রাজবাড়ী জেলার কালুখালী উপজেলার মাঝবাড়ি ইউনিয়নের বেতবাড়িয়া গ্রামের আছিরদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে রবিউল বিশ্বাস (৩০)নামে এক যুবলীগ কর্মীকে পুলিশের সামনে পানিতে চুবিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। শনিবার ভোরে স্থানীয় মোনাই বিল থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।
নিহত রবিউলের বোন মাঝবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য। পরিবারের অভিযোগ, পুলিশের সহায়তায় এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর জের ধরে আজ শনিবার কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তাকে কয়েক ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে বিক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী।
পরিবার ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইলিয়াস, রাকিব, রফিকসহ স্থানীয় কয়েকজন যুবক এলাকায় মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় স্থানীয়দের সঙ্গে তাদের বাগবিতন্ডা হয়। একপর্যায়ে উভয়পক্ষের মধ্যে মারামারি এবং ধাওয়া করে এলাকা থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে।
এরপর ইউসুফ মেম্বার স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে সমঝোতা করার উদ্যোগ নেন। গতকাল শুক্রবার বিকেলে বাবুল বিশ্বাসের বাড়িতে সালিশ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সে খানে সালিস হয়নি।
রাতে কালুখালি থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফজলুল হকসহ পুলিশ সদস্যের সঙ্গে তাড়া খাওয়া যুবকেরা বাবুল বিশ্বাসের বাড়িতে যান। এ সময় তাঁকে বাড়ি থেকে তুলে নেওয়া হয়। এরপর তাঁরা রবিউলের বাড়িতে যান। সেখান থেকে তাঁকে তুলে নেওয়া হয়। বাবুলকে পুলিশ হেফাজতে রাখলেও রবিউলকে দুর্বৃত্তদের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়। তাঁকে মুনাইয়ের বিলে নিয়ে হত্যা করা হয়। আজ ভোররাতে তাঁর মরদেহ পাওয়া যায়। এরপর স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। তাঁরা পুলিশ কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে রেখে লাঞ্ছিত করেন। তাঁরা মরদেহ নিতে বাধা দেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য ইউসুফ হোসেনের ভাষ্য, ‘ওই এলাকা দুর্গম। এটি আমার বাড়ি থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে। আমি এবার চেয়ারম্যান প্রার্থী। এ কারণে চেয়ারম্যানের লোকজন আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে এসব কথা বলছে।’
নিহতের স্ত্রী সাবানা বেগম অভিযোগ করেন, গতকাল রাত দুইটার দিকে ইউসুফ মেম্বার, রাকিব ও কয় দরজা খোল। পরে ঘরের দরজা ভেঙ্গে ঘরে ঢুকে তার স্বামীকে ধরে নিয়ে যায়। এ সময় তাদের সঙ্গে পুলিশও ছিল। তাঁর স্বামীকে হাতকড়া লাগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর বিলে নিয়ে পানিতে চুবিয়ে হত্যা করা হয়। তিনি এই হত্যা কারি দের সঠিক বিচার চান।
ভাই আক্তার বিশ্বাস বলে রাতে পুলিশ আসলে আমরা দুই ভাই পুলিশের ধাওয়া খেয়ে পালিয়ে নৌকাতে যাই। পরে আমাদের পিছনে পুলিশ ও ইউসুফ মেম্বারের লোকজন আমাদের আরেকটি নৌকা নিয়ে ধাওয়া করে। পরে আমাদের নৌকার বৈইঠা ভেঙ্গে যায়। পরে আমি এক পাশে আর রবিউল এক পাশে দুজন দুই দিকে ঝাপ দেই। পরে আমি পালিয়ে তীরে উঠি। পরে রবিউলকে ধরে ফেলে আমার ভাই চিকিৎকার করে যে ভাই আমারে বাচা আমারে মেরে ফেললো। পরে আর কোন সারা শব্দ পাইনি। পরে ভোরে আমার ভাই এর লাশ পাওয়া যায়। তখন এলাকার মানুষ পুলিশকে অবরুদ্ধ করে রাখে।
কালুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল হাসান বলেন, বিক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী তিন পুলিশ সদস্যকে অবরুদ্ধ করে রেখেছিল। তাদের মধ্যে দুজন এসআই ও একজন কনস্টেবল। পরে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়। মরদেহ নিয়ে আসতে চাইলে স্থানীয়দের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এতে অন্ত পাঁচজন পুলিশ সদস্য আহত হন। তাদের মধ্যে এসআই ফজলুল হককে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
রাজবাড়ী পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, রবিউল ও আক্তার দুই ভাই মারামারির আসামী। ওদের কে পাওয়া যায়নি তবে ১নং আসামীকে ধরে থানায় নিয়ে আসা হয়। আক্তাররা পালিয়ে ছিল। বাড়িতে ছিলনা মোনাই এর বিলে নৌকায় ছিল। আক্তার বলতেছে যেটা সেটা হলো যে রাত ৪টা বাজে যখন তখন একটি নৌকা আসছিল ওদের দিকে। যখন নৌকা কাছাকাছি চলে আসে তখন ধর ধর বলে চিৎকার করে এটা হলো আক্তারের ভাস্য। পরে নৌকা থেকে দুই ভাই দুই দিকে ঝাপ দেয়। আক্তার সাতার কেটে তিরে উঠতে পারলেও রবিউল উঠতে পারেনি। রবিউলের লাশ যে খানে পাওয়া গেছে ৭ফিট পানি ছিল। সে খানে পদ্দফুলের ডাটা ছিল। তার শরীরে কোন দাগ নেই। আক্তাররের দাবি হলো, আমি তো চলে আসছি রাকিব, ইলিয়াস সহ ৩জন ওর ভাইকে চুবিয়ে হত্যা করে। পুলিশ রবিউলকে ধওে নিয়ে যায় এমন প্রশ্নের জবাবে এসপি বলেন, এগুলো শিখানো কথা কেউ তাদের কে এসব কথা শিখিয়ে দিয়েছে। কিন্তু রবিউলের শিশু বাচ্চার সাথে স্থানীয় সাংবাদিকরা কথা বলেছে সে বলছে তার বাবা বাড়িতে ছিল না পুলিশ আসছিল গালিগালাজ করছে মা দরজা খোলেনি পুলিশ চলে যায়। তবে রবিউল হত্যার সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে। যদি হত্যার সাথে পুলিশের সম্পক্ততা থাকে তবে তদন্ত সাপেক্ষে পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এলাকায় এখন থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।