কলাপাড়ায় একটি বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান বন্ধ করে অবাধে চলছে পোকা চাষ ॥
কলাপাড়া(পটুয়াখালী)প্রতিনিধি : কলাপাড়ায় চাকামাইয়া ইউনিয়নের শান্তিপুর
গ্রামে ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় কুমরাখালী বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়
নামের একটি স্কুল। বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের পরিবর্ততে চলছে
ব্লাক ফ্লাই সোলজার (উরন্ত কালো সৈনিক) নামের এক ধরনের পোকা চাষ। পোকার
ভয়ে ও দুর্গন্ধে বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তাই দীর্ঘ
৩ মাস ধরে নামেই চলছে বিদ্যালয়টি। তাই বিদ্যালয়টিতে পাঠদানে পরিবেশ
ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন স্থানীরা।
মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে কোন ছাত্র/ছাত্রী ও ৪ জন শিক্ষকের কাউকে পাওয়া
যায়নি, প্রধান শিক্ষককে বারবার ফোন দিয়েও ফোনে পাওয়া যায়নি। এলাকাবাসী
জানায়, বেশ কয়েক বছর ধরে এ বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ভালোই চলছিলো।
কিন্তু গত বছরের ডিসেম্বর মাস থেকে জমিদাতা হারুন পাহলনের শ্যালক হুমায়ুন
পোকা চাষ শুরুর পর বন্ধ হয়ে যায় বিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম।
বিদ্যালয়ের একটু দূরে থাকা দোকানদার বেল্লাল হোসেন বলেন, এলাকার
ছেলে-মেয়েরা খুব ভালোভাবেই লেখাপড়া করতো এই স্কুলটিতে। কিন্তু হঠাৎ করে
জমিদাতার শালা হারুন ঢাকা এসে পোকের চাষ শুরু করে। এ পোকগুলো আবার পচা,
বাসি, মরা প্রানী খায়, যার কারনে স্কুল তো দূরের কথা , স্কুলের পাশের
রাস্তা দিয়ে গেলেও বমি আসে. তাই কোমলমতি শিশুরা দূর্গন্ধে টিকতে না পেরে
এখন একেবারেই স্কুলে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। দূর্গন্ধমুক্ত করে আবারো
স্কুলটিতে শিক্ষার্থীরা যেনো আবার ফিরে আসতে পারে তার জন্য কতৃপক্ষের
দৃষ্টি আকর্ষন করেন এ দোকানী।
পার্শ্ববর্তী গ্রামের মাদ্রাসা শিক্ষক মাওলানা নিজামউদ্দিন জানায়, এ
স্কুলে অনেক শিক্ষার্থী ছিলো, বিদ্যালয় মাঠে পোকা চাষের কারনে কিছু
শিক্ষার্থী আমাদের মাদ্রাসায় চলে গিয়েছে, কিছু এখান থেকে ২ কিলোমিটার
দূরে গামরবুনিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় চলে গিয়েছে, এসব দূর্গন্ধযুক্ত
পোকা সরিয়ে ফেললে শিক্ষার্থীরা আবার স্কুলে ফিরে আসবে বলে তিনি মনে করেন।
স্কুলের উদ্যোক্তা শামসুল হক জানান, প্রাথমিকভাবে সবকিছু যোগার করতে অনেক
কাঠ-খড় পোহাতে হয়েছে, এলাকাবাসীর আন্তরিকতাও ছিলো প্রচুর, হঠাৎ করে সারা
বিশ্বে মহামারি দূর্যোগ করোনাকালীন সময়ে সবকিছু বন্ধ হয়ে গেলে স্কুলের
স্বাভাবিক কার্যক্রম প্রচন্ডভাবে বাধাঁগ্রস্থ ও ক্ষতিগ্রস্থ হয়, স্কুল
বন্ধ ও ফাঁকা পেয়ে পরবর্তীকালে জমিদাতার শ্যালক পোকা চাষ শুরূ করলে
স্কুলের ভবিষ্যত স্বপ্ন-আশাগুলো তাসের ঘরের মতো ভেঙ্গে তছনছ হয়ে যায়।
বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মহিউদ্দিন মিলন তালুকদার বলেন, স্কুলটি
প্রতিষ্ঠার পর থেকে অদ্যবধি এটির সাথে একেবারে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত
রয়েছি, এই স্কুলের জন্য অনেক অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে বিধায় আমার ব্যবসা
প্রতিষ্ঠান এখন হুমকীর মুখে, তবে জমিদাতারা এ রকমের কাজ করছে আপনাদের
মাধ্যমে জানলাম, আমি এদের বিরুেিদ্ধ কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছি।
কলাপাড়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা অচ্যুতানন্দ দাস জানান, এই বিদ্যালয়ের
শিক্ষার্থীদের সরকারী বইও দেয়া হয়েছে, স্কুলে পোকা চাষের বিষয়টি জেনে
সাথে সাথে প্রধানশিক্ষকের সাথে কথা হয়েছে, তিনি কথা দিয়ে বলেন, পোকা
সরানোর কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে এবং অতিস্বত্তর বিদ্যালয়ে শিক্ষার
পরিবেশ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।