয়ে ৩০ মে পর্যন্ত নেয়া হয়েছে। কিন্তু এখনো সুড়ঙ্গের শেষে কোন আলোর দেখা মিলছে না। বাংলাদেশের প্রতিদিন যত টেস্ট করা হচ্ছে তার মধ্যে অন্তত ১৫ শতাংশের দেহে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পাওয়া যাচ্ছে।
এ হার সহসা কমে আসার ব্যাপারে আশাবাদী হতে পারছেন না বিশেষজ্ঞরা। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কোভিড১৯ সংক্রান্ত অন্যতম উপদেষ্টা আবু জামিল ফয়সাল সাংবাদিককে বলেন,”এই সংক্রমণ আরো বেড়ে যেতে পারে। এই পার্সেন্টেজ দিয়ে খুব বেশি কিছু নির্ধারণ করার নাই। এই হারে যদি চলতে থাকে তাহলে অনেকদিন সংক্রমণ চলবে।”
#আতঙ্ক, উদ্বেগ ও হতাশা-
#ঢাকাকে এখন ভিক্ষুকের শহর বললে অত্যুক্তি হবে না।
ঢাকা শহরে এখন যে কোন জায়গায় গেলেই ভিক্ষুকের দীর্ঘ সারি চোখে পড়ার মতো।
ত্রানের জন্য মানুষের ভীড় বাড়ছেই। এতো ভিক্ষুক এর আগে কেউ কখনো দেখেছে কি না সেটি নিয়ে সন্দেহ আছে। শহরের যে কোন যে কোন সুপার শপ, মুদি দোকান কিংবা কাঁচাবাজারে গেলেও চারপাশ থেকে ভিক্ষুক ঘিরে ধরবে। গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি এবং উত্তরাসহ শহরের অভিজাত এলাকার প্রায় প্রতিটি বাড়ির সামনে ভিক্ষুকদের বসে থাকতে দেখা যায়। এমনকি মধ্যবিত্ত-অধ্যুষিত এলাকাগুলোতেও ভিক্ষুকদের আহাজারিতে মন ভারি হয়ে আসে। নিজের পেশাগত কাজে অনেক সময় মধ্য রাতে বাসায় ফিরেতে হয়। রাত বারোটার সময় ঢাকার এয়ারপোর্ট রোডের বিভিন্ন জায়গায় শতশত ভিক্ষুক বসে থাকতে দেখা যায়।
এদের সবাই সবসময় ভিক্ষা করেনা। এসব ভিক্ষুকদের মধ্যে অনেকে আছেন রিকশাচালক, পরিবহন শ্রমিক কিংবা গৃহপরিচারিকা। বাংলাদেশে তথাকথিত লকডাউন দেখিয়ে দিয়েছে এদেশের বেশিরভাগ মানুষ প্রতিদিনের রোজগারের উপর নির্ভরশীল। একদিন আয় না থাকলে রাস্তায় নেমে ভিক্ষা করতে বাধ্য হয় অনেকে। বাংলাদেশে যে কোন সংকট তৈরি হলেই সবার আগে গার্মেন্টস শ্রমিকদের কথা উঠে। তাদের জীবন-জীবিকা নিয়ে যতো আলোচনা হয়, অন্য শ্রমিকদের নিয়ে ততটা আলোচনা হয়না।’লকডাউনের’ কারণে যে পরিবহন শ্রমিক, রিকশাচালক, অটোমোবাইল মিস্ত্রি রাস্তায় নেমে হাত পাততে বাধ্য হয়েছে তাদের কথা কেউ ভেবেছে কি না সেটি এক প্রশ্ন। শুধু তাই নয়, শহরে যারা বিভিন্ন ধরণের ছোটখাটো দোকান চালিয়ে নিজের জীবিকা নির্বাহ করে তাদের অবস্থাও শোচনীয়। ঢাকার মিরপুরে একটি ছোট লন্ড্রি চালান ফিরোজ আহমেদ। স্বাভাবিক সময় প্রতিমাসে তার আয় ছিল ২০ হাজার টাকার মতো।
কিন্তু লকডাউনের গত দুইমাসে তিনি ৫০০ টাকাও আয় করতে পারেননি। “করোনাভাইরাস আসার পর থেকে মানুষ জামা-কাপড় ইস্ত্রি করতে দেয়না। একদম বন্ধ করে দিছে। দোকান বন্ধ করে কয়েকদিন সবজি বিক্রি করছি। ঐ টাও বিক্রি হয় না। মানুষ তো নাই, “বলছিলেন মি: আহমেদ। চলবেঃ-