কলাপাড়ায় ৪ একর জমিতে ড্রাগনচাষসহ উন্নত জাতের খামার গড়ে মোস্তফা জামান সফল ॥

প্রকাশিত: ১০:০২ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৫, ২০২১

রাসেল কবির মুরাদ , কলাপাড়া প্রতিনিধি ঃ কলাপাড়ায় ড্রাগন চাষ করে
ব্যাপক সফলতা পেলো মোস্তফা জামান। ১০ নং বালিয়াতলী ইউনিয়নের ছোট
বালিয়াতলীর কাংকুনীপাড়ায় ৪ একর জমিতে তিনি ড্রাগনসহ সমন্বিত কৃষি খামার
গড়ে তুলেছেন। ২০১২ সালে শখের বসে শুরু করে ২০১৮ সালে তিনি বানিজ্যিক ভাবে
ড্রাগন খামার গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। ২ লক্ষ টাকা ব্যায়ে তৈরি করা
খামারে এখন সব মিলিয়ে ১৫ লক্ষ টাকার মুলধন তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন
মোস্তফা জামান।

সরেজমিনে গিয়ে ঘুরে দেখা যায়, কাংকুনি পাড়া গ্রামের মৃত: সুলতান হোসেনের
পুত্র মোস্তফা জামান। চার ভাই এবং চার বোন নিয়ে গড়া পরিবারের ভাইদের
মধ্যে তৃতীয় সন্তান তিনি। পরিবারের সদস্যদের উৎসাহ এবং উপজেলা কৃষি
বিভাগের পরামর্শ মোতাবেক ড্রাগন খামার গড়ে তুলেন। তার পরিচালিত সমৃদ্ধ
কৃষি খামারে বিভিন্ন প্রজাতির ড্রাগন ফল উৎপাদন হয়েছে। খামার শুরুতে
বাড়ির পাশে স্ব-নির্ভর খাল পানি ব্যাবস্থাপনা দলের আয়োজিত কৃষি মেলা দেখে
অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন তিনি। যেখানে প্রদর্শিত হয়েছিল কৃষির নানা উপকরণসহ
বিভিন্ন প্রকল্প। মোস্তফা জামান এসব প্রকল্প দেখে ঠিক করেন তার পড়ে থাকা
জমিতে তিনি কৃষি খামার গড়ে তুলবেন। তিনি রøু-গার্ড কর্মকর্তাদের পরামর্শ
নিয়ে নিজের চার একর জমিতে শুরু করেন কৃষি খামার। এই সময় শুরু করেন মাছের
ঘের, ড্রাগন খামার, গবাদিপশু গরু এবং গাঁডল খামার, দেশি মুরগী, কলা,
লিচু, পেয়ারা, মাল্টা, পেঁপে, এলাচসহ অন্যান্য ফলের বাগান করে সফলতার
পাশাপাশি পরিবারের আয়ের একমাত্র উৎস হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন তিনি।
স্ত্রী এক কন্যা এবং দুই পুত্র নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করছেন তিনি। তার
অনুপ্রেরণায় ইউনিয়নসহ উপজেলায় একাধিক খামার গড়ে উঠেছে। অনেক বেকার
যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।

ড্রাগন খামারী গোলাম মোস্তফা জামান এ প্রতিবেদককে জানায়, খামারে
ভিয়েতনামের ড্রাগন(বারি-১) এবং স্থানীয় দেশি প্রজাতির ড্রাগনসহ লাল,
সাদা, হলুদ এবং গোলাপি এই চার রঙের ড্রাগন উৎপাদন হয়েছে। এর মধ্যে লাল
রঙ্গের ড্রাগনের উৎপাদন এবং চাহিদা সবচেয়ে বেশি। তিনি জানিয়েছেন তার কৃষি
খামারে রয়েছে গবাদিপশু, মাছসহ সাগর, অগ্নিসাগর, সরবি, মোঁচাবিহীন, ভিতরে
লালরঙসহ একাধিক প্রজাতির কলা ও অন্যান্য প্রজাতির ফল। বিভিন্ন এলাকা থেকে
অনেক মানুষ খামার দেখতে আসেন। এতে তিনি অনেক আনন্দ পান। তিনি আরও জানান,
আমার খামার থেকে ড্রাগন কাটিং বিক্রি করেও অনেক উপার্জন হচ্ছে। কিছু দিন
পূর্বে উপজেলা কৃষি অফিস আমার কাছ থেকে কাটিং ক্রয় করে আগ্রহী চাষিদের
মাঝে বিতরণ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন তার খামার উন্নয়নে সহায়তা করেছেন
পটুয়াখালী হর্টিকালচার, উপজেলা কৃষি অফিস এবং ব্লু-গোল্ড।

বালিয়াতলী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এবিএম হুমায়ুন কবির এ প্রতিনিধিকে
বলেন, মোস্তফার ড্রাগন খামার ঘুরে দেখে আমি খুব খুশি। ড্রাগন একটি
পুষ্টিকর এবং লাভজনক ফল। আমি আশা করছি তার এ বাগান দেখে এলাকার বেকার
যুবকরা চাকরির পিছনে না ঘুরে এধরনের খামার করতে আগ্রহী হবে।

ব্লু-গোল্ডের সিডিএফ প্রোগ্রামের মো: মাজিদুল ইসলাম গনমাধ্যমকে জানায়,
ব্লু-গোল্ড মূলত পানি ব্যাবস্থাপনা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। পানি
ব্যাবস্থাপনার সাথে সংশ্লিষ্ট কৃষকদের পতিত জমিতে ফসল উৎপাদন, গবাদিপশু
এবং হাঁস-মুরগী পালন, সবজি উৎপাদন এবং মাছ চাষের বিষয়ে সহযোগিতা করে
থাকে। এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট অফিসগুলোর সাথে নেটওয়ার্কিং এর মাধ্যমে
সহযোগিতা করে যাচ্ছে। তিনি আরও জানান, পোল্ডার এলাকায় বসবাসরত কৃষকের
আর্থসামাজিক এবং কৃষি উন্নয়নে মৎস, কৃষি এবং প্রানীসম্পদ অফিসের সাথে
সমন্বয় সাধন করে কৃষকদের উৎপাদিত পন্য, বীজ বিপননের ব্যাবস্থা করে
ব্লু-গোল্ড।

কলাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এ আর এম সাইফুল্লাহ সাংবাদিকদের
জানায়, কলাপাড়া উপজেলা এসএসিবি প্রকল্পের আওতায় সাতটি ড্রাগন খামার গড়ে
উঠেছে। তার মধ্যে গোলাম মোস্তফার খামারটি উল্লেখযোগ্য। ড্রাগন কলাপাড়ায়
একটি নতুন এবং জনপ্রিয় ফসল। তিনি আরও জানান, ড্রাগন বাগান সম্প্রসারণের
লক্ষ্যে কাজ করছে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ। প্রতিনিয়ত কৃষকদের ভিজিট
করা হচ্ছে। নতুন উদ্দ্যোক্তাদের সব ধরনের কারিগরি সহায়তা প্রদান করে
সার-বীজ এবং চাষাবাদ পদ্ধতি সম্পর্কে সহায়তা করা হবে বলে তিনি জানান।




error: Content is protected !!